প্রযুক্তির উন্নতির ফলে এখন অনলাইন থেকে ইনকাম করার প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। আর সবচেয়ে বেশি আগ্রহ বাড়ছে ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে। আইসিটি বিভাগের তথ্য মতে, বর্তমান বাংলাদেশে প্রায় সারে ৬ লাখ এর উপর ফ্রিল্যান্সার রয়েছে যারা অনলাইন থেকে তাদের মেধা স্কিল কাজে লাগিয়ে ইনকাম করছে। তবে ফ্রিল্যান্সিং করে ইনকাম করে নিজের অ্যাকাউন্ট সেই ডলার বা টাকা নিয়ে আসার জন্য বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়। কারণ অনলাইন চলে ডলার এর খেলা। এখানে চাইলে নিজের মত করে সব কিছু করা যায়।
তবে অনলাইন থেকে আয় করে সেটা নিজের অ্যাকাউন্টে নিয়ে আসার জন্য দুইটা মাধ্যমে বেশ জনপ্রিয় একটি PayPal আর একটি Payoneer। আজকের এই ব্লগে আমারা পেওনিয়ার সম্পর্কে জানব। কিভাবে পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট খুলবেন এবং কিভাবে ডলার টাকাতে কনভার্ট করে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নিয়ে আসবেন সেই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট কি?
Payoneer হচ্ছে এক ধরনের অনলাইন ভার্চুয়াল ব্যাংক। Payoneer-কে আপনি এক ধরনের ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক ও বলতে পারেন। এটি হচ্ছে একটি ক্রস বর্ডার পেমেন্ট সলিউশন। যা ব্যাবহার করে আপনি দেশের বাইরে থেকে আপনার কাজের পেমেন্ট আনতে পারবেন। সেটা হতে পারে কোন মার্কেটপ্লেস থেকে অথবা সরাসরি ক্লায়েন্টের কাছ থেকে। আপনার ক্লায়েন্ট কোন প্রতিষ্ঠান হতে পারে আবার কোন ব্যাক্তিও হতে পারে। বর্তমানে প্রায় ২০০ টির বেশি দেশে এই Payoneer এর ভার্চুয়াল ব্যাংকিং সিস্টেম চালু রয়েছে।
Payoneer কিভাবে কাজ করে?
পেওনিয়ার আপনাকে বিভিন্ন দেশের কারেন্সিতে লেনদেনের সুবিধার্থে সে দেশের কোন লোকাল ব্যাংকের আদলে একটি ভার্চুয়াল অ্যাকাউন্ট খুলে দিবে। এর মাধ্যমে আপনি ইউরো, ডলার, পাউন্ড, কানাডিয়ান ডলার, Australian Dollar সহ আরও অনেক অনেক দেশের অর্থের মাধ্যমে লেনদেন করতে পারবেন।
পেওনিয়ার অ্যাকাউন্টের সুবিধা কি কি?
পেওনিয়ার এক ধরনের ভার্চুয়াল ব্যাংকিং সিস্টেম। তাই এটি আপনাকে গতানুগতিক প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থার সুবিধা দিবে না। আপনি এর মাধ্যমে এক দেশ থেকে অন্য দেশের কাস্টমার বা আপনার ফ্রিল্যান্সিং ক্লায়েন্ট এর সাথে অর্থ লেনদেন করতে পারবেন। অর্থাৎ অনলাইনে বাহিরের দেশের সাথে আপনি কোন কাজ করলে ফ্রিল্যান্সিং বা বিজনেস করলে পেওনিয়ার এর মাধ্যমে আপনি বিভিন্ন কারেন্সিতে লেনদেন করতে পারবেন।
অন্যথায় এখানে অ্যাকাউন্ট খুলে আপনি বিশেষ কোন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন না। তবে আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিং করেন বা ডিজিটাল মার্কেটিং এর কাজ করেন তাহলে পেওনিয়ার এর পূর্ণ সুবিধা ব্যবহার করতে পারবেন।
পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট খুলতে কি কি লাগে?
