Blog

Ethical Hacking-এর গুরুত্ব এবং কেন ইথিক্যাল হ্যাকিং সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়বেন?

ethical hacking bangla

হ্যাকিং শব্দটি শুনলেই আমাদের শরীরে এক রকম আতংকের সৃষ্টি হয়। হ্যাকিং শব্দের অর্থ হচ্ছে অনুমতি ব্যতীত কোন কম্পিউটার নেটওয়ার্কে প্রবেশ করা এবং তথ্য চুরি করা। সব হ্যাকিং কিন্তু আবার খারাপ না। হ্যাকিং এবং ইথিক্যাল হ্যাকিং এর মধ্যে কিন্তু বেশ পার্থক্য হয়েছে। আপনি চাইলে হ্যাকিং শিখে যেমন আন-ইথিক্যাল উপায়ে অন্যায় কাজ করতে পারবেন আবার চাইলে ইথিক্যাল উপায়ে সেই হ্যাকিং শিখে সুন্দর ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। হ্যাকিং আসলে কি? এটি কেন এত গুরুত্বপূর্ণ? এবং হ্যাকিং শিখে কিভাবে ক্যারিয়ার গড়বেন সেই বিষয়ে আজকের এই ব্লগে আলোচনা করা হবে।

হ্যাকিং কি?

হ্যাকিং এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে কেউ কোনো বৈধ অনুমতি ছাড়াই কম্পিউটার বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কে প্রবেশ করে। যারা হ্যাকিং করে তারা হ্যাকার। এই বিষয়গুলো আপনারা প্রায় সবাই জানেন। আমরা অনেকেই মনে করি যে হ্যাকিং হচ্ছে শুধু একটি ওয়েব সাইট হ্যাকিং এবং অনেকে মনে করেন হ্যাকিং মানে শুধু কম্পিউটার বা কম্পিউটার নেটওয়ার্ক হ্যাক করা, তাই কি? আসলে তা না। হ্যাকিং অনেক ধরনের হতে পারে। আইনি অনুমতি ছাড়া আপনার মোবাইল ফোন, ল্যান্ড ফোন, গাড়ি ট্র্যাকিং, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স এবং ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করলে তাও হ্যাকিংয়ের আওতায় পড়ে। অবৈধভাবে কোন ব্যক্তি সিস্টেমে প্রবেশ করলে সে ব্যক্তিই হ্যাকার এবং উক্ত সিস্টেম হ্যাকিং এর শিকার।

ইথিক্যাল হ্যাকিং কি?

মানুষ ”হ্যাকিং” শব্দটা শুনলেই অনেকটা খারাপ এবং বিপদজনক চোখে দেখে। কিন্তু “ইথিক্যাল হ্যাকিং” শব্দটা শুনলে কোন চোখে দেখবে? তাই আগে আমাদেরকে বুঝতে হবে “ইথিক্যাল হ্যাকিং” কি? Ethical Hacking হচ্ছে একটি বৈধ হ্যাকিং। যা হ্যাকাররা কোন প্রতিষ্ঠানের সিস্টেমকে পূর্বের চেয়ে অধিক নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য কাজ করে থাকে। সাধারণভাবে চিন্তা করে কিছু Common নিরাপত্তা দেওয়া হয় সেটা আমরা সবাই জানি। যেমন ধরুন, Password কে Encrypt করে ফেলা। এতে করে Plain Text এর মত Password পাওয়া যাবে না। এরকম প্রচুর Common নিরাপত্তা দেওয়া হয়ে থাকে।

এসবের বাহিরে আরো একটা উপায় আছে নিরাপত্তা বাড়িয়ে দেওয়ার। সেটা হচ্ছে “Bug Bounty” অর্থাৎ সিস্টেমের ত্রুটি খুঁজে বের করে সেগুলো Fix করে ফেলা। যত বেশি Bug খুঁজে বের করে সমাধান করবেন ততবেশি System টি Secure হতে থাকবে। আবার গজামিল বা সাধারণ নিরাপত্তা দিলেই হবে না। ভালো মানের নিরাপত্তা দিতে হবে যেন সহজে Black Hat Hacker রা প্রবেশ করতে না পারে।

