বর্তমান সময়ে অনলাইন ইনকামের নানা পথের মাঝে CPA Marketing ও Affiliate Marketing দুইটি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং কার্যকর মডেল। অনেকেই এই দুটি শব্দ শুনেছেন, কিন্তু তাদের পার্থক্য, কাজের ধরন এবং কোনটা আপনার জন্য ভালো হবে এসব বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা পান না। এই ব্লগে আমরা সহজ ভাষায় জানব CPA ও অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের ভিন্নতা, সুবিধা-অসুবিধা, শেখার উপায় এবং কোনটা আপনার উপযুক্ত হতে পারে তা বিশ্লেষণ করে দেখব।
CPA মার্কেটিং কী?
CPA মার্কেটিং-এর পূর্ণরূপ হলো Cost Per Action। এটি ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের এমন একটি মডেল যেখানে আপনি আয় করেন তখনই, যখন কেউ আপনার প্রোমোট করা অফারে একটি নির্দিষ্ট “অ্যাকশন” সম্পন্ন করে। এই “অ্যাকশন” হতে পারে অনেক কিছুর মধ্যে যেকোনো একটি যেমন:
- ফর্ম পূরণ করা
- ইমেইল বা ফোন নাম্বার সাবমিট করা
- অ্যাপ ডাউনলোড করা
- একটি ওয়েবসাইটে রেজিস্টার করা
- একটি ভিডিও দেখা
- এমনকি একটি কোয়িজে অংশ নেওয়া
এই মডেলটি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং থেকে একটু আলাদা, কারণ এখানে কাউকে কিছু “কিনতে” হয় না। শুধু তারা যদি নির্ধারিত অ্যাকশনটি সম্পন্ন করে, তাহলেই আপনি কমিশন পাবেন।
ধরুন, আপনি একটি CPA অফার প্রমোট করছেন যেখানে বলা আছে কেউ যদি একটি অ্যাপ ডাউনলোড করে এবং সাইন আপ করে, তাহলে আপনি পাবেন ২ ডলার। এখন আপনি সোশ্যাল মিডিয়া, ইউটিউব, ব্লগ বা অন্য ট্রাফিক সোর্স ব্যবহার করে মানুষকে সেই অ্যাপ ডাউনলোড করাতে পারবেন। যত বেশি অ্যাকশন হবে, তত বেশি ইনকাম। এই কারণে CPA মার্কেটিং নতুনদের জন্য অনেক বেশি জনপ্রিয় ও সহজ একটি মডেল। কেননা, এখানে সেল কনভার্ট না করেও আপনি আয় করতে পারেন। পণ্য বিক্রি নিয়ে চিন্তা নেই, কেবল ট্রাফিক ও সঠিক অফার নির্বাচন করতে জানতে হবে।
CPA Marketing কিভাবে কাজ করে?
CPA মার্কেটিং মূলত তিনটি প্রধান অংশ নিয়ে কাজ করে—
১) অ্যাডভারটাইজার (Advertiser) যারা অফার দেয়
CPA মার্কেটিংয়ের গোড়ার দিক হলো অ্যাডভারটাইজার। তারা হলো সেই কোম্পানি বা বিজনেস, যারা চায় তাদের নির্দিষ্ট অ্যাকশন ইউজার দ্বারা সম্পন্ন হোক, যেমন: রেজিস্ট্রেশন, ফর্ম পূরণ, অ্যাপ ইনস্টল, ফ্রি ট্রায়াল ইত্যাদি। অ্যাডভারটাইজাররা CPA নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তাদের অফারগুলো পাবলিশ করে এবং বলে দেয় প্রতি সফল অ্যাকশনের জন্য তারা কত কমিশন দিতে রাজি।
