Blog

কীভাবে ব্যাংক একাউন্ট খুলবেন? (কমপ্লিট গাইডলাইন)

create bank account

আপনি যেই পেশাতেই নিয়োজিত থাকেন না কেন আপনার একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকা বর্তমান সময়ে অপরিহার্য। ব্যবসায়িক লেনদেন হোক বা ব্যাক্তিগত যে কোন প্রকার লেনদেন করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বিশ্বস্ত এবং সহজ মাধ্যম হল ব্যাংক। তাই এই সময় এসে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকার মানেই হচ্ছে আপনি অন্যদের চেয়ে বেশ পিছিয়ে আছেন। কাজেই, ব্যাংক একাউন্ট না থাকলে দ্রুত একটি অ্যাকাউন্ট খুলে নেওয়া নেয়া হবে আপনার জন্য সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত। 

ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার কথা আসলে অনেকই খুবই চিন্তায় পরে যায়। অনেকের কাছে এটি অনেক দৌড়াদৌড়ি এবং ঝামেলার কাজ মনে হয়। আসলেই কি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা অনেক ঝামেলার কাজ? এক কথায় যদি বলি, না। আপনি যদি সঠিক গাইডলাইন এবং নিয়ম জানেন তাহলে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা কোন ঝামেলার কাজই না। আর আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জানব কিভাবে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলবেন, কি কি লাগবে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলতে, এই সবকিছু নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার নিয়ম

বাংলাদেশের ব্যাংকসমূহ মূলত দুই শ্রেণীতে বিভক্ত, তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত ব্যাংক। ৬টি রাষ্ট্রায়ত্ব বাণিজ্যিক ব্যাংক, ৪৩টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক, ৩টি বিশেষায়িত ব্যাংক ও ৯টি বিদেশি ব্যাংকসহ বাংলাদেশে মোট তালিকাভুক্ত ব্যাংকের সংখ্যা ৬১টি এবং অ-তালিকাভুক্ত ব্যাংকের সংখ্যা ৫টি। গ্রামীণ ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, কো-অপারেটিভ ব্যাংক ইত্যাদি নামের ব্যাংক অ-তালিক ভুক্ত অর্থাৎ তফসিলী ব্যাংক নয়। এই সকল ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলতে পারবেন না। ৬১ টি ব্যাংক তফসিলি ব্যাংক হিসেবে স্বীকৃত প্রাপ্ত। তফসিলি ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক দ্বারা অফিসিয়ালি স্বীকৃত প্রাপ্ত ব্যাংক। আপনি এই সকল ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। তবে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সময় কিছু জিনিস আপনার মাথায় রেখে খুলা ভাল। যেমন ব্যাংকের শাখা থেকে আপনার বাসা কিংবা কর্মস্থলের দূরত্ব, অনলাইন সুবিধা, কার্ড সুবিধা, দেশের বিভিন্ন জায়গায় শাখার বিস্তৃতি রয়েছে কিনা এই সব বিষয় মাথায় রাখা ভাল। তাছাড়া ব্যাংক চার্জ, ইন্টারেস্ট ও সার্ভিস কোয়ালিটির দিকটাও খেয়াল রাখতে হবে।

ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফর্ম

যে কোন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলতে হলে আগে আপনাকে একটি ফর্ম পূরণ করতে হবে। বাংলাদেশে সাধারনত দুই ধরনের ব্যাংক ফর্ম পাওয়া যায়।

  1. ব্যাক্তিগত অ্যাকাউন্ট ফর্ম
  2. প্রতিষ্ঠানিক অ্যাকাউন্ট ফর্ম

১) ব্যক্তিগত একাউন্ট ফর্ম

এটি মূলত ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহৃত হবে এমন একাউন্ট। যে একাউন্টের শিরোনাম, অর্থাৎ টাইটেল অব একাউন্ট কোনো ব্যক্তির নামে হয়, সেগুলো ব্যক্তিগত একাউন্ট হিসেবে বিবেচিত। এই ধরনের ফর্মের মাধ্যমে এক বা একাধিক ব্যক্তির নামে একাউন্ট খোলা যাবে।

