Blog

Local SEO কি? লোকাল এসইও কেন এবং কিভাবে করবেন?

লোকাল মার্কেটের রাজা হতে চান? তাহলে শুধু ভালো সার্ভিস নয় গুগলে আপনার উপস্থিতিও নিশ্চিত করতে হবে। আপনার দোকান গুগলে খুঁজে পাচ্ছে না কাস্টমার? তাহলে আপনি প্রতিদিন সম্ভাব্য শত শত ক্রেতা হারাচ্ছেন, জানতেন? বর্তমান সময়ে মানুষ কিছু খুঁজতে প্রথমেই গুগলে যায়। আপনি যদি আপনার ব্যবসা, দোকান বা সার্ভিসকে স্থানীয় কাস্টমারদের কাছে তুলে ধরতে চান, তাহলে লোকাল এসইও (Local SEO) হচ্ছে আপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ডিজিটাল অস্ত্র। বর্তমান সময়ে ব্যবসা শুধু অনলাইন থাকা নয় লোকাল পর্যায়ে গ্রাহকদের নজরে আসাটাও একান্ত জরুরি। এই ব্লগে আপনি জানতে পারবেন লোকাল এসইও আসলে কী, কেন এটি আপনার ব্যবসার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং কীভাবে ধাপে ধাপে আপনি এটি করতে পারেন একদম ফ্রি বা অল্প খরচে।

লোকাল এসইও (Local SEO) কি?

লোকাল এসইও (Local SEO) হলো সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের (SEO) একটি বিশেষ শাখা, যার মাধ্যমে আপনার ব্যবসা বা সার্ভিসকে নির্দিষ্ট লোকেশনভিত্তিক মানুষের সামনে তুলে ধরা হয়। সহজ করে বললে, লোকাল এসইও এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে আপনি নিশ্চিত করতে পারেন যে আপনার দোকান, অফিস বা সার্ভিস যেসব মানুষ আপনার এলাকার আশেপাশে থেকে গুগলে খুঁজছে তারা যেন আপনার ব্যবসাটাই আগে দেখে। উদাহরণস্বরূপ, কেউ যদি গুগলে লিখে “মিরপুরে মোবাইল সার্ভিসিং সেন্টার” বা “চট্টগ্রামে কফি শপ”, তাহলে গুগল সেই এলাকার ব্যবসাগুলোকে প্রথম দেখায়। এই প্রক্রিয়ায় যারা ভালো লোকাল এসইও করেছে, তাদের নাম-ঠিকানা-রিভিউসহ টপ রেজাল্টে দেখা যায়।

লোকাল এসইও সাধারণ এসইও থেকে কিছুটা আলাদা। সাধারণ এসইও হলো জাতীয় বা আন্তর্জাতিক স্তরে র‍্যাংক করার কৌশল, যেখানে আপনি সারা বাংলাদেশ বা গ্লোবালি ভিজিটর টার্গেট করেন। কিন্তু লোকাল এসইও শুধুমাত্র আপনার শহর, থানা বা এলাকার মানুষদের টার্গেট করে কাজ করে। এতে আপনি নিজের ব্যবসাকে গুগলের “Local Pack” বা “Map Listings”-এ তুলে আনতে পারেন। এই Local Pack গুলা গুগল সার্চের একেবারে উপরের দিকে আসে, যেখানে দোকানের নাম, লোকেশন, রিভিউ ও ফোন নম্বরসহ সরাসরি কল করার অপশন থাকে।

লোকাল এসইও-র সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে Google My Business (বর্তমানে Google Business Profile নামে পরিচিত)। এই প্ল্যাটফর্মে আপনি ফ্রি-তেই আপনার বিজনেস প্রোফাইল তৈরি করে গুগলে নিজেকে উপস্থিত করতে পারেন। আর এটিকে নিয়মিত আপডেট করে, রিভিউ সংগ্রহ করে, ও সঠিক তথ্য দিয়ে Google-এ ভালো র‍্যাংক পাওয়া যায়। আজকের দিনে যেখানে ৮০% এর বেশি মানুষ মোবাইলে লোকাল সার্চ করে “near me” টাইপ কীওয়ার্ড ব্যবহার করে, সেখানে লোকাল এসইও না করা মানে হচ্ছে সম্ভাব্য কাস্টমারকে প্রতিযোগীর হাতে তুলে দেওয়া। আপনি হয়তো অনেক ভালো সার্ভিস দিচ্ছেন কিন্তু যদি গুগলে আপনার নাম না আসে, তাহলে কেউ জানবেই না। তাই, আপনার ব্যবসা যদি কোনো নির্দিষ্ট লোকেশনে হয়, তাহলে লোকাল এসইও হচ্ছে আপনার ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের সবচেয়ে দরকারি হাতিয়ার।

লোকাল এসইও কেন গুরুত্বপূর্ণ?