উদাহরণস্বরূপ, ধরুন একটি ফিনটেক কোম্পানি তাদের নতুন অ্যাপ মার্কেটে ছড়াতে চায়। তারা CPA নেটওয়ার্কে অফার দেয় যে, কেউ আমাদের অ্যাপ ডাউনলোড করে ইমেইল দিয়ে সাইন আপ করলেই $2 পাবেন। এর ফলে তারা কম খরচে রিয়েল ইউজার পাচ্ছে। আর মার্কেটাররা পাচ্ছেন ইনকাম করার সুযোগ। অ্যাডভারটাইজারদের জন্য এটি লাভজনক, কারণ তারা শুধু ফলাফল পেলেই টাকা দিচ্ছেন খালি ক্লিকে নয়।
২) CPA নেটওয়ার্ক (CPA Network) অফারগুলোর মাধ্যম
CPA নেটওয়ার্ক হলো এমন একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম যা অ্যাডভারটাইজার এবং পাবলিশারদের (আপনার মতো মার্কেটার) মাঝে সংযোগ স্থাপন করে। CPA নেটওয়ার্কে হাজার হাজার অফার পাওয়া যায়, বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে। এখানে আপনি সাইন আপ করে অ্যাপ্রুভাল পেলে বিভিন্ন অফার থেকে বেছে নিতে পারবেন যেটা আপনার ট্র্যাফিক বা টার্গেট অডিয়েন্সের সাথে মিলে যায়।
এই নেটওয়ার্কগুলো ট্র্যাকিং সিস্টেম ব্যবহার করে ইউজারদের অ্যাকশন রেকর্ড করে এবং সেই অনুযায়ী কমিশন অ্যাসাইন করে। তারা নিশ্চিত করে যে পাবলিশাররা যথাযথভাবে ট্রাফিক জেনারেট করছে কিনা এবং ফ্রড হচ্ছে না। কিছু বিখ্যাত CPA নেটওয়ার্কের মধ্যে রয়েছে CPA GRIP, AFFMINE, ADSTERRA, MYLEAD, MaxBounty, CPAlead, OGAds ইত্যাদি। CPA নেটওয়ার্কেই আপনি আপনার অফারের জন্য একটি ইউনিক ট্র্যাকিং লিংক পাবেন, যা আপনি প্রোমোট করবেন। আর এই লিংকের মাধ্যমেই আপনার কাজ ট্র্যাক করা হয়।
৩) Publisher/Affiliate ( আপনি যিনি মার্কেটিং করেন )
এই জায়গাটিই হলো আপনার প্রধান কাজের জায়গা। আপনি পাবলিশার হিসেবে CPA নেটওয়ার্কে অ্যাকাউন্ট খুলে সিলেক্ট করা অফার প্রমোট করবেন। প্রতিটি অফারের জন্য আপনি একটি ট্র্যাকিং লিঙ্ক পাবেন। যা আপনি বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে শেয়ার করতে পারেন যেমন:
- Facebook Group
- YouTube ভিডিওর ডিসক্রিপশন
- Instagram Bio
- ব্লগ পোস্ট
- Google Ads / Native Ads
- WhatsApp / Telegram চ্যানেল
- Email Marketing ইত্যাদি।
আপনার কাজ হলো যত বেশি সম্ভব টার্গেটেড ট্র্যাফিককে সেই লিংকে ক্লিক করানো এবং নির্দিষ্ট অ্যাকশনটি করানো। যখনই কেউ আপনার লিংকে গিয়ে অ্যাকশন সম্পন্ন করে (যেমন ফর্ম ফিল আপ বা রেজিস্ট্রেশন), তখনই CPA নেটওয়ার্ক সেই ইনফরমেশন ট্র্যাক করে এবং আপনার অ্যাকাউন্টে কমিশন যুক্ত হয়। এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ট্রাফিক সোর্স ঠিকভাবে নির্বাচন করা, ইউজারকে আকর্ষণ করার জন্য কনটেন্ট বা হুক তৈরি করা এবং নেটওয়ার্কের নিয়ম মেনে কাজ করা। কারণ CPA নেটওয়ার্কগুলো ফ্রড ট্রাফিক বা ফেক অ্যাকশনের বিরুদ্ধে কঠোর।
CPA মার্কেটিং এর ৫টি বড় সুবিধা