২) প্রাতিষ্ঠানিক একাউন্ট ফর্ম

এই ধরনের ফর্মে ব্যাংক একাউন্টের শিরোনাম বা টাইটেল অব একাউন্ট কোনো প্রতিষ্ঠানের নামে হয়। এ একাউন্ট গুলো অব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট হিসেবে গণ্য হবে।

ব্যাংক একাউন্টের ধরন

ব্যাংকে নানা ধরনের একাউন্ট রয়েছে। তবে এই চারটি অ্যাকাউন্ট বেশি প্রচলিত এবং সবাই এই অ্যাকাউন্ট গুলো করে থাকে। এই অ্যাকাউন্ট গুলো হল-

১) চলতি হিসাব বা কারেন্ট একাউন্ট

কারেন্ট একাউন্ট প্রধানত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য খোলা হয়ে থাকে। কারেন্ট একাউন্ট থেকে দিনে যত বার খুশি তত বার টাকা পয়সা লেনদেন করা যায়। যেকোনো সময় টাকা তোলা যায় এবং জমা রাখা যায়। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক থেকে কোনো সুদ প্রদান করা হয় না, বরং বছর শেষে কিছু পরিমাণ টাকা সার্ভিস চার্জ হিসেবে কেটে রাখা হয়।

কোন বিশেষ পেশাজীবি ব্যাক্তিরা যেমন, আইনজীবি,ডাক্তার চাইলে নিজের নামে চলতি অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। এই অ্যাকাউন্ট এর বিশেষ সুবিধা হল যেকোন সময় যে কোন পরিমাণ টাকা তুলা যায় এবং ব্যাংক দিতে বাধ্য থাকবে।

২) সঞ্চয়ী হিসাব বা সেভিংস একাউন্ট

যে কেউ এ ধরনের একাউন্ট খুলতে পারে। সপ্তাহে একবার বা দুইবার টাকা তোলা যায় এবং জমা রাখা যায়। জমাকৃত টাকার উপর বার্ষিক ৫% থেকে ৭% হারে সুদ প্রদান করা হয়। তবে এই সুদের হার ব্যাংক ভেদে কম বেশি হতে পারে। যাদের সব সময় টাকা লেনদেনের প্রয়োজন হয় না, তাদের জন্য এই একাউন্ট উপযোগী।

একটি সেভিংস অ্যাকাউন্ট আপনাকে, ব্যাংকে আপনার টাকা নিরাপদে জমা রাখার অনুমতি দেয়। সেই জমানো টাকা কখনোই আপনাকে অরক্ষিতভাবে বয়ে বেড়াতে হবে না। এক্ষেত্রে ব্যাংক ভেদে সেভিংস অ্যাকাউন্ট এর মধ্যে ক্যাটাগরি রয়েছে। আপনি যে ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলবেন সেই ব্যাংকে যোগাযোগ করে আপনি কি ধরনের সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলতে চান বা আপনার প্রয়োজন বললে তারা আপনাকে বলে দিবে কোনটা আপনার জন্য ভাল হবে।

৩) ডিপিএস (ডিপোজিট পেনশন স্কিম) একাউন্ট

একেবারে সহজ বাংলায় বলতে গেলে আপনি যদি কোনো ব্যাংকের অধীনে কোনো টাকা সঞ্চয় করতে চান, তাহলে সেই টাকা সঞ্চয় করার বিষয়টিকে ডিপিএস বলা হয়। এক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্যাংকের বিভিন্ন রকমের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে এবং বিভিন্ন রকমের নাম দিয়ে এই অ্যাকাউন্টটি কে মেনশন করা হয়। প্রতি মাসে খরচ বাদ দিয়ে যতটুকু বাকি থাকে সেই টাকা সঞ্চয় করতে ডিপিএস সবচেয়ে নিরাপদ। ডিপিএস একাউন্ট মূলত সঞ্চয় এর উদ্দেশ্যেই ব্যবহৃত হয়।