লোকাল এসইও শুধুমাত্র গুগলে র‍্যাংক পাওয়ার কৌশল নয় এটি এখন লোকাল ব্যবসা টিকিয়ে রাখার একমাত্র উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান সময়ের গ্রাহকরা যখন কোনো পণ্য বা সার্ভিসের প্রয়োজন বোধ করে, তখন তারা প্রথমেই গুগলে সার্চ করে, আমার কাছে ক্লিনার সার্ভিস, বাসার কাছে কেকের দোকান। এই লোকেশন নির্ভর সার্চগুলোই বলে দেয় মানুষ এখন দ্রুত, নির্ভরযোগ্য এবং কাছাকাছি ব্যবসা খুঁজতে চায়। আর এখানেই লোকাল এসইও এর ভূমিকা বিশাল। নিচে ৬টি গুরুত্বপূর্ণ কারণে ব্যাখ্যা করছি কেন লোকাল এসইও আজকের দিনে অতি জরুরি হয়ে উঠেছে

১) মোবাইল ব্যবহারকারীদের ৮০% এখন লোকাল সার্চ করে

আজকের দিনে মানুষ যখন কোনো প্রোডাক্ট বা সার্ভিস খোঁজে, তখন তারা গুগলে “near me” বা “আমার কাছাকাছি” লিখে খোঁজে। যেমন  “nearby pharmacy”, “বনানীতে কফি শপ”, “নারায়ণগঞ্জে কুরিয়ার সার্ভিস”। এই টাইপের সার্চ প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ হচ্ছে, এবং গুগল ঠিক সেই লোকেশনের আশেপাশের ব্যবসাগুলোকেই আগে দেখায় যেগুলো লোকাল এসইও করেছে। আপনি যদি একজন দোকান মালিক, সার্ভিস প্রোভাইডার বা লোকাল উদ্যোক্তা হয়ে থাকেন, তাহলে এই বিশাল সংখ্যক সম্ভাব্য কাস্টমার আপনার কাছেই আসতে পারত কিন্তু আপনি লোকাল এসইও না করলে তারা যাচ্ছে আপনার প্রতিযোগীর কাছে। তাই লোকাল সার্চ এখন সাধারণ অভ্যাস আর আপনার ব্যবসা তাতে না থাকলে আপনি দিনে দিনে পিছিয়ে পড়বেন।

২) গুগলের প্রথম পেইজে ফ্রি তে র‍্যাংক পাওয়া যায়

লোকাল এসইও করার অন্যতম বড় সুবিধা হলো  আপনি পেইড বিজ্ঞাপন ছাড়াই গুগলের প্রথম পেজে স্থান পেতে পারেন। বিশেষ করে, Google “Local 3-Pack” যেটা গুগলে লোকাল সার্চের সময় প্রথমেই আসে। সেখানে যদি আপনার ব্যবসা উঠে আসে, তাহলে তা দেখে কাস্টমার সরাসরি আপনার লোকেশন, ফোন নম্বর, সময়, রিভিউ সবকিছু দেখে নিতে পারে এবং সরাসরি আপনাকে ফোন করতে পারে। এটি একপ্রকার ফ্রি বিজ্ঞাপন যেখানে আপনি একবার ভালোভাবে প্রোফাইল তৈরি করলে আর নতুনভাবে খরচ করতে হয় না। অনেক ব্যবসা শুধু Google My Business প্রোফাইল অপটিমাইজ করেই দৈনিক ১০–১৫ টা কল পেয়ে থাকে, কোনো এড ছাড়াই!

local seo in bangla

৩) কাস্টমার রেডি থাকে তাই কনভার্সন রেট বেশি

লোকাল সার্চ যারা করে তারা সাধারণত ইতোমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে যে তারা কিছু একটা কিনবে বা কোনো সার্ভিস নিবে তারা শুধু খুঁজছে সঠিক জায়গা। তাই আপনি যদি গুগলে আগে উঠে আসেন, তারা আপনাকেই বেছে নিবে। উদাহরণস্বরূপ, কেউ যদি গুগলে লিখে “মিরপুরে হেয়ার কাট সেলুন”, তাহলে ধরে নেওয়া যায়, সে আজকেই সেলুনে যাবে। এখন আপনার সেলুন যদি লোকাল এসইও না করা থাকে তাহলে সে চলে যাবে যে সেলুনের প্রোফাইল গুগলে দেখা যাচ্ছে। এর মানে লোকাল সার্চ থেকে আসা ইউজারদের ক্রয় করার প্রবণতা অনেক বেশি, তাই আপনার conversion rate অনেক বেড়ে যায় লোকাল এসইও করলে।

৪) ব্যবসার প্রতি বিশ্বাস তৈরি হয়

গুগলে আপনি যত ভালো রিভিউ পাবেন, যত বেশি লোক আপনার প্রোফাইল দেখবে, তত বেশি বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি হবে। কাস্টমাররা এখন শুধু নাম বা দাম দেখে সিদ্ধান্ত নেয় না they want proof. গুগলে যদি কেউ দেখে আপনার ৪.৫ স্টার রেটিং, অনেক পজিটিভ রিভিউ, সুন্দর ছবি আর লোকেশন ম্যাপে ঠিকভাবে আছে তাহলে সে স্বাভাবিকভাবেই ভাববে, এটাই ভালো দোকান বা সার্ভিস। এই বিশ্বাস একদিনে তৈরি হয় না, কিন্তু লোকাল এসইও নিয়মিত করলে ধীরে ধীরে তা গড়ে ওঠে। এটা আপনার ব্র্যান্ড ভ্যালু বাড়ায় এবং লোকাল মার্কেটে আপনাকে প্রতিষ্ঠিত করে।