১) দ্রুত রেজাল্ট ও আয় পাওয়ার সুযোগ: CPA মার্কেটিংয়ে আপনি ইউজারের কাছ থেকে শুধুমাত্র একটি অ্যাকশন পেলেই আয় করতে পারেন যেমন, ইমেইল সাবমিট, অ্যাপ ডাউনলোড, সাইন আপ ইত্যাদি। এখানে সেল বা পণ্য বিক্রির প্রয়োজন নেই। তাই রেজাল্ট আসা তুলনামূলকভাবে দ্রুত হয়, যা নতুনদের জন্য অনেক বড় সুবিধা।
২) প্রোডাক্ট কিনতে হয় না, লিড পেলেই ইনকাম: CPA মার্কেটিংয়ে মূল ফোকাস হলো “লিড” তৈরি করা। এতে ইউজারকে কোনো টাকা খরচ করে কিছু কিনতে হয় না, বরং ফ্রি কিছুতে রেজিস্টার করলেই আপনি কমিশন পেয়ে যান। এর ফলে কনভার্সনের সম্ভাবনা বেশি থাকে এবং ইউজারদের রাজি করানো সহজ হয়।
৩) কম্পিটিশন তুলনামূলকভাবে কম: অনেকেই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বা ই-কমার্সের দিকে ঝুঁকে থাকায় CPA মার্কেটিং সেক্টরে তুলনামূলক কম প্রতিযোগিতা থাকে। নতুনরা চাইলে কম বাজেট ও কম অভিজ্ঞতায় ভালো ফলাফল পেতে পারে। এতে করে তাদের অনলাইন আয়ের যাত্রা সহজ হয়।
৪) সিম্পল ও ছোট অ্যাকশনেই পেমেন্ট পাওয়া যায়: CPA অফারগুলো সাধারণত খুবই সহজ হয়। যেমন শুধু একটি ফর্ম পূরণ, মোবাইল নম্বর দেওয়া, বা কোনো ফ্রি ট্রায়ালে সাইন আপ করা। এই ধরণের ছোট অ্যাকশনগুলোর মাধ্যমে দ্রুত পেমেন্ট পাওয়া যায়, যা বড় সেলসের অপেক্ষায় না থেকেই ইনকামের পথ খুলে দেয়।
৫) সোশ্যাল মিডিয়া ও ফ্রি ট্র্যাফিক দিয়েও শুরু করা যায়: CPA মার্কেটিংয়ে অনেক সময় ফ্রি ট্র্যাফিক দিয়েই ভালো রেজাল্ট আনা সম্ভব হয়। যেমন ফেসবুক গ্রুপ, ইউটিউব ভিডিও বা ব্লগ পোস্ট। যেহেতু ইউজারকে কিছু কিনতে হয় না, তাই ফ্রি ট্র্যাফিকেও অনেক ভালো কনভার্সন পাওয়া যায়। এতে করে যারা ইনভেস্ট করতে পারছেন না, তারাও সহজে শুরু করতে পারেন।
কিভাবে শিখবেন CPA মার্কেটিং?
CPA মার্কেটিং কি? কিভাবে এটি কাজ করে, কেন এটি এত জনপ্রিয় এবং কেন আপনার CPA মার্কেটিং করা উচিৎ সব কিছু সম্পর্কে আমরা এত সময় জানলাম, এখন আপনাকে এত কিছু করতে হলে আগে সঠিক ভাবে CPA মার্কেটিং শিখতে হবে। কারণ শুধু বেসিক ধারনা নিয়ে এখন আর কোন মার্কেটপ্লেসে সফল হওয়া যায় না। সকল সেক্টরে এখন কম বেশি কম্পিটিশন রয়েছে। তাই এখানে টিকে থাকতে হলে এবং ইনকাম করতে হলে আগে আপনাকে CPA মার্কেটিং শিখতে হবে।
আর আপনাদের জন্য সুখবর হচ্ছে MSB Academy-তে কিন্তু CPA Marketing Mastery নামের একটি বেস্টসেলিং কোর্স রয়েছে। কোর্সটিতে বেসিক থেকে শুরু করে মার্কেটিং এর এডভান্স এবং একদম শুরু থেকে ইনকাম করা পর্যন্ত সব কিছু লাইভ প্রজেক্টের মাধ্যমে শিখানো হবে। কোর্সটিতে আপনি একবার জয়েন হলে পাবেন লাইফটাইম কোর্স এক্সেস + ফ্রি কোর্স আপডেট এবং অভিজ্ঞ মেন্টরের লাইফ টাইম সাপোর্ট যা আপনার কাজে আরও সুন্দর এবং সহজ করে দিবেন এবং আপনার ইনকাম বাড়িয়ে দিবে।
Affiliate Marketing কী?