আপনি নিজের নামে এবং আপনার প্রতিষ্ঠানের নামে এই অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। এ ধরনের একাউন্ট ৫ বছর, ১০ বছর বা ২০ বছর মেয়াদী হয়। সাধারণত, ৫ বছর মেয়াদী ডিপিএসের জন্য বার্ষিক ১০%, আর ১০ ও ২০ বছর মেয়াদী ডিপিএসের জন্য বার্ষিক ১৫% হারে সুদ প্রদান করা হয়। তবে ব্যাংক ভেদে এ সুদের পরিমাণ ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। এই ধরনের অ্যাকাউন্ট এ প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট অংকের টাকা জমা রাখতে হয়। সাধারণত ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত মাসিক কিস্তি দেয়া যায়। তবে সেটা আপনার উপর নির্ভর করবে আপনি কত বছরের জন্য এবং কত টাকা মাসিক কিস্তিতে খুলবেন।

৪) এফডিআর (ফিক্স ডিপোজিট রিসিট) একাউন্ট

একটি কথা আমার কম বেশি সবাই জানি যে, ভবিষ্যতের ভাবনা ভাবাই জ্ঞানীর কাজ। সচেতন মানুষ মাত্রই ব্যাংকে স্থায়ী আমানত করেন। এফডিআর হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট অংকের টাকা কোনো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জমা রাখা, যার সুদ আপনি মাসিক, পাক্ষিক, অর্ধবার্ষিক কিংবা বার্ষিক হিসেবে তুলতে পারবেন। এই একাউন্ট খোলার জন্য বড় অংকের টাকা জমা রাখতে হয়। সাধারণত ২৫ হাজার টাকার কমে এফডিআর একাউন্ট করা যায় না। এক্ষেত্রে বার্ষিক সুদের পরিমাণ প্রায় ৯% থেকে ১২% পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে আপনার এফডিআর প্রয়োজনের সময় চাইলে ভেঙে ফেলতে পারবেন তবে সেক্ষেত্রে আপনি যে পরিমাণ লাভ বা সুদ পাওয়ার কথা সেটা পাবেন না।

এছাড়াও ডাচ বাংলা, ইসলামী ব্যাংক সহ আরও বেশ কিছু ব্যাংক রয়েছে যেখানে স্টুডেন্টদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে স্টুডেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। স্টুডেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলতে হলে  অবশ্যই আপনার স্টুডেন্ট আইডি কার্ড থাকা লাগবে। স্টুডেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলার সুবিধা হল অন্য সব অ্যাকাউন্ট থেকে ব্যাংক চার্জ, ডেবিট কার্ড চার্জ অনেক কম। আপনি যদি স্টুডেন্ট হয়ে থাকেন তাহলে এই সুবিধাটা আপনি নিতে পারেন।   

ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য যেসব কাগজপত্র লাগবে

পূরণকৃত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফর্মঃ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলার প্রথম ধাপ হল আপনি যে ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলবেন সেই ব্যাংকের যে কোন ব্রাঞ্চ থেকে একটি ফর্ম নিয়ে আসতে হবে। এই ফর্মটি আপনি চাইলে ব্যাংকে বসে পূরণ করতে পারেন চাইলে বাসায় নিয়ে এসে পূরণ করে পরবর্তী কর্মদিবসে জমা দিতে পারেন। ফর্ম পূরণ করার সময় ভাল ভাবে পড়ে বুঝে শুনে পূরণ করবেন। আপনি যদি না বুঝেন কোন অংশটুকু আপনাকে পূরণ করতে হবে তাহলে ব্যাংকের যেখান থাকা কর্মরত ব্যাংক কর্মকর্তা বললে আপনাকে দেখিয়ে দিবে। ফর্ম আপনার নাম, ঠিকানা, জন্ম তারিখ সব কিছু আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র বা ন্যাশনাল আইডি কার্ড অনুযায়ী দিবেন।

স্পেসিমেন সিগনেচার কার্ডঃ অনেক ব্যাংক এটি একাউন্ট খোলার ফর্মের সাথে দিয়ে দেয়। এতে ব্যাংক অফিসারের সামনে একাউন্ট হোল্ডার স্বাক্ষর করবেন।