৫) কম খরচে দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল পাওয়া যায়

বড় বড় মার্কেটিং ক্যাম্পেইনে প্রচুর টাকা লাগে, কিন্তু লোকাল এসইও আপনি নিজেই শুরু করতে পারেন একদম ফ্রিতে Google Business Profile খোলা, কিছু ভালো ছবি আপলোড করা, কাস্টমারদের রিভিউ চাওয়া, পোস্ট করা—এসব কাজের জন্য কোনো টাকা লাগে না, শুধু সময় আর পরিকল্পনা লাগে। আর একবার ঠিকভাবে করা হলে এর প্রভাব ৬ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত থাকতে পারে। আপনি যেসব ইউজারকে ফেসবুক বা গুগল অ্যাড দিয়ে টার্গেট করতে চান, তারা লোকাল এসইও’র মাধ্যমে অর্গানিকভাবেই আপনার কাছে চলে আসবে। এটি একধরনের “Long-Term Investment” যা কম খরচে ব্যবসাকে অনেক দূর এগিয়ে নেয়।

৬) প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে লোকাল এসইও করতেই হবে

আজকের প্রতিযোগিতামূলক বাজারে কাস্টমার কার হবে, সেটা ঠিক করে দিচ্ছে গুগল সার্চ! আপনি যত ভালো সার্ভিস বা পণ্য দিন না কেন, যদি কাস্টমার আপনাকে খুঁজেই না পায়, তাহলে তারা কীভাবে আপনার কাছে আসবে? আজকাল প্রায় প্রতিটি দোকান, ক্লিনিক, অফিস এমনকি রেস্টুরেন্টও Google এ প্রোফাইল করে ফেলেছে। আপনি যদি এই প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে থাকেন, তাহলে অন্যরা সহজেই আপনার কাস্টমার দখল করে নিবে। তাই এখন সময় নিজের অবস্থান তৈরি করার গুগলে আপনার প্রোফাইল তৈরি করে, ঠিকভাবে লোকাল এসইও করে আপনাকেও এই দৌড়ে এগিয়ে আসতে হবে।

কিভাবে শিখবেন লোকাল এসইও? 

লোকাল এসইও শেখা আসলে এখন আগের চেয়ে অনেক সহজ, কিন্তু বিষয়গুলো বুঝে বুঝে শেখা জরুরি। আপনি যদি লোকাল এসইও-তে দক্ষ হতে চান তাহলে প্রথমে আপনাকে এর বেসিক ধারণা বুঝতে হবে যেমন, কীওয়ার্ড রিসার্চ, গুগল মাই বিজনেস অপ্টিমাইজেশন, লোকাল সাইটেশন, অনলাইন রিভিউ ম্যানেজমেন্ট, এবং কনটেন্ট স্ট্র্যাটেজি। এরপর ধাপে ধাপে আপনাকে এসব স্কিল প্র্যাকটিস করতে হবে। এই স্কিল গুলো আপনি চাইলে নিজে ইউটিউব বা ব্লগ থেকে শিখতে পারেন, তবে সেখানে অনেক সময় ভুল বা অসম্পূর্ণ তথ্য থেকে বিভ্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই আপনি যদি সময় বাঁচাতে এবং একটি সঠিক রোডম্যাপ অনুসরণ করে প্রফেশনালি শিখতে চান, তাহলে MSB Academy এর High-Demand Skills with Client Hunting কোর্সটি আপনার জন্য গাইডলাইন হিসেবে কাজ করবে।

এই কোর্সে শুধু লোকাল এসইও নয়, বরং আরও অনেক হাই-ডিমান্ড স্কিল যেমন;ডিজিটাল মার্কেটিং, ক্লায়েন্ট হান্টিং, ফাইভার/আপওয়ার্ক স্ট্র্যাটেজি সহ একদম জিরো থেকে শেখানো হয়। আপনি যদি লোকাল মার্কেটিং বা ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে আয় করতে চান বা নিজের বিজনেস স্কেল করতে চান, এই কোর্স আপনার জন্য পারফেক্ট একটি কোর্স হবে।

কিভাবে করবেন লোকাল এসইও? 

১) Google My Business (GMB) 

বর্তমানে কেউ যদি আপনার দোকান, রেস্টুরেন্ট, সার্ভিস বা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানতে চায়, তারা সরাসরি গুগলে সার্চ করে। এই সময়ে যদি আপনি Google My Business (GMB)-এ না থাকেন, তাহলে আপনি নিজ হাতে নিজের সম্ভাব্য কাস্টমার হারাচ্ছেন। GMB হচ্ছে গুগলের একটি ফ্রি টুল, যা আপনার ব্যবসাকে Google Search এবং Google Maps-এ দৃশ্যমান করে তোলে। ধরুন, কেউ সার্চ করল “মিরপুরে কেকের দোকান”, তখন গুগল প্রথমে যেসব দোকান দেখায়, সেগুলো হলো যারা GMB তে প্রোফাইল তৈরি করেছে এবং সেটাকে নিয়মিত আপডেট করছে।

Google My Business (GMB) কিভাবে অপ্টিমাইজ করবেন?

