Blog

ওয়ার্ডপ্রেস থিম/প্লাগিন কাস্টমাইজেশন শিখে ১০ উপায়ে আয় করুন

wordpress income


বর্তমান যুগে ডিজিটাল দক্ষতা মানেই সম্ভাবনার নতুন দরজা। দিনে দিনে মানুষ ইন্টারনেটে নিজেদের ব্যবসা, ব্র্যান্ড বা ব্যক্তিগত প্রোফাইল গড়ে তুলতে চাইছে আর এর সবকিছুর