হ্যাকার কে এবং হ্যাকারের ধরণ

উপরের আলোচনা থেকে আমরা বুঝতেই পারছি, যে ব্যক্তি সিস্টেম এর এক্সেস পাওয়ার জন্য সিস্টেমের দুর্বলতা খুঁজে বের করে এবং দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে সিস্টেমে প্রবেশ করে সে ব্যক্তিই হ্যকার। Professional Hacker সাধারণত Computer Programming এ দক্ষ হয়ে থাকে। কেননা প্রোগ্রামিং করে বিভিন্ন Tools, Script ইত্যাদি তৈরি করতে হয়, যা দিয়ে তারা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যায়। হ্যাকারদের অনেক ধরণ রয়েছে যেমন-

১) White Hat Hacker (ইথিক্যাল হ্যাকার)

White Hat Hacker দেরকে আমরা Ethical Hacker বলে থাকি। এ ধরণের হ্যাকাররা কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অনুমতি নিয়ে বা নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে সিস্টেমের দুর্বলতা খুঁজে বের করে। সেই দুর্বলতাকে সমাধানের জন্য কাজ করে। এমনকি সিস্টেম হ্যাক হয়ে গেলেও ইথিক্যাল হ্যাকারা সেই সিস্টেমকে পুনরুদ্ধার করতে কাজ করে। অর্থাৎ Ethical Hacker সিস্টেম এর Penetration Testing, Bug Bounty, Cyber Security ইত্যাদি কাজে সরাসরি নিয়োজিত যা সম্পূর্ণ বৈধ।

২) Black Hat Hacker (ক্র্যাকার)

Black Hat Hacker দেরকে আমরা ক্র্যাকার বলে থাকি। এরা নিজেদের লাভের জন্য অথবা ক্ষতি করার জন্য অবৈধভাবে সিস্টেমে প্রবেশ করে। সিস্টেমের দুর্বলতা খুঁজে বের করে, তারপর সেখানে তাদের নানা ধরণের Tools, Scripts ইত্যাদি ব্যবহার করে সিস্টেমে প্রবেশ করে। তারপর যা হবার তাই। ডেটা চুরি, ডেটা Destroy, Privacy Leak সহ নানা ধরণের অপরাধ ঘটায়। সুতরাং বুঝতেই পারছেন এরা সম্পূর্ণ ইথিক্যাল হ্যাকিং এর বিপরীতে চলে।

৩) Gray Hat Hacker

এ ধরণের হ্যাকাররা ইথিক্যাল হ্যাকার এবং ক্র্যাকারদের মাঝে অবস্থান করে। অর্থাৎ এরা অনুমতি ছাড়াই সিস্টেমে প্রবেশ করে। কিন্তু এরা সিস্টেমে প্রবেশের পর কর্তৃপক্ষকে বা হ্যাকিং এর শিকার হওয়া ব্যক্তিকে জানিয়ে দেয় উক্ত সিস্টেমে কি কি Vulnerability (দুর্বলতা) আছে। এ অবস্থায় একজন Gray Hat Hacker চাইলে সিস্টেমের ক্ষতি করে দিতে পারে, আবার চাইলে সিস্টেমকে Security ও প্রদান করতে পারে। সম্পূর্ণ তার মনের ইচ্ছা।

৪) Blue Hat Hacker

এরা নিজেদের জন্য কাজ করে থাকে। কোন প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করে না। তবে বিভিন্ন জায়ান্ট কোম্পানী এই Blue Hat Hacker দেরকে নিজেদের এপ্লিকেশন বা ওয়েবসাইট ইত্যাদির Vulnerability খুঁজে বের করার জন্য Hire করে থাকে। বিনিময়ে প্রচুর অর্থ দেওয়া হয় তাদেরকে।

৫) Green Hat Hacker

অন্যের টিউটোরিয়াল দেখে নিজেরা কিছু একটা করার চেষ্টা করে। মোট কথা হ্যাকিং নিয়ে এদের কোন জ্ঞান থাকেনা।

৬) Script Kiddie

এরা হচ্ছে অদক্ষ হ্যাকার। এদেরকে আপনি সরাসরি অদক্ষ বলতে পারেন। কেননা এরা অন্যের Tools ব্যবহার করে সিস্টেমে প্রবেশ করে। কিন্তু এরা নিজেদের থেকে কিছু করার ক্ষমতা রাখে না এবং সিস্টেমের খুব বেশি একটা ক্ষতি করতেও পারেনা।