১) ব্যবসার সঠিক তথ্য পূরণ করুন (NAP): Google My Business একাউন্টে আপনার ব্যবসার নাম, ঠিকানা (Address), ফোন নম্বর (Phone Number) এবং ওয়েবসাইট লিংক একদম সঠিকভাবে দিতে হবে। এই তথ্যগুলো যেন আপনার ওয়েবসাইট এবং অন্যান্য লোকাল সাইটেশনের সাথে ১০০% মিল থাকে। যেকোনো বানান ভুল বা নম্বর ভুল Google-এর চোখে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

২) ঠিক ক্যাটাগরি বাছাই করুন: আপনার ব্যবসা যে সেক্টরের, সেই অনুযায়ী একটি প্রধান ক্যাটাগরি এবং ১–২টি অতিরিক্ত ক্যাটাগরি নির্বাচন করুন। যেমন, আপনি যদি “ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি” হন, তাহলে “Marketing agency” প্রধান ক্যাটাগরি দিন এবং “Internet marketing service”, “Advertising agency” এর মতো উপযুক্ত ক্যাটাগরি দিন।

৩) ব্যবসার সময়সূচী (Business Hours) নির্ধারণ করুন: আপনার অফিস বা সার্ভিস চালু থাকার নির্দিষ্ট সময়গুলো দিয়ে দিন। ছুটির দিন, বিশেষ দিন বা উৎসবের সময় আলাদা সময়সূচী থাকলে সেটাও আলাদাভাবে আপডেট করুন। এতে করে গ্রাহকরা সঠিক সময়ে আপনার সার্ভিস পাবে।

৪) হাই-কোয়ালিটি ছবি ও ভিডিও যুক্ত করুন: আপনার অফিস, সার্ভিস, পণ্য বা টিমের ছবি Google My Business-এ যুক্ত করুন। ভালো মানের ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করলে ইউজারদের আকর্ষণ বাড়ে এবং বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি হয়। পাশাপাশি লোকাল SEO-তেও এটি পজিটিভ প্রভাব ফেলে।

৫) নিয়মিত পোস্ট করুন (Google Posts): GMB-এ আপনি ছোট ব্লগ বা আপডেট পোস্ট করতে পারেন। নতুন অফার, ব্লগ লিংক, ইভেন্ট বা সার্ভিস আপডেট এখানে নিয়মিত পোস্ট করুন। এটি আপনার প্রোফাইলকে “Active” রাখে এবং গুগল আপনাকে আরও রেঙ্ক করায়।

৬) কাস্টমার রিভিউ সংগ্রহ ও রিপ্লাই দিন: খুশি গ্রাহকদের কাছ থেকে রিভিউ চেয়ে নিন। ভালো রিভিউ যত বেশি থাকবে, Google তত বেশি আপনাকে বিশ্বস্ত মনে করবে। তবে শুধু রিভিউ চাওয়া নয় – সব রিভিউয়ের রিপ্লাই দিন, সেটা ভালো হোক বা খারাপ। এতে আপনার ব্র্যান্ডের পেশাদারিত্ব বোঝায়।

৭) Q&A সেকশন অপ্টিমাইজ করুন: Google My Business-এ “Questions and Answers” নামে একটি সেকশন থাকে। এখানে আপনি নিজেই গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন করে সেগুলোর উত্তর দিয়ে রাখতে পারেন, যাতে ইউজারদের সাধারণ জিজ্ঞাসার উত্তর আগেই পেয়ে যায়। এটি কাস্টমারদের জন্য অনেক হেল্পফুল হয়।

৮) GMB ইনসাইটস নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করুন: Google আপনাকে দেখাবে—কতজন মানুষ আপনার প্রোফাইল দেখেছে, কী কী সার্চ করে আপনার ব্যবসা পেয়েছে, কারা কল করেছে, কারা ম্যাপে আপনার লোকেশন চেক করেছে ইত্যাদি। এই তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে বুঝতে পারবেন কোন দিকে মনোযোগ বাড়ানো দরকার।

একটি ভালোভাবে সাজানো এবং রেগুলার আপডেটেড GMB প্রোফাইল আপনার ব্যবসাকে প্রতিযোগীদের থেকে এগিয়ে রাখে। বিশেষ করে যেসব বিজনেস লোকাল মার্কেট লক্ষ্য করে, তাদের জন্য GMB ছাড়া লোকাল এসইও ভাবাই যায় না। আপনি যদি সত্যিই ব্যবসা বাড়াতে চান, তাহলে আজই GMB খুলুন, ভেরিফাই করুন এবং আপডেট রাখা শুরু করুন।

২) লোকাল সাইটেশন (Local Citation)

লোকাল সাইটেশন (Local Citation) বলতে বোঝায় আপনার ব্যবসার নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর (NAP – Name, Address, Phone Number) ইন্টারনেটের বিভিন্ন ওয়েবসাইট, ডিরেক্টরি বা সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে প্রকাশ করা। এটি লোকাল SEO-র অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ, যা আপনার ব্যবসাকে স্থানীয়ভাবে গুগলে র‍্যাঙ্ক করতে সহায়তা করে। উদাহরণস্বরূপ, আপনার প্রতিষ্ঠানের বা বিজনেস এর নাম যদি MSB Academy হয়, তাহলে “MSB Academy, Dakkhin Bonoshri, Dhaka – 017XXXXXXXX” এই তথ্য যদি বিভিন্ন লোকাল ডিরেক্টরি যেমন: Google My Business, Yelp, Foursquare, Bangladeshi Business Listing সাইট এ পাওয়া যায়, তবে গুগল ধরে নেয় যে এই ব্যবসাটি সত্যিই আছে এবং সক্রিয় রয়েছে।

কিভাবে লোকাল সাইটেশন করবেন?