পেওনিয়ার যেহতু এক ধরনের ভার্চুয়াল ব্যাংকিং সিস্টেম এবং এতে নগদ অর্থ জমা থাকে না তাই এই পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট খুলতে খুব বেশি কাগজ পত্র প্রয়োজন হয় না। যে কোন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যাক্তি পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবে। তবে তার জন্য কিছু নিয়ম এবং ডকুমেন্ট প্রয়োজন হবে। আপনি যে দেশ থেকে অ্যাকাউন্ট খুলবেন সেই দেশের ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সের নাগরিক হতে হবে।
আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স, অথবা পাসপোর্ট থাকলে হবে এবং অ্যাকাউন্ট খুলার সময় এই ৩ টার যেকোন একটা জমা দিতে হবে। পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট আপনি আপনার বাসায় বসে ল্যাপটপ বা কম্পিউটার দিয়ে নিজে নিজে ওপেন করতে পারবেন। এছাড়াও চাইলে মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড করেও অ্যাকাউন্ট ওপেন করতে পারবেন।
পেওনিয়ার (Payoneer) অ্যাকাউন্ট কিভাবে খুলবেন?
পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট ওপেন করার জন্য আপনাকে সহজ কিছু স্টেপ ফলো করতে হবে। চলুন জেনে নেয়া যাক সেই স্টেপগুলো কি কিঃ
স্টেপ ১) পেওনিয়ার ওয়েবসাইট ভিজিট যেতে হবে
পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট খুলে ৫০ ডলার বোনাস পেতে আপনাকে প্রথমে এই লিঙ্ক থেকে পেওনিয়ার ওয়েবসাইট যেতে হবে। তারপর Sign Up & Earn $50 বাটনে ক্লিক করুন।
![]()
স্টেপ ২) অ্যাকাউন্ট ধরন সিলেক্ট করুন
পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। Individual Payoneer Account এবং Company Payonner Account. আপনি Individual(ব্যাক্তিগত) অ্যাকাউন্ট খুলতে চাইলে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র বা পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে হবে। আর Company Account খুলতে হলে আপনার প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স এবং ইনকাম টেক্সর তথ্য জমা দিতে হবে। তবে আপনি যেহেতু নিজে ব্যবহার করবেন তাই Individual Account খুলা ভাল হবে। তাই অ্যাকাউন্ট ধরন হিসেবে Individual সিলেক্ট করুন।
![]()
স্টেপ ৩) ব্যাক্তিগত তথ্য ফরম পূরণ করুন
অ্যাকাউন্ট এর ধরন সিলেক্ট করে নেক্সট ক্লিক করলে নিজর ব্যাক্তিগত তথ্য দেয়ার জন্য একটি ফরম আসবে সেখানে আপনার নাম, ইমেইল এড্রেস, জন্ম তারিখ সব কিছু সুন্দর করে পূরণ করে Next ক্লিক করতে হবে।
![]()
স্টেপ ৪) আপনার সাথে যোগাযোগের তথ্য দিন
এই ফরমে আপনার সাথে যোগাযোগ করার জন্য যা যা লেখা আছে সব কিছু দিতে হবে। আপনার দেশ, আপনার মোবাইল নাম্বার, আপনি যেখানে থাকেন সেই জায়গার নাম সব কিছু সুন্দর করে লিখে দিতে হবে। অবশ্যই সঠিক তথ্য দিবেন। তবে এই ক্ষেত্রে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র বা NID কার্ডে যে ঠিকানা দেয়া আছে সেই ভাবে দিবেন। তারপর Next ক্লিক করবন।
![]()
স্টেপ ৫) পাসওয়ার্ড সেট করুন
আপনার পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট নিরাপদ রাখার জন্য Strong পাসওয়ার্ড সেট করুন এবং কিছু সিকিউরিটি সম্পর্কিত প্রশ্ন সেট করুন। তারপর Next ক্লিক করুন
![]()
স্টেপ ৬) আপনার ব্যাংক ইনফরমেশন যুক্ত করুন
পেওনিয়ার এর মাধ্যমে আসা ডলার আপনার কোন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এর মাধ্যমে গ্রহণ করবেন এবং Withdraw করবেন সেই ব্যাংক ইনফরমেশন এখানে সিলেক্ট করে অ্যাড করে দিন। সব কিছুতে Agree দিয়ে Submit এ ক্লিক করুন।
![]()
স্টেপ ৭) অ্যাকাউন্ট ভেরিফিকেশন
পেওনিয়ার থেকে আপনার দেয়া ইমেইল এড্রেসে একটি ভেরিফিকেশন ইমেইল আসবে। সেখানে কিছু নির্দেশনা দেয়া থাকবে সেই গুলা ফলো করে আপনার অ্যাকাউন্ট সেটআপ কমপ্লিট করবেন। এখন আপনি চাইলে আপনার অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে পারবেন।
![]()
Payoneer অ্যাকাউন্ট ব্যবহারের A to Z গাইডলাইন
নতুনরা Payonner একাউন্ট খোলার পর অনেক ক্ষেত্রেই কনফিউজড হয়ে যায়। কিভাবে ব্যবহার করবে, কিভাবে ডলার ট্রান্সফার করবে, কিভাবে ডলারকে টাকায় কনভার্ট করবে ইত্যাদি অনেক বিষয়ই থকে তাদের অজানা। আর নিচের ভিডিওটি সম্পূর্ণ দেখার মাধ্যমে আপনি Payoneer ব্যবহারের কমপ্লিট গাইডলাইন পেয়ে যাবেন।
পেওনিয়ার নিয়ে নতুনদের কিছু কমন প্রশ্ন (FAQ)
১) পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট কি ফ্রিতে খুলা যাবে?