৭) Hacktivist

কিছুদিন পর পর কিছু না কিছু একটা টপিক ট্রেন্ডিং-এ থাকবেই। যেমন ধরুন নির্বাচন, এক দেশের সাথে অন্য দেশের বিবাদ, সেলিব্রেটিদের নিয়ে গুঞ্জন, ভাইরাল হওয়া কোন ব্যক্তির কর্মকাণ্ড ইত্যাদি। আর এই Hacktivist রা এ ধরণের সেক্টরে অর্থাৎ সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ইত্যাদিতে ম্যাসেজ প্রদানের জন্য বিভিন্ন ওয়েবসাইটকে অবৈধভাবে হ্যাক করে থাকে। মোট কথা আপনি যেটা Trending হিসেবে দেখছেন সেটা বাস্তবে অতটা Trending নাও হতে পারে। হতে পারে Hacktivist এর জন্য Trending।

উপরের আলোচনা থেকে বুঝতেই পারছেন Ethical Hacker দেরকে Programming Language নিয়ে ভালো জ্ঞান থাকতে হবে, Bug খুঁজে বের করতেও দক্ষ হতে হবে এবং একই সাথে হ্যাকিং নিয়ে জ্ঞান থাকতে হবে। সুতরাং ইথিক্যাল হ্যাকাররা Security Expert হিসেবে কাজ করবে এক কথায় যা Anti Hacker। ইথিক্যাল হ্যাকারদেরকে অবশ্যই কিছু বিধি মেনে চলতে হবে। তা না হলে তারা নিজেরাও বিপদে পরে যেতে পারে। নিচে কিছু সাধারণ বিধি উল্লেখ করছি-

  • হ্যাকিং বা বাগ বাউন্টি শুরু করার পূর্বে প্রতিষ্ঠানের অথবা সিস্টেমের মালিকের কাছ থেকে লিখিত ভাবে অনুমতি নিতে হবে
  • যে প্রতিষ্ঠানের ডেটা হ্যাক হয়েছে, তার গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে
  • যতগুলো Bug পাওয়া গিয়েছে, প্রতিটি Bug লিখিতভাবে উক্ত প্রতিষ্ঠান/মালিকের নিকট রিপোর্ট করা
  • চিহ্নিত ত্রুটিগুলো হার্ডওয়্যার এবং সফ্টওয়্যার বিক্রেতাদের অবহিত করতে হবে
  • কোনভাবেই উক্ত সিস্টেমের ক্ষতি করা যাবে না। কারণ আপনি তাদেরকে সাহায্য করতে গিয়েছেন

ইথিক্যাল হ্যাকিং শিখা কেন এত গুরুত্বপূর্ণ? 

আসলে ইথিক্যাল হ্যাকিং এর গুরুত্ব লিখা শুরু করলে একটা বই লিখে ফেলা যাবে কিন্তু আমার মনে হয় তার পরও শেষ হবে না। কারণ বর্তমান সময়ে অনলাইনের প্রতিটা সেক্টরে ইথিক্যাল হ্যাকিং সম্পর্কে ধারণা থাকা দরকার। আমি আমার অভিজ্ঞতা সহ এখানে সামান্য কিছু তথ্য তুলে ধরছি।

  • নিজের দেশে বিদেশী হ্যাকার সাইবার এট্টাক করলে দেশী সাইটগুলোর নিরাপত্ত্বা এবং রিকোভার করে দেওয়া কিন্তু সাইবার সিকিউরিটি স্পেশিয়ালিস্ট বা ইথিক্যাল হ্যাকার এর কাজ। শুধুমাত্র বিদেশী হ্যাকার বলে কথা নয়, দেশের Black Hat এবং Red Hat হ্যকাররা অনেকের সাইটে আক্রমণ করে ক্ষতি করে থাকে। সেক্ষেত্রেও ইথিক্যাল হ্যাকাররা সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেয়।
  • যে প্রতিষ্ঠানে ইথিক্যাল হ্যাকার চাকরী করে, সে প্রতিষ্ঠানের সফ্টওয়্যার, ওয়েবসাইট, ক্লায়েন্টদেরকে দেওয়া Systems সমূহকেও নিরাপত্ত্বা নিশ্চিত করতে ইথিক্যাল হ্যাকার নিয়োজিত থাকে।
  • ডোমেইন এবং হোস্টিং এর নিরাপত্ত্বা নিশ্চিত করতেও ইথিক্যাল হ্যাকাররা নিয়োজিত থাকে।
  • কোন সিস্টেমের Bug বের করে সেগুলা Fix করতে ইথিক্যাল হ্যাকারদের বিকল্প নেই। একজন প্রোগ্রামার যতটা Bugs বের করে আনবেন, একজন Ethical Hacker তার চাইতে আরোও বেশি এবং কম সময়ে Bugs বের করে নিয়ে আসবে।