১) প্রথমে আপনার ব্যবসার সঠিক তথ্য তৈরি করুন (NAP): লোকাল সাইটেশন করতে হলে প্রথম ধাপে আপনাকে আপনার ব্যবসার NAP Name (নাম), Address (ঠিকানা), এবং Phone Number (ফোন নম্বর) এই তিনটি তথ্য পরিষ্কারভাবে ঠিক করতে হবে। চেষ্টা করুন যেন প্রতিটি প্ল্যাটফর্মে ঠিক একইভাবে তথ্য ব্যবহার হয়। যেমন, “MSB Academy, Dhanmondi 27, Dhaka – 01712XXXXXX” এই তথ্য যেন Google, Facebook, Bing এবং অন্য সব সাইটে হুবহু এক হয়। গুগল অনেক সময় নামের ছোটখাটো পার্থক্য (যেমন: “MSB Acad.” vs “MSB Academy”) কনফিউশনে পড়ে, তাই একরকম রাখাটা খুব জরুরি।

২) নির্ভরযোগ্য লোকাল ডিরেক্টরি বেছে নিন: লোকাল সাইটেশন করার জন্য আপনাকে নির্ভরযোগ্য কিছু ডিরেক্টরি বেছে নিতে হবে। আন্তর্জাতিক এবং স্থানীয় উভয় ধরনের সাইটে আপনার ব্যবসার তথ্য লিস্ট করা উচিত। যেমন:

Google My Business (GMB), Bing Places, Yelp, Foursquare, Justdial BD, Bangladesh Local Business Directory, Facebook Page, LinkedIn Business Page এছাড়াও কিছু বড় ডিরেক্টরি আছে যেখানে গিয়ে আপনি আপনার ব্যবসার নাম ও তথ্য ফ্রি-তে জমা দিতে পারেন।

৩) প্রতিটি ডিরেক্টরিতে প্রোফাইল খুলে পুরো তথ্য দিন: যে ডিরেক্টরি বা সাইটে আপনি সাইটেশন করবেন, সেখানে আপনার ব্যবসার জন্য একটি প্রোফাইল খুলুন। এরপর সেখানে আপনার নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর, ইমেইল, ওয়েবসাইট (যদি থাকে), ব্যবসার সময়সূচি, সার্ভিস/প্রোডাক্টের বিস্তারিত বিবরণ ও কিছু হাই-রেজোলিউশনের ছবি যোগ করুন। যত তথ্য আপনি দিবেন, গুগল তত বেশি আপনার ব্যবসাকে বিশ্বাসযোগ্য মনে করবে।

৪)  একসাথে সব সাইটে তথ্য সাবমিট করার পর ট্র্যাক রাখুন: সাইটেশন করা মানে শুধু একবার তথ্য দিয়ে ফেলা না। আপনি কোন কোন সাইটে তথ্য দিয়েছেন, তার একটি তালিকা (যেমন Excel শিট) করে রাখুন। ভবিষ্যতে যদি ফোন নম্বর, ঠিকানা বা সময়সূচি পরিবর্তন করতে হয়, তাহলে ওই তালিকাটি দেখে সহজেই সব সাইটে আপডেট করতে পারবেন। অনেক সময় ব্যবসা ডেভেলপ হলে লোকেশন বা নাম চেঞ্জ হয় তখন এই তথ্য মেইনটেইন করাটা খুব দরকার।

৬) নিয়মিত তথ্য আপডেট করুন ও রিভিউ নিন: আপনার ব্যবসা যদি দিনে দিনে বাড়ে বা পরিবর্তন হয়, তাহলে অবশ্যই লোকাল সাইটেশন গুলোর তথ্য আপডেট করুন। এছাড়াও, কাস্টমারদের কাছ থেকে গুগল রিভিউ নেয়ার চেষ্টা করুন, কারণ লোকাল SEO-তে রিভিউ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

৩) অনলাইন রিভিউ –লোকাল SEO তে এক অদৃশ্য শক্তি!

লোকাল SEO-র ক্ষেত্রে অনলাইন রিভিউ হচ্ছে এমন এক শক্তিশালী মাধ্যম, যেটি আপনার ব্যবসার প্রতি মানুষের বিশ্বাস তৈরি করে। আপনি যখন গুগল ম্যাপে বা সার্চে কোনো দোকান বা সার্ভিস সার্চ করেন, তখন আপনি নিশ্চয়ই প্রথমে তার রেটিং দেখেন ৪.৮ স্টার, ২০০+ রিভিউ” টাইপের কিছু, তাই তো? ঠিক এভাবেই আপনার সম্ভাব্য কাস্টমাররাও আগে রিভিউ দেখে সিদ্ধান্ত নেয়, আপনি বিশ্বাসযোগ্য কিনা। সুতরাং, গুগল বা ফেসবুক পেজে আপনার ব্যবসার পজিটিভ রিভিউ থাকাটা শুধু ভালো না বরং অপরিহার্য।

রিভিউ শুধু বিশ্বাস তৈরি করে না, বরং গুগলের চোখেও আপনাকে প্রাসঙ্গিক ও জনপ্রিয় করে তোলে। যত বেশি রিভিউ, তত বেশি ইনগেজমেন্ট আর এই ইনগেজমেন্ট গুগলকে বলে দেয়, “এই ব্যবসাটি সক্রিয় এবং কাস্টমারদের পছন্দের।” বিশেষ করে যারা লোকাল সার্চ করে, যেমন “মিরপুরে ভালো লন্ড্রি সার্ভিস”, তারা GMB-তে রেটিং ও রিভিউ দেখেই সিদ্ধান্ত নেয়। তাই আপনার কাস্টমারদের কাছে রিভিউ চাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