পরিচয়দানকারীঃ সাধারণত ঐ ব্যাংকের কোন গ্রাহক পরিচয়দানকারী হবেন। অর্থাৎ আপনি যে ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলবেন সেই ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট রয়েছে এমন ব্যাক্তি। আপনার পরিচিত আত্মীয়স্বজন, বন্ধু, ভাই যে কেউ হতে পারে। কারেন্ট একাউন্ট খুলতে হলে কেবল অন্য কোনো কারেন্ট একাউন্ট হোল্ডার গ্রাহক পরিচয়দানকারী হবেন। পরিচয়দানকারী একাউন্ট ফর্মের নির্ধরিত স্থানে নমুনা স্বাক্ষর, নাম, ঠিকানা, অ্যাকাউন্ট নম্বর ইত্যাদি লিখে দিতে হবে। বেশিরভাগ ব্যাংকেই এখন আর একাউন্ট খুলতে পরিচয়দানকারীর প্রয়োজন হয় না। আবার অনেক ব্যাংকে কর্মরত ব্যাংক কর্মকর্তারা সেটা পূরণ করে দেন।

নমিনীঃ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে একজন নমিনীর প্রয়োজন। নমিনী কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনার অবর্তমানে অর্থাৎ আপনি যদি মারা যান তাহলে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে একমাত্র নমিনী টাকা তুলতে পারবে। আপনার পরিবার তুলতে গেলেও নমিনীর ছবি এবং সাক্ষর লাগবে। তাই নমিনী দেয়ার সময় যাকে তাকে না দিয়ে আপনার পরিবারের কাউকে নমিনী দেয়ার চেষ্টা করবেন। হতে পারে আপনার বাবা, মা ভাই, বোন। আর যদি স্বামী অ্যাকাউন্ট খুলে স্ত্রী কে দিতে পারে আবার স্ত্রী স্বামী কে নমিনী দিতে পারে। অনেক ব্যাংক বাবা মা জীবিত থাকলে তাদেকে নমিনী দিতে সাপোর্ট করে থাকে।

সদ্য তুলা ছবিঃ একাউন্ট পরিচালনাকারী প্রত্যেক ব্যক্তির ২-৩ কপি করে পাসপোর্ট সাইজ ফটো লাগবে। ফটোগুলো সত্যায়িত হতে হবে। নমিনীর ১ কপি ছবি লাগবে যা হিসাব পরিচালনাকারী কর্তৃক সত্যায়িত হবে।

টাকা জমা দেয়াঃ সব কিছু পূরণ করে জমা দেয়ার সময় আপনাকে নির্ধরিত জমা স্লিপ পূরণ করে অ্যাকাউন্ট চালু করার জন্য টাকা জমা দিতে হবে। সঞ্চয়ী ও চলতি হিসাবের জন্য ব্যাংক ভেদে ১০০০ থেকে ৫০০০ টাকা লাগবে। ডিপিএস এর জন্য কিস্তি সমপরিমাণ ও এফডিআর এর জন্য এফডিআর সমপরিমাণ টাকা লাগবে। এই টাকা আপনার অ্যাকাউন্ট জমা থাকবে।

অন্যান্য কাগজপত্রঃ একাউন্ট পরিচালনাকারী প্রত্যেক ব্যক্তির পরিচয়পত্রের ফটোকপি লাগবে। এক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র ও কমিশনার/ মেয়র/ চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রদত্ত নাগরিক সনদ সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য। উক্ত পরিচয়পত্রের অনুপস্থিতিতে পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, জন্ম সনদ, চাকরি পরিচয়পত্র, স্টুডেন্ট আইডি কার্ড ইত্যাদি থেকে যেকোনো দুইটি উপস্থাপন করতে হবে।

প্রতিষ্ঠানের একাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত যা যা লাগবে

ব্যাক্তিগত অ্যাকাউন্ট এবং প্রাতিষ্ঠানিক অ্যাকাউন্ট এর মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে তাই যেকোন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম সাধারণত একটু ভিন্ন হয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানের একাউন্ট খোলার জন্য অতিরিক্ত কিছু কাগজ পত্র লাগবে। অতিরিক্ত যা যা লাগবেঃ