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হলো একটি পারফরমেন্স বেইসড ডিজিটাল মার্কেটিং মডেল। যেখানে কোন প্রোডাক্ট কিনার ঝামেলা নেই। যেখানে আপনি অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা সার্ভিস প্রমোট করে বিক্রি করানোর মাধ্যমে কমিশন আয় করতে পারেন। সহজভাবে বললে, আপনি হচ্ছেন সেই মধ্যস্থতাকারী ব্যক্তি যিনি ব্র্যান্ড বা কোম্পানির প্রোডাক্ট/সার্ভিস প্রমোট করেন এবং যখন কেউ আপনার রেফারেন্সে সেটি কিনে নেয় তখন আপনি একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন পাবেন।
উদাহরণস্বরূপ, আপনি MSB Academy এর অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামে জয়েন করলেন। তারপর MSB Academy থেকে একটি কোর্স লিঙ্ক নিলেন এবং সেটা নিজের ব্লগ বা ফেসবুক পেজে শেয়ার করলেন। কেউ যদি সেই লিঙ্কে ক্লিক করে কোর্সটি কিনে তাহলে আপনি ২০% কমিশন পাবেন। এখানে আপনার কনটেন্ট মার্কেটিং ও রিভিউ লেখার দক্ষতা থাকলে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে সফল হওয়া সহজ হয়।
কারন ধরুন, আপনি ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্সের অ্যাফিলিয়েট করলেন। এখন আপনি যদি আপনার ভিডিও কন্টেন্ট বা আপনার লেখার মধ্যে কোর্স সম্পর্কে ইউজারদের ভাল ভাবে বুঝাতে পারেন কেন MSB Academy এর এই ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্সটি সেরা অন্য সকল কোর্স থেকে। কি ধরনের সুবিধা রয়েছে এই কোর্সের মধ্যে। তাহলে আপনার কথা শুনে বা রিভিউ দেখে সেল বেশি হবে। যত বেশি সেল তত বেশি কমিশন এর টাকা পাবেন।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে কাজ করে?
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং মুলত ৫ টি প্রধান ধাপে কাজ করে। ধাপ গুলো হল-
ধাপ ১: একটি নির্ভরযোগ্য অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামে সাইন আপ করা
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করার সবচেয়ে প্রথম ধাপ হলো একটি ভালো মানের অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামে যুক্ত হওয়া। অনলাইনে অনেক বিশ্বস্ত কোম্পানি ও মার্কেটপ্লেস রয়েছে যারা অ্যাফিলিয়েটদের জন্য আলাদা প্রোগ্রাম চালায়। আপনি চাইলে Amazon Associates, ClickBank, ShareASale, Impact, JVZoo, এমনকি বাংলাদেশের MSB Academy Affiliate Program, Daraz Affiliate Program এও যুক্ত হতে পারেন। এই প্ল্যাটফর্মগুলোতে একবার রেজিস্ট্রেশন করলেই আপনি তাদের হাজার হাজার পণ্য বা সার্ভিস প্রমোট করার অনুমতি পাবেন। অ্যাপ্রুভাল পাওয়ার পর আপনি নিজের একটি অ্যাফিলিয়েট ড্যাশবোর্ড পাবেন যেখান থেকে বিভিন্ন পণ্যের লিংক তৈরি করতে পারবেন।
ধাপ ২: নিজের পছন্দ ও টার্গেট অডিয়েন্স অনুযায়ী পণ্য নির্বাচন করা