তবে খেয়াল রাখবেন রিভিউ যেন অরগানিক হয় এবং বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়। কৃত্রিম বা ভুয়া রিভিউ দিলে গুগল সেটি ধরতে পারে এবং তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। আপনি চাইলে অর্ডার বা সার্ভিস শেষ হলে কাস্টমারকে ছোট করে বলতে পারেন, “আমাদের Google বা Facebook পেজে রিভিউ দিলে আমরা খুশি হবো” এইটুকু বললেই অনেকেই রিভিউ দিয়ে দেয়। এছাড়া রিভিউয়ে কীওয়ার্ড ব্যবহার হলে, যেমন “এই লন্ড্রি সার্ভিস মিরপুরে সেরা”, তাহলে সেটি SEO তে আরও ভালো র‍্যাঙ্ক পেতে সাহায্য করে।

৪) লোকাল কীওয়ার্ড রিসার্চ এবং সঠিক ব্যবহার

লোকাল এসইও-তে সাফল্য পেতে চাইলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর একটি হলো সঠিক লোকাল কীওয়ার্ড রিসার্চ। আপনি যদি জানেনই না আপনার এলাকার মানুষ কী কী শব্দ দিয়ে সার্চ করে, তাহলে আপনি কীভাবে সঠিক কনটেন্ট বানাবেন বা গুগলে ভালো র‍্যাংক করবেন? তাই বলা যায় লোকাল এসইওর মূল চাবিকাঠি হলো সঠিক লোকাল কীওয়ার্ড চিহ্নিত করা এবং তা কনটেন্টে সঠিকভাবে ব্যবহার করা। সাধারণ কীওয়ার্ড ব্যবহার করে আপনি জাতীয় বা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ঢুকে যাচ্ছেন। কিন্তু আপনার এলাকার মানুষ ঠিক কোন শব্দ দিয়ে সার্চ করছে, সেটি ব্যবহার করলে আপনার বিজনেস অনেক সহজে লোকাল সার্চে শীর্ষে উঠে আসতে পারে।

কীভাবে লোকাল কীওয়ার্ড কাজ করে? একটু উদাহরণ দেয় তাহলে বুঝতে পারবেন। ধরুন, আপনি “ফটোগ্রাফি সার্ভিস” অফার করেন। যদি আপনি শুধু “photography service” লেখেন, তাহলে আপনি দেশের সবার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছেন। কিন্তু আপনি যদি লেখেন: “গাজীপুর ফটোগ্রাফি সার্ভিস” “চট্টগ্রামে বিয়ের ছবি তোলার সেরা লোক” “উত্তরা প্রফেশনাল ফটো স্টুডিও” তাহলে আপনি গুগলে নির্দিষ্ট এলাকার কাস্টমারদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছেন। এটি কেবল বেশি ট্রাফিকই আনে না, বরং প্রাসঙ্গিক ও সম্ভাব্য কাস্টমার এনে দেয় যারা সত্যিই আপনার সার্ভিস নিতে চায়।

কীভাবে লোকাল কীওয়ার্ড রিসার্চ করবেন?

লোকাল কীওয়ার্ড রিসার্চ করতে পারেন নিচের টুলস ব্যবহার করে:

  • Google Autocomplete – গুগলে কিছু লিখলেই যে সাজেশন দেয়, সেগুলোই বাস্তব লোকাল সার্চ টার্ম।
  • Google Keyword Planner – এলাকার নামসহ কীওয়ার্ড সার্চ দিন।
  • Google Trends – কোন এলাকার মানুষ কী সার্চ করছে, দেখুন।
  • Ubersuggest বা Answer the Public – ফ্রি টুলস দিয়ে লোকাল কিওয়ার্ড আইডিয়া পেতে পারেন।

কোথায় ব্যবহার করবেন লোকাল কীওয়ার্ড?

  • Google My Business এর বর্ণনা, সার্ভিস, ক্যাটেগরিতে
  • ওয়েবসাইটের হেডিং, প্যারাগ্রাফ, টাইটেল, ইউআরএল, মেটা ট্যাগ
  • ব্লগ পোস্ট, সার্ভিস পেজ ও FAQs তে
  • সোশ্যাল মিডিয়া বা লোকাল কনটেন্ট মার্কেটিং ক্যাম্পেইনেও

৫) লোকাল কনটেন্ট তৈরি করুন 

লোকাল কনটেন্ট অর্থ হচ্ছে এমন ধরনের লেখা, ভিডিও, ছবি বা পোস্ট – যেটি নির্দিষ্ট একটি এলাকার মানুষের দরকার বা আগ্রহের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়। এই ধরনের কনটেন্টে আপনি আপনার ব্যবসার লোকেশন, আশেপাশের এলাকা, স্থানীয় সমস্যা, উৎসব, কিংবা স্থানীয় মানুষদের গল্প নিয়ে কনটেন্ট তৈরি করতে পারেন। যেমন: আপনি যদি সিলেটে একটি কেকের দোকান চালান, তাহলে “সিলেটে বিয়ের কেক অর্ডার করার সেরা জায়গা” এই জাতীয় টাইটেলে কনটেন্ট তৈরি করলে তা শুধু স্থানীয় মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে না, বরং গুগলেও আপনার কনটেন্ট লোকালভাবে র‍্যাংক করবে।