২০১৮ সালে আমি High Tech IT & Communication কোম্পানীতে জয়েন করি। জয়েন করার ১ সপ্তাহের মধ্যেই অফিসের একজন বরখাস্ত হয়ে যায়। উক্ত ব্যক্তির কাছে অফিসের ওয়েবসাইটের হোস্টিং এক্সেস ছিল। অর্থাৎ cPanel-এ লগিন করার জন্য যা যা দরকার সবই তার কাছে ছিল। কারণ উক্ত ব্যক্তিকে দিয়েই ওয়েবসাইটের হোস্টিং ক্রয় করানো হয়। ভদ্রলোক বরখাস্ত হয়েই ওয়েবসাইট Destroy করে দেয়। অফিস কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমাকে জানালে আমি cPanel-এ প্রবেশ করে দেখি Database, Theme এবং Plugin ডিলিট করে দিয়েছে। ওয়েবসাইটি WordPress দিয়ে বানানো ছিল। সবকিছু বুঝে প্রায় ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে সাইটটি Recover করতে সক্ষম হই।

hacking bangla

২০২০ সালে আমাদের Cobra – Hack To Protect Your System পেইজে একজন মেয়ে নক করে জানায় তার প্রায় ২০টির মত Nude ছবি Blur করে কেউ ফেসবুকে পোস্ট করে ভাইরাল করে দেয়। বরাবরের মতই এবারো আমি অনলাইন যুদ্ধে নেমে যাই। আমার টিমের মেম্বার সহ বন্ধুদের দিয়ে অনবরত ২ ঘন্টা রিপোর্ট করাতেই থাকি। ২ঘন্টা রিপোর্টের পর পোস্টটি ফেসবুক রিমোভ করে দেয় এবং রিপোর্টগুলো পোস্টের পাশাপাশি প্রোফাইলে দেওয়াতে প্রোফাইলও Disabled হয়ে যায়। কিন্তু উক্ত প্রোফাইলের তথ্য আমি আগেই সংগ্রহ করে রেখেছি। ফেসবুক থেকে সফলতার মুখ দেখার পর ভিক্টিমকে তথ্যগুলো দিয়ে আইনের সাহায্য নিতে বলি।

উপরের দুইটা ঘটনা থেকে বুঝতেই পারছেন একজন ইথিক্যাল হ্যাকার কিভাবে তার দায়িত্ব পালন করে। যেকোন ধরণের অনলাইন রিলেটেড সমস্যা আপনার সামনে উপস্থিত হবে। সেগুলো সমাধান করে দেওয়ার মানসিকতাও আপনার থাকতে হবে। কেউ ক্ষতি করলে সেটা দ্রুত রিকোভার করে দেওয়া এবং সিস্টেমের Protection দেওয়া একজন ইথিক্যাল হ্যাকারের প্রধান দায়িত্ব। ভিক্টিম যে কেউ হতে পারে। আপনি ইথিক্যাল হ্যাকার হয়ে আপনি নিজেও ভিক্টিম হতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনি নিজেই নিজের জন্য কাজ করবেন।

ক্যারিয়ার হিসেবে ইথিক্যাল হ্যাকিং সেক্টর কেমন? 

এত কস্ট করে ইথিক্যাল হ্যাকিং বা সাইবার সিকিউরিটিতে কাজ শিখবেন কিন্তু ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন না, তা তো হবে না।

বর্তমানে স্কিল ভিত্তিক চাকরি পাওয়া আরোও সহজ হয়ে গিয়েছে। প্রায় সময় একটা অভিযোগ থাকে মামা, চাচা, ক্যাশ ইত্যাদি না থাকলে সহজে চাকরি পাওয়া যায় না। কিন্তু একটা বিষয় খেয়াল করুন, আপনি কোন্ সেক্টরে কাজ করছেন? আপনি একজন ইথিক্যাল হ্যাকার। আপনার এখানে Skill এর খেলা, মেধার খেলা। এখানে যার Skill যত বেশি, তার চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনাও তত বেশি। আপনার কোন Skill নাই, তাহলে আপনার চাকরিও নাই। কারণ এই সেক্টরে কাজ দিয়ে কোম্পানী চলে। কারো মামা, চাচা, ক্যাশ দিয়ে কোম্পানী চলে না।