প্রোগ্রামে যুক্ত হওয়ার পরে, আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনি কোন পণ্য বা সার্ভিস প্রমোট করবেন। এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এমন একটি প্রোডাক্ট বেছে নেওয়া যা আপনার টার্গেট গ্রুপের চাহিদার সাথে মেলে। যেমন, যদি আপনি প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করেন তাহলে গ্যাজেট, সফটওয়্যার বা ওয়েব হোস্টিং সার্ভিস প্রমোট করতে পারেন। ফ্যাশন বা বিউটি নিয়ে কাজ করলে পোশাক বা কসমেটিকস প্রডাক্ট ভালো হবে। আর যদি আপনি স্কিল ডেভেলপমেন্ট বা ফ্রিল্যান্সিং বা অনলাইন ইনকাম বিষয় নিয়ে কাজ করেন সে ক্ষেত্রে MSB Academy ফ্রিলান্সিং কোর্স, অনলাইন ইনকাম কোর্স, সম্পর্কে প্রমোট করতে পারেন। পণ্য বাছাই করার সময় তার রিভিউ, দাম, ডিমান্ড, এবং আপনার কমিশন রেট সব কিছু মাথায় রাখতে হবে। এরপর আপনি সেই পণ্যের একটি ইউনিক অ্যাফিলিয়েট লিংক তৈরি করবেন, যেটির মাধ্যমে কোম্পানি বুঝতে পারবে কোন ক্রেতা আপনার রেফারেন্সে এসেছে।
ধাপ ৩: অ্যাফিলিয়েট লিংক শেয়ার করে প্রোডাক্ট প্রমোশন করা
এখন আপনার মূল কাজ শুরু অ্যাফিলিয়েট লিংকটি যত বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছানো এবং তাদের আগ্রহী করে তোলা যাতে তারা লিংকে ক্লিক করে প্রোডাক্টটি দেখে ও কেনে। আপনি চাইলে এই কাজটা বিভিন্ন উপায়ে করতে পারেন:
- নিজের ব্লগ বা ওয়েবসাইটে রিভিউ বা গাইড লিখে
- ফেসবুক পোস্ট, ইউটিউব ভিডিও বা টিকটক শর্টসে রিভিউ করে
- ইমেইল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে প্রমোশন চালিয়ে
- গুগল বা ফেসবুক অ্যাড চালিয়ে
এই জায়গাতেই আপনার কন্টেন্ট ক্রিয়েটিভিটি, কপি রাইটিং স্কিল এবং মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি ব্যবহার করতে হবে। আপনি যত বেশি মানুষের কাছে আপনার লিংক পৌঁছাতে পারবেন, তত বেশি চ্যান্স থাকবে বিক্রির এবং আয় করার।
ধাপ ৪: কেউ আপনার লিংকে ক্লিক করে পণ্য কিনলে, আপনি কমিশন পাবেন
এই ধাপটি সবচেয়ে মজার! কেউ যখন আপনার দেওয়া অ্যাফিলিয়েট লিংকে ক্লিক করে সেই নির্দিষ্ট পণ্যটি কিনে ফেলে, তখন সেই বিক্রির জন্য আপনি নির্ধারিত একটি কমিশন পেয়ে যান। এই প্রক্রিয়াটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘটে এবং ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে প্রতিটি বিক্রির হিসাব আপনি দেখতে পারেন আপনার অ্যাফিলিয়েট ড্যাশবোর্ডে। বিভিন্ন প্রোডাক্টের জন্য কমিশন রেট আলাদা হয় কোনোটিতে ৪%, কোনোটিতে ১০%, আবার ডিজিটাল প্রোডাক্টে ৫০% বা তারও বেশি পর্যন্ত হতে পারে! যেমন এমএসবি একাডেমী তাদের সকল অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামারদের ২০% করে কমিশন দিয়ে থাকে।
ধাপ ৫: কমিশন জমা হওয়া এবং পেমেন্ট তোলা
আপনার কমিশন যখন একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে পৌঁছে যায় (যেমন: $10, $50 বা $100), তখন সেই কোম্পানি আপনাকে পেমেন্ট পাঠায়। এই পেমেন্ট আপনি বিভিন্ন উপায়ে তুলতে পারেন। আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মগুলো সাধারণত Payoneer, PayPal, Wise ইত্যাদির মাধ্যমে টাকা পাঠায়। কিছু কিছু দেশীয় কোম্পানি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা মোবাইল ব্যাংকিং মাধ্যমেও পেমেন্ট করে। প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট তারিখে পেমেন্ট আপনার অ্যাকাউন্ট চলে যাবে।
MSB Academy অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম
আপনি জেনে খুশি হবেন যে আমাদের এই MSB Academy প্লাটফর্মের অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম আছে। যেখানে জয়েন করার মাধ্যমে আপনি আমাদের প্লাটফর্মের কোর্সগুলোর মার্কেটিং বা আপনার পরিচিত কাওকে রেফার করার মাধ্যমে ইনকাম করতে পারবেন। অনেকেই ইউটিউব, ফেসবুকে কোর্সগুলোর মার্কেটিং করার মাধ্যমে প্রতি মাসে ২০,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত ইনকাম করছে। এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানতে নিচের এই ভিডিওটি দেখুন।
Amazon Affiliate প্রোগ্রাম (Most Popular)
Amazon Affiliate প্রোগ্রাম (Amazon Associates) হলো একটি কমিশন-ভিত্তিক মার্কেটিং সিস্টেম, যেখানে আপনি Amazon-এর প্রোডাক্ট লিংক শেয়ার করে বিক্রির মাধ্যমে আয় করতে পারেন। কেউ আপনার লিংকের মাধ্যমে পণ্য কিনলে আপনি ১% থেকে ১০% পর্যন্ত কমিশন পান (প্রোডাক্ট ক্যাটাগরির উপর নির্ভর করে)। সঠিকভাবে SEO, ব্লগিং, বা ইউটিউব রিভিউ ব্যবহার করলে মাসে $100 থেকে শুরু করে $1000+ বা তারও বেশি ইনকাম করা সম্ভব। তবে এটি নির্ভর করে ট্রাফিক, কনভার্সন রেট ও মার্কেটিং দক্ষতার উপর।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর ৫টি বড় সুবিধা
১) প্যাসিভ ইনকামের সুযোগ: অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো এটি থেকে প্যাসিভ ইনকাম করা সম্ভব। আপনি যদি একটি ভালো রিভিউ ব্লগ বা ভিডিও তৈরি করেন এবং তাতে অ্যাফিলিয়েট লিঙ্ক যুক্ত করেন, তাহলে সেটি থেকে আপনি দীর্ঘ সময় ধরে আয় করতে পারেন, এমনকি ঘুমিয়ে থাকলেও। একবার ভালো কনটেন্ট তৈরি করলেই মাসের পর মাস আয় আসতে পারে।
২) বড় অঙ্কের কমিশন পাওয়া যায়: অনেক অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম প্রতি বিক্রয়ের বিপরীতে বড় অঙ্কের কমিশন দিয়ে থাকে অনেক ক্ষেত্রে ৩০% থেকে শুরু করে ৭০% পর্যন্ত। ডিজিটাল পণ্যে এই কমিশনের হার আরও বেশি হয়। ফলে একটি মাত্র সেল থেকেও মোটা অঙ্কের ইনকাম সম্ভব হয়, যা CPA তে তুলনামূলকভাবে কম।
৩) লং টার্ম ব্র্যান্ড ও অডিয়েন্স তৈরি হয়: অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে আপনি কনটেন্টের মাধ্যমে বিশ্বাস গড়ে তোলেন। ব্লগ, ইউটিউব, সোশ্যাল মিডিয়া এসব মাধ্যমে আপনি নিজেকে একজন এক্সপার্ট হিসেবে পরিচিত করতে পারেন। এতে আপনার চারপাশে একটি নির্ভরযোগ্য অডিয়েন্স তৈরি হয় যারা আপনার রেফারেন্সে ক্রয় করতে আগ্রহী হয়।
৪) বিশাল মার্কেটপ্লেস ও পণ্যের ভ্যারাইটি: অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের জন্য প্রচুর মার্কেটপ্লেস রয়েছে যেমন MSB Academy, Amazon, ClickBank, Impact, ShareASale ইত্যাদি। এখানে লাখ লাখ প্রোডাক্ট আছে যা আপনি নিজের পছন্দ ও অডিয়েন্স অনুযায়ী প্রমোট করতে পারেন। এই বৈচিত্র্য একজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারের জন্য অনেক বড় সুবিধা।
৫) রিটার্গেটিং ও কাস্টমাইজ কনটেন্টের সুবিধা: আপনি চাইলে নিজের ওয়েবসাইট, ব্লগ বা ইমেইল লিস্ট ব্যবহার করে ভিজিটরদের বারবার টার্গেট করতে পারেন। আবার, প্রোডাক্ট অনুযায়ী কাস্টম কনটেন্ট তৈরি করে অডিয়েন্সের মন জয় করতে পারেন। এই কৌশলগুলোর মাধ্যমে আপনি সেল বাড়াতে পারবেন এবং আপনার ইনকাম অনেক সময় দ্বিগুণও হতে পারে।
কোনটা আপনার জন্য?