লোকাল কনটেন্ট SEO-এর জন্য দারুণ উপকারী, কারণ এটি নির্দিষ্ট লোকেশনের কীওয়ার্ডে ফোকাস করে। যখন কেউ “মিরপুরে বাচ্চাদের জন্য ইংলিশ কোচিং” বা “খুলনায় সস্তায় মোবাইল সার্ভিসিং” লিখে সার্চ করে তখন গুগল এমন কনটেন্টকেই প্রাধান্য দেয় যেটি লোকাল প্রাসঙ্গিক। তাই আপনি আপনার ব্যবসার ওয়েবসাইট, ব্লগ, কিংবা Facebook পেজে স্থানীয় ভাষা, এলাকা এবং সমস্যাকে কেন্দ্র করে কনটেন্ট বানালে তা SEO এবং কাস্টমার এনগেজমেন্ট দুইদিক থেকেই উপকারী হবে।

কিভাবে লোকাল কনটেন্ট তৈরি করবেন?

  • লোকেশন ফোকাস করুন: কনটেন্টে নির্দিষ্ট এলাকার নাম যুক্ত করুন যেমন উত্তরা, কুমিল্লা, রাজশাহী ইত্যাদি।
  • লোকাল মানুষকে নিয়ে গল্প বলুন: আপনার কাস্টমারদের অভিজ্ঞতা, রিভিউ, ছবি বা ভিডিও ব্যবহার করুন।
  • লোকাল ইভেন্ট কভার করুন: এলাকার কোন উৎসব, ক্যাম্পেইন বা ছাড়ের অফার থাকলে তা নিয়ে পোস্ট করুন।
  • লোকাল কীওয়ার্ড ব্যবহার করুন: যেমন “নারায়ণগঞ্জে গার্মেন্টস মেশিন সার্ভিস”, “চট্টগ্রামে মেকআপ আর্টিস্ট”।
  • লোকেশন ম্যাপ বা Google Map লিংক যুক্ত করুন: এতে করে গুগল বুঝতে পারবে আপনি কোন লোকেশন টার্গেট করছেন।

৬) লোকাল এসইওতে সোশ্যাল মিডিয়ার গুরুত্ব 

লোকাল এসইও শুধু সার্চ ইঞ্জিনে র‍্যাংক করার বিষয় নয়, বরং এটি একটি সামগ্রিক ডিজিটাল উপস্থিতি তৈরি করার কৌশল। আর এই উপস্থিতি তৈরি করতে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম যেমন ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব, লিংকডইন ইত্যাদির ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যখন আপনি নিয়মিতভাবে আপনার ব্যবসার পোস্ট, অফার, কাস্টমার রিভিউ কিংবা লোকাল কনটেন্ট শেয়ার করেন তখন শুধু আপনার ফলোয়াররাই নয়, গুগলও বুঝতে পারে আপনি একটি একটিভ এবং বিশ্বাসযোগ্য লোকাল ব্র্যান্ড। গুগল যখন দেখে আপনার ব্র্যান্ড সম্পর্কে সোশ্যাল মিডিয়াতে ভালো এনগেজমেন্ট, লোকেশন ট্যাগ, এবং কাস্টমার রিভিউ আছে, তখন এটি আপনার Google My Business বা ওয়েবসাইটকেও লোকাল সার্চ রেজাল্টে এগিয়ে রাখে।

উদাহরণ হিসেবে ধরুন আপনি চট্টগ্রামে একটি কফি শপ চালান এবং নিয়মিতভাবে আপনার ফেসবুক পেজে “Chattogram Best Coffee” বা “GEC মোড়ে সেরা কফি” জাতীয় হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে পোস্ট দেন। সেই পোস্টগুলোতে চট্টগ্রামের লোকজন কমেন্ট, রিভিউ বা চেক-ইন করে তখন গুগল ধরে নেয় আপনার ব্যবসা ওই লোকেশনের জন্য জনপ্রিয় এবং ভিজিবল। এতে করে কেউ যখন “চট্টগ্রামে কফি শপ” সার্চ করে, তখন আপনার GMB প্রোফাইল, ওয়েবসাইট বা ফেসবুক পেজ লোকাল রেজাল্টে শো করতে পারে।

সোশ্যাল মিডিয়া মানেই শুধু প্রচার নয়, বরং লোকাল এনগেজমেন্টের মাধ্যমে লোকাল এসইও শক্তিশালী করা এটাই এখনকার বাস্তবতা। তাই ফেসবুক বা অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করার সময় লোকেশন ব্যবহার, রিভিউ সংগ্রহ, লোকাল হ্যাশট্যাগ এবং কাস্টমারদের ট্যাগ করার বিষয়গুলো নিয়মিত করলে আপনার লোকাল এসইও অনেক বেশি ফলপ্রসূ হবে।