  1. প্রত্যেক একাউন্ট পরিচালনাকারীর নাম-পদবীসহ সিল
  2. ট্রেড লাইসেন্স।
  3. প্রতিষ্ঠানটি একক মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান না হলে রেজ্যুলেশন লাগবে যাতে থাকে নির্দিষ্ট ব্যাংকের নির্ধারিত শাখায় একাউন্ট খোলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত ও একাউন্টটি কে পরিচালনা করবে তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত। রেজ্যুলেশনে পর্ষদ/ বোর্ড/ গভর্নিং বডির সদস্যরা স্বাক্ষর করবেন।

উপরোক্ত কাগজপত্র ছাড়াও মাঝে মাঝে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন কাগজপত্র ও তথ্যাবলির প্রয়োজন পড়ে। যেমন পার্টনারশিপ ফর্ম, সমিতির গঠনতন্ত্র ও রেজিস্ট্রেশন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুমোদনপত্র, এনজিও ব্যুরো হতে লাইসেন্স, প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির জন্য সার্টিফিকেট অব ইনকর্পোরেশন, মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন, আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশন, পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির জন্য সার্টিফিকেট অব ইনকর্পোরেশন, মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন, আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশন, সার্টিফিকেট অব কমেন্সমেন্ট অব বিজনেস ইত্যাদি। তবে এই গুলো আপনার প্রতিষ্ঠান এবং অ্যাকাউন্ট এর ধরন অনুযায়ী লাগবে।

প্রথম বার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সময় যে জিনিসগুলা মাথায় রাখবেনঃ

  1. ব্যাংক ফর্ম এর সাথে দেয়া সকল কাগজের মূল কপি সাথে রাখবেন। যদিও মূল কপি দেয়া লাগবে না কিন্তু সাথে রাখবেন যদি ব্যাংক দেখতে চাই যেন দেখাতে পারেন।
  2. একাউন্ট খোলার দিন ও প্রথম বার চেক বই উঠানোর দিন আপনাকে অবশ্যই নিজে যেতে হবে।
  3. আপনার বর্তমান ঠিকানায় ব্যাংক থেকে চিঠি আসবে। অনেক ব্যাংক কার্ড বাসায় এসে দিয়ে যায়। তাই বর্তমান ঠিকানা দেয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ নজর রাখবেন। আর আপনি যদি কোন প্রতিষ্ঠানের আন্ডারে সেলারি অ্যাকাউন্ট খুলের তাহলে আপনার প্রতিষ্ঠানে পাঠাবে।
  4. চেক বই তোলার জন্য ওই দিনই নিধারিত ফর্মে আবেদন করবেন।
  5. জমা স্লিপ ও হিসাব নাম্বার সংরক্ষণ করুন।
  6. ব্যাংকের ডাটাবেজে আপনার নামের বানান সঠিকভাবে তোলা হয়েছে কিনা চেক করে নিন। নামের ভুল হলে টাকা জমা হতে এবং তুলতে অনেক সমস্যা হতে পারে।
  7. ডেবিট কার্ড নেয়ার জন্য আলাদাভাবে আবেদনের প্রয়োজন থাকলে করে নিন।
  8. ফর্ম পূরণের সময় যে সাক্ষর দিয়েছেন সেটা অবশ্যই মনে রাখবেন। পরবর্তীতে সাক্ষর না মিললে আপনি টাকা তুলতে পারবেন না।

আশা করি এই আর্টিকেলটি পড়ার পর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা নিয়ে আপনার মনে যে ভয় ছিল সেটা দূর গিয়েছে। আপনি চাইলে এখন যেকোন সময় আপনার পছন্দের ব্যাংকে গিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলাতে পারবেন। তবে আপনি যদি অনলাইনে বিজনেস করেন বা ফ্রিল্যান্সিং পেশার সাথে জড়িত থাকেন তাহলে আপনার মাস্টারকার্ড প্রয়োজন হতে পারে। মাস্টারকার্ড কি? বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের জন্য ৩টি জনপ্রিয় কার্ড এই সম্পর্কে আমাদের একটি বিস্তারিতভাবে লিখা ব্লগ + ভিডিও রয়েছে। যেখানে মাস্টারকার্ড কি এবং কিভাবে এই মাস্টারকার্ড হাতে পাবেন এইসব ব্যাপারে কমপ্লিট গাইডলাইন পেয়ে যাবেন।

Leave a Reply