আপনি CPA মার্কেটিং করবেন নাকি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এই সিদ্ধান্তটা একদমই আপনার স্কিল, সময় এবং আগ্রহের ওপর নির্ভর করে। যদি আপনি একেবারে নতুন হয়ে থাকেন, কারও কিছু বিক্রি করতে না চান বা কনটেন্ট তৈরি করা নিয়ে অনীহা থাকে, তাহলে CPA মার্কেটিং আপনার জন্য ভালো অপশন হতে পারে। এখানে ইউজার শুধু সাইন আপ করলেই আপনি আয় করতে পারেন এতে সেল হওয়ার অপেক্ষা নেই, কাজও তুলনামূলক সহজ। বিশেষ করে যদি আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায় ভালো ট্র্যাফিক থাকে, তাহলে অল্প সময়ে ইনকাম শুরু করা সম্ভব।
অন্যদিকে, আপনি যদি একজন কনটেন্ট ক্রিয়েটর হন লিখতে, ভিডিও বানাতে বা প্রোডাক্ট রিভিউ করতে পছন্দ করেন, তাহলে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং আপনার জন্য আরও উপযোগী হবে। কারণ, এখানে ভরসা তৈরি করাটাই মূল চালিকাশক্তি। ভালো কনটেন্ট মানেই দীর্ঘমেয়াদী ইনকাম। আপনি যদি প্যাসিভ ইনকাম চান এবং একবারের কনটেন্ট থেকে বারবার আয় করতে চান, তবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং আপনার জন্য আদর্শ। সবচেয়ে ভালো হয়, যদি আপনি দুইটি ক্ষেত্রেই হাতে-কলমে কিছুটা কাজ করেন। তাহলে আপনি নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই বুঝতে পারবেন কোন মডেলে আপনি বেশি দক্ষ ও আগ্রহী। একটিকে প্রাইমারি এবং অন্যটিকে সাপোর্টিভ আয়ের উৎস হিসেবেও রাখতে পারেন।
পরিশেষে একটি কথা, বর্তমান অনলাইন আয়ের জগতে CPA মার্কেটিং এবং অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এই দুইটি পথই খুবই জনপ্রিয়, কার্যকর এবং লাভজনক। তবে কোনটি আপনার জন্য উপযুক্ত, তা নির্ভর করে আপনার দক্ষতা, সময়, রিসোর্স এবং লক্ষ্য অনুযায়ী। যদি আপনি দ্রুত ফল পেতে চান, যেখানে ইউজার শুধুমাত্র ক্লিক, সাইনআপ বা ইনস্টল করলেই আপনি কমিশন পান তাহলে CPA মার্কেটিং আপনার জন্য আদর্শ হতে পারে। অন্যদিকে, যদি আপনি দীর্ঘমেয়াদি একটি প্যাসিভ ইনকাম সোর্স গড়ে তুলতে চান, কন্টেন্ট তৈরি করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন এবং ধৈর্য ধরে কাজ করতে প্রস্তুত, তাহলে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হবে আপনার জন্য সঠিক পথ।
Comments