৭) লোকাল এসইও অডিট করুন নিয়মিত

লোকাল এসইও-তে সফল হতে চাইলে শুধু একবার সেটআপ করেই বসে থাকলে চলবে না। সময়ের সাথে সাথে গুগলের অ্যালগরিদম, ব্যবহারকারীর আচরণ, কিওয়ার্ড ট্রেন্ড এবং প্রতিযোগিতার ধরণ বদলায়। তাই নিয়মিতভাবে লোকাল এসইও অডিট করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি এমন এক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার ব্যবসার লোকাল উপস্থিতি কতটা কার্যকর, কোথায় দুর্বলতা আছে, এবং কোন কোন জায়গায় আপডেট বা উন্নয়ন প্রয়োজন। একটি ভালো লোকাল এসইও অডিটে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দেখা উচিত, যেমন:

  • Google My Business প্রোফাইল হালনাগাদ আছে কিনা।
  • লোকাল কিওয়ার্ড সঠিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে কিনা।
  • লোকাল সাইটেশন ঠিক আছে কিনা।
  • রিভিউয়ের সংখ্যা ও মান কেমন।
  • ওয়েবসাইট মোবাইল ফ্রেন্ডলি কিনা,এবং লোকাল কনটেন্ট যথেষ্ট আছে কিনা।

এই অডিটের মাধ্যমে আপনি আপনার মার্কেটিং কৌশলগুলো আরও নিখুঁত করতে পারবেন এবং সার্চ রেজাল্টে ভালো অবস্থান ধরে রাখতে পারবেন। মাসে অন্তত একবার বা তিন মাসে একবার সময় নিয়ে একটি ফোকাসড অডিট করলে আপনি ভুলগুলো ধরতে পারবেন এবং দ্রুত তা সংশোধন করতে পারবেন, যা দীর্ঘমেয়াদে আপনাকে এনে দেবে বেশি ট্রাফিক ও বিক্রির সম্ভাবনা।

লোকাল এসইও (Local SEO) ভবিষ্যতের জন্য কেমন হবে?

আগামী দিনে লোকাল এসইও (Local SEO) হবে আরও বেশি বুদ্ধিমান, ব্যক্তিকেন্দ্রিক এবং প্রযুক্তিনির্ভর। মানুষ এখন গুগলে “আমার কাছে কাছাকাছি দোকান”, “আজ খোলা ডেন্টিস্ট” বা “নজরুল সরণিতে ভালো রেস্টুরেন্ট” এ ধরনের প্রশ্ন করছে। গুগল এখন শুধু কীওয়ার্ড দেখে নয়, ইউজারের অবস্থান, সময়, আগে কোথায় ক্লিক করেছে, এমনকি রিভিউয়ের মানও বিশ্লেষণ করে ফলাফল দেখায়। ভবিষ্যতে এআই (AI) এবং ভয়েস সার্চ আরও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হবে। তাই গুগল মাই বিজনেস প্রোফাইল আপডেট রাখা, ফ্রেশ রিভিউ রাখা এবং সঠিক তথ্য দেওয়া ব্যবসার জন্য বাধ্যতামূলক হয়ে উঠবে।

ভবিষ্যতের লোকাল এসইও মূলত গড়ে উঠবে ভয়েস কমান্ড, মোবাইল সার্চ এবং সোশ্যাল এনগেজমেন্টকে কেন্দ্র করে। এখন ৭০% এর বেশি লোকাল সার্চ হয় মোবাইলে এবং অনেকেই “Hey Google” দিয়ে সরাসরি জিজ্ঞেস করে। তাই কনটেন্ট এমনভাবে সাজাতে হবে যেন তা মানুষের মুখে বলা প্রশ্নের মতো হয়। পাশাপাশি গুগল এখন ব্যবসার জনপ্রিয়তা বিচার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় রেসপন্স, রিভিউ ফ্রিকোয়েন্সি, ফটো আপডেট সব কিছু। ফলে ভবিষ্যতে যারা ডিজিটাল উপস্থিতিকে গুরুত্ব দেবে তারাই লোকাল সার্চে উপরের দিকে থাকবে। এখনই সময় লোকাল কনটেন্ট, রিভিউ ও সাইটেশন ঠিকঠাক করে নেওয়ার।

Best Client Hunting Course for freelancing

পরিশেষে একটি কথা, লোকাল এসইও এখন আর শুধু বড় কোম্পানির জন্য নয় এটি এখন ছোট থেকে মাঝারি যে কোনো ব্যবসার জন্য এক বিশাল সুযোগ। আপনি যদি চান আপনার দোকান, প্রতিষ্ঠান বা সার্ভিস স্থানীয় কাস্টমারদের কাছে সহজে পৌঁছাক, তাহলে লোকাল এসইওই হতে পারে আপনার ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের সোনার চাবি। Google My Business অপ্টিমাইজ করা, সঠিক লোকাল কিওয়ার্ড ব্যবহার, রিভিউ ম্যানেজমেন্ট, লোকাল কনটেন্ট তৈরি ও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে আপনি আপনার প্রতিযোগীদের থেকে এগিয়ে থাকতে পারেন।

ডিজিটাল দুনিয়ায় যে প্রতিষ্ঠান স্থানীয় সার্চে প্রথম দেখায় কাস্টমারের বিশ্বাসও তার উপরই পড়ে। তাই এখনই সময় লোকাল এসইও নিয়ে সিরিয়াস হওয়া এবং প্রতিটি স্টেপ ধাপে ধাপে ফলো করে বাস্তবে কাজে লাগানো। স্মার্ট বিজনেস মানেই স্মার্ট লোকাল এসইও এখন থেকে শুরু করুন, সফল ভবিষ্যতের পথ তৈরি করুন!

Leave a Reply