Blog

ডলার এনডোর্সমেন্ট কী, এবং কীভাবে করবেন?

A man in a suit is holding a bundle of money in front of an american flag.

Netflix, Canva, Facebook Boost সব কিছু করতে চান, কিন্তু ডলার নেই? ডলার এনডোর্সমেন্ট করে খুলে ফেলুন ডিজিটাল স্বাধীনতার দরজা! আজকাল অনলাইনে শপিং করা, ফ্রিল্যান্স টুল কিনা, বা ফেসবুকে মার্কেটিং চালানো সব কিছুর জন্যই দরকার ডলার। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে কার্ডে ডলার পাওয়া একটা বিরাট ঝামেলার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সমস্যার সমাধানই হচ্ছে ডলার এনডোর্সমেন্ট।

ডলার এনডোর্সমেন্ট কী?

Dollar Endorsement মানে হলো ,আপনি যখন বিদেশে ভ্রমণের জন্য ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে (পাসপোর্টে সিল মেরে) নির্দিষ্ট পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা (ডলার) ব্যবহার করতে চান। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রত্যেক বাংলাদেশি নাগরিককে প্রতি বছর সর্বোচ্চ ১২,০০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত ব্যয় করার অনুমতি দেয়, যেটা “Annual Travel Quota” নামে পরিচিত। এই কোটা ব্যবহার করে আপনি নিজের নামে একটা ইন্টারন্যাশনাল ডেবিট/ক্রেডিট কার্ডে ডলার লোড করতে পারবেন।

ডলার এনডোর্সমেন্ট করলে কী করা যাবে?

আপনি নিজের নামে ডলার এনডোর্স করলে নিচের কাজগুলো সহজেই করতে পারবেন- 

  • Netflix, Amazon Prime, Canva, ChatGPT, Envato ইত্যাদি সাবস্ক্রিপশন কিনতে
  • Facebook Ads, Google Ads, TikTok Ads চালাতে
  • Themeforest, AppSumo, Namecheap, GoDaddy থেকে টুলস/ডোমেইন কিনতে
  • Amazon/Etsy থেকে প্রোডাক্ট অর্ডার করতে
  • Paypal/Payoneer/Stripe একাউন্ট ভেরিফাই বা লিংক করতে
  • ট্রাভেল, হোটেল বুকিং, বা অনলাইন কোর্স সাবস্ক্রাইব

ব্যাংক থেকে ডলার এনডোর্স করার প্রক্রিয়া

ধাপ ১: একটি বৈধ পাসপোর্ট থাকা

আপনার কাছে থাকতে হবে একটি ম্যানুয়াল বা ই-পাসপোর্ট, যেটি valid (চলমান) থাকতে হবে। পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে এনডোর্সমেন্ট করা যাবে না।

ধাপ ২: ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট থাকা

আপনার নামেই একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে। এটি সঞ্চয়ী, চলতি বা প্রিপেইড অ্যাকাউন্ট হতে পারে। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকলে প্রথমে সেটি খুলে নিতে হবে।

ধাপ ৩: ইন্টারন্যাশনাল কার্ডের আবেদন

আপনার ব্যাংক থেকে একটি ইন্টারন্যাশনাল ডেবিট, ক্রেডিট বা প্রিপেইড কার্ড নেওয়ার জন্য আবেদন করতে হবে। কিছু জনপ্রিয় ব্যাংক যারা এই সুবিধা দেয়- 

  • স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক
  • সিটি ব্যাংক (AMEX)
  • ব্র্যাক ব্যাংক
  • ডাচ্-বাংলা ব্যাংক
  • ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড (EBL)

ধাপ ৪: ডলার এনডোর্সমেন্টের আবেদন

আপনি যখন কার্ড পেয়ে যাবেন (বা প্রিপেইড কার্ড হয়ে গেলে), তখন আপনাকে ব্যাংকে গিয়ে ডলার এনডোর্স করার জন্য বলতে হবে। তারা আপনার- 

  • পাসপোর্টে সিল (endorsement stamp) দেবে
  • ফর্ম পূরণ করতে দিতে পারে
  • কোন ডকুমেন্ট চাইতে পারে যেমন, সফটওয়্যার সাবস্ক্রিপশনের প্রুফ বা ট্রাভেল টিকিট যদিও অনেক ব্যাংক এখন আর চায় না। 