উত্তরঃ হ্যাঁ, আপনি সম্পূর্ণ ফ্রিতে পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন।
২) পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট করতে কত বছর বয়স হতে হবে?
উত্তরঃ আপনি যে দেশে থাকবেন সেই দেশের হিসাব অনুযায়ী ১৮ বছর বয়স হলে এবং আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র থাকলে অ্যাকাউন্ট করতে পারবেন।
৩) পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট করতে কি কি ডকুমেন্ট লাগবে?
উত্তরঃ পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট করতে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র বা পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স এই তিনটির একটি লাগবে। এবং একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট লাগবে যার মাধ্যমে আপনি টাকা গ্রহণ করবেন।
৪) অ্যাকাউন্ট খোলা কমপ্লিট, ৫০ ডলার বোনাস পাব কিভাবে?
উত্তরঃ আমাদের দেয়া ইউনিক লিঙ্ক থেকে খোলা Payonner অ্যাকাউন্ট দিয়ে ১০০০ ডলার+ ট্রানজেকশন করলেই পেয়ে যাবেন ৫০ ডলার Singup বোনাস।
৫) ফ্রিল্যান্সারদের জন্য পেওনিয়ার কেমন হবে?
উত্তরঃ ফ্রিল্যান্সারদের জন্য পেওনিয়ার বেস্ট এবং সহজ একটি মাধ্যেম ফ্রিল্যান্সিং করে ডলার নিজের অ্যাকাউন্ট আনার জন্য। কারণ বিভিন্ন দেশের কারেন্সি পেওনিয়ার সাপোর্ট করে থাকে।
৬) পেপাল নাকি পেওনিয়ার কোনটা বেশি ভাল হবে?
উত্তরঃ পেপাল থেকে পেওনিয়ার অনেকটা সহজ এবং ভাল সুবিধা দিবে। কারণ বিভিন্ন দেশের কারেন্সি পেওনিয়ার সাপোর্ট করে থাকে। তবে এই ক্ষেত্রে আপনার প্রয়োজনের উপর নির্ভর করবে আপনার জন্য কোনটা ভাল হবে।
পরিশেষে একটি কথা, আশা করি এই ব্লগটি পড়ে বুঝতে পেরেছেন কি ভাবে পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট খুলবেন। আসলে প্রযুক্তির কল্যাণে এখন পৃথিবীটা অনেক ছোট হয়ে আসছে। এখন মানুষ নিজের দেশে বসে অন্যদেশের অন্য কোম্পানির কাজ করে দিয়ে ইনকাম করছে এবং অন্য দেশ থেকে নিজের দেশে টাকা নিয়ে আছে।
বর্তমান এই দুর্লভ চাকরির বাজরে ভাল চাকরি পাওয়া যেমন কঠিন ঠিক তেমনি সময়ের অনেক অপচয় হয়। তাই শুধু মাত্র চাকরির পিছনে না ঘুরে আপনি এখন চাইলে পড়াশোনার পাশাপাশি ভাল কোন স্কিল শিখে ফ্রিল্যান্সিং করে শুরু করতে পারেন। ফ্রিল্যান্সিং এবং অনলাইন ইনকাম নিয়ে আমাদের অনেক কোর্স রয়েছে আপনি চাইলে এই কোর্সগুলোতে জয়েন করে স্কিল অর্জন করে আপনার অনলাইন ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন।
Comments