Facebook এর মতই শুধুমাত্র চাকরীর ক্যারিয়ারকে টার্গেট করে বিভিন্ন জনপ্রিয় ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছে। যেমন LinkedIn, Indeed, Glassdoor, Monster, BDJobs, Internshala ইত্যাদি দেশী ও বিদেশী ওয়েবসাইট আছে যেখানে শুধুমাত্র চাকরির বিজ্ঞাপণ পোস্ট করা হয়ে থাকে। এছাড়াও Facebook-এ প্রচুর গ্রুপ রয়েছে, যেখানে শুধুমাত্র চাকরির বিজ্ঞাপণ দেওয়া হয়ে থাকে।

শুধুমাত্র চাকরিই নয়, রয়েছে Freelancing ক্যারিয়ারও। Freelancing করার জন্য Fiverr, Upwork, People Per Hour ইত্যাদি জনপ্রিয় ওয়েবসাইট আছে যেখানে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আপনার কাছ থেকে তাদের প্রয়োজনীয় সার্ভিস নিয়ে থাকে। কাজের বিপরীতে আপনি ছোট থেকে বড় সব ধরণের এমাউন্ট পেয়ে থাকবেন। যা পরবর্তীতে আপনি ব্যাংক সহ বিভিন্ন মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করতে পারবেন।

ইথিক্যাল হ্যাকারদের বেতন কেমন?

বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে একজন ইথিক্যাল হ্যাকার বা সাইবার সিকিউরিটি এনালিস্ট এর বেতন সর্বনিম্ন ৩০০০০ টাকা থেকে শুরু হয়ে থাকে। যদি আপনি দীর্ঘ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ইথিক্যাল হ্যাকার হয়ে থাকেন তাহলে আপনার বেতন ১ লক্ষ টাকার উপরে হয়ে থাকবে। কিন্তু বিদেশি কোম্পানীগুলোতে বাংলাদেশের মত এত কম বেতন দেয় না। সেখানে ২ লাখ থেকে ৩ লাখ টাকা এমন বেতন স্বাভাবিকভাবেই হয়ে থাকে। তবে অবশ্যই Remote Job, Onsite Job, Hybrid Job এর উপর ভিত্তি করে বেতন কম বেশি হয়ে থাকে। বিদেশের কোম্পানীতে চাকরী করা মানেই যে উক্ত দেশে গিয়ে চাকরি করতে হবে ব্যাপারটা মোটেও এমন না। LinkedIn-এ একটু সার্চ করে দেখুন। প্রচুর পরিমাণে Remote Job রয়েছে। অর্থাৎ আপনি ঘরে বসেই বিদেশের চাকরি করতে পারবেন। কিন্তু Remote Job এর বেতন Onsite Job এর তুলনায় কম হয়ে থাকে।

salary

আর Freelancing যারা করে তাদের হিসাবটা একটু ভিন্ন। Fiverr এর কথাই যদি বলি, এখানে আপনি Gig তৈরি করবেন। সেখানে কি কি সার্ভিস আপনি দিবেন সেগুলো তুলে ধরবেন। প্রতিটি Gig-এ প্যাকেজ রয়েছে। প্রতিটি প্যাকেজে ফিচার বা সার্ভিস এর উপর ভিত্তি করে মূল্য নির্ধারণ করে দিবেন। এছাড়াও Buyer Request বলে একটা ‍Feature রয়েছে। ক্রেতা কি কি সার্ভিস নিতে চায় বা ক্রেতার কোন সমস্যা হলে সেই সমস্যার জন্য সমাধান নিতে চায় বলে Request পোস্ট করেন। আপনি যদি মনে করেন তার কাজ আপনি করে দিতে সক্ষম তাহলে Bid করবেন। এখানে আপনি একা না। আপনার মত প্রচুর সার্ভিস দাতা সেখানে Bid করবে। সুতরাং আপনার যোগ্যতা, আপনার দক্ষতা, আপনার পোর্টফোলিও ইত্যাদি তুলে ধরার মাধ্যমেই কাজটি নিজের করে নিতে হবে। সুতরাং বলা যায় ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে কাজ করে ইনকাম করার বিষয়টা আপনার উপর নির্ভর করবে। আপনি চাইলে মাসে ৫০ হাজার টাকা ইনকাম করতে পারেন আবার চাইলে মাসে লাখ টাকা আয় করতে পারবেন।

কিভাবে শিখবেন এই ইথিক্যাল হ্যাকিং?