ধাপ ৫: টাকা জমা দিয়ে ডলার লোড

এখন আপনি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা (বাংলাদেশি টাকায়) জমা দিবেন ব্যাংকে।

উদাহরণ: আপনি যদি $100 লোড করতে চান এবং রেট যদি ১১৫ টাকা হয়, তাহলে আপনাকে ১১,৫০০ টাকা দিতে হবে (প্লাস সম্ভবত কিছু চার্জ)। এই টাকা আপনার কার্ডে ডলার হিসেবে যুক্ত করা হবে।

ধাপ ৬: ব্যবহারের প্রস্তুতি

এখন আপনার কার্ড ব্যবহার করে আপনি নিচের কাজগুলো করতে পারবেন- 

  • Netflix/Canva/ChatGPT সাবস্ক্রিপশন নেওয়া
  • Facebook/Google/TikTok Ads চালানো
  • Amazon, Namecheap, Envato থেকে কিছু কেনা
  • ট্রাভেল, হোটেল বুকিং, বা অনলাইন কোর্স সাবস্ক্রাইব

মোট কত ডলার এনডোর্স করা যায়?

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, একজন বাংলাদেশি নাগরিক প্রতি বছর সর্বোচ্চ ১২,০০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত বৈধভাবে ডলার এনডোর্স করতে পারেন। এই পরিমাণটিকে বলা হয় Annual Travel Quota, যার আওতায় আপনি ইন্টারন্যাশনাল কার্ডে ডলার লোড করে বিদেশে ভ্রমণ, অনলাইন শপিং, সফটওয়্যার সাবস্ক্রিপশন, ফেসবুক বুস্টিং ইত্যাদির জন্য ব্যবহার করতে পারেন।

বর্তমানে অনেক ব্যাংক আপনাকে পাসপোর্টের পুরো মেয়াদের জন্য একবারেই এই কোটা অনুযায়ী ডলার এনডোর্সমেন্ট করে দেয় (যেমন: ৫ বছরের জন্য ৫×১২,০০০ = ৬০,০০০ ডলার)। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আপনি প্রতি বছর সর্বোচ্চ ১২,০০০ ডলার-এর বেশি ব্যবহার করতে পারবেন না Even যদি একবারেই বড় পরিমাণ এনডোর্স করা থাকে।

ডলার এনডোর্সের মেয়াদ কত দিন?

বাংলাদেশে ডলার এনডোর্সমেন্টের মেয়াদ সাধারণত আপনার পাসপোর্ট ও কার্ডের মেয়াদের উপর নির্ভর করে, এবং সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী এটি একই বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্তই বৈধ থাকে। অর্থাৎ যদি আপনার পাসপোর্ট বৈধ থাকে বছরে বছরে তাহলে প্রতি বছরের কোটা (১২,০০০ USD) ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ব্যবহার করতে হবে। এরপর নতুন বছরের ১ জানুয়ারি থেকে নতুন কোটা পাওয়ার সুযোগ পাওয়া যায়।

তবে ব্যাংক এখন পাসপোর্টের মেয়াদকাল ধরে একাধিক বছরের কোটা একবারেই এনডোর্স করতে দেয়। যেমনঃ ৫ বছরের পাসপোর্টে ৬০,০০০ USD পর্যন্ত। যদিও এতে আপনি একবারেই সিল করালেন পরবর্তীতে প্রত্যেক বছর ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাত্র ১২,০০০ USD ব্যবহার করতে পারবেন। আর পাসপোর্ট বা ইন্টারন্যাশনাল কার্ডের মেয়াদ শেষ হলে সেই এনডোর্সমেন্টও শেষ হয়ে যাবে।

মোট কথা হল,ডলার এনডোর্সমেন্ট এখন আর শুধু ভ্রমণের জন্য নয় এটি ডিজিটাল প্রফেশনালদের জন্য একটি দরজা খুলে দিয়েছে। আপনি যদি সত্যিই নিজের কাজের জন্য সাশ্রয়ী ও বৈধভাবে ডলার খরচ করতে চান, তাহলে এই পদ্ধতিটি আপনার জন্য উপযুক্ত। নিজের কার্ডে ডলার লোড করে অনলাইন মার্কেটিং, সফটওয়্যার কিনা, সাবস্ক্রিপশন চালানো কিংবা ট্রাভেল সব কিছু করুন স্বাধীনভাবে, নিরাপদে।

Leave a Reply