Ethical Hacking in Bangla, Cyber Security Course in Bangla এরকম অনেক ধরণের বাক্য Google, YouTube, Udemy ইত্যাদিতে সার্চ করলে Free এবং Paid কোর্স পেয়ে যাবেন। এছাড়াও বিভিন্ন ব্লগ সাইট পেয়ে যাবেন যেখানে নিত্য নতুন Vulnerability, Security ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন বই PDF আকারে পেয়ে থাকবেন। অবশ্যই আপনি সেগুলো পড়ার অভ্যাস করবেন। এতে করে আপনার Knowledge বাড়বে এবং সেগুলো এপ্লাই করার মাধ্যমে Skill বাড়বে।

এখন অনলাইনে লার্নিং রিসোর্স দিন দিন বেড়েই চলছে। রিসোর্স নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই। কিন্তু সমস্যা অন্য একটা জায়গায়। আপনি যেখান থেকে শিখবেন বা যার কাছ থেকে শিখবেন, তিনি প্রফেশনাল তো? সস্তা ইন্সট্রাক্টরে লার্নিং জগৎ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আপনি অনলাইন বা অফলাইন যে মাধ্যমেই সাইবার সিকিউরিটি কোর্স বা ইথিক্যাল হ্যাকিং কোর্স শিখুন না কেন, সেখানে ভর্তি হওয়ার আগে ইন্সট্রাক্টরকে যাচাই বাচাই করে নিবেন সে সত্যিই Professional কিনা।

আমি আদিত্য চক্রবর্তী নিজেও একজন Cyber Security Analyst। আমি আমার দীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে MSB Academy তে Certified Ethical Hacking Masterclass in Bangla কোর্সটি তৈরি করেছি। কোর্সে আমি হাতে কলমে ওয়েবসাইটের দুর্বলতা বের করা দেখিয়েছি এবং সাইটের নিরাপত্ত্বা কিভাবে বাড়াতে হয় সেটাও হাতে কলমে দেখিয়েছি। আর কোন কিছু হ্যাক করতে চাইলে আপনাকে হ্যাকিং এর বেসিক থেকে আডভান্স সব কিছু ভালোভাবে বুঝে শিখতে হবে এবং বিভিন্ন প্রকার হ্যাকিং টুলসের ব্যবহার সম্পর্কে জানতে হবে। আর সব কিছু যখন একবার শিখে যাবেন, তখন আপনি সাইবার ওয়ার্ল্ডের বিভিন্ন জিনিস হ্যাক এবং প্রটেক্টও করতে পারবেন।

আশা করি উপরের লেখাগুলা পরে বুঝতে পেরেছেন হ্যাকিং কি? ক্যারিয়ার হিসেবে কেমন হবে ইথিক্যাল হ্যাকিং। কিন্তু এর পরিণতি কি হতে পারে সেটি বুঝেছেন? ধরুন আপনি নিজে হ্যাকারদের কবলে পরেছেন। আপনার ডিভাইস থেকে হ্যাকাররা আপনার প্রচুর তথ্য নিয়ে গেল। ডিভাইসটি আপনার মোবাইল, Laptop, Desktop, Tab বা অন্য যেকোন কিছু হতে পারে। সেখানে আপনার ব্যাংক এর তথ্য থাকতে পারে, আপনার গোপনীয় Conversation থাকতে পারে, আপনার বা আপনার প্রিয়জনের অন্তরঙ্গ ছবি থাকতে পারে কিংবা অনেক Sensitive তথ্যও থাকতে পারে। নিজেকে একটাবার Victim ভেবে দেখুন তো। কেমন লাগবে ওই মুহুর্তটা আপনার কাছে?

আইনের আশ্রয় নিয়ে কিছু একটা করবেন সেটা অন্য হিসাব, কিন্তু তথ্যগুলো তো হ্যাকার দেখে ফেলল। মোট কথা Privacy Leak হয়ে গেল। তাই আমি বলব নিজেকে হ্যাকিং থেকে সুরক্ষা রাখতে হলেও আমাদের সবার হ্যাকিং সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে।

Leave a Reply

error: Alert: Content selection is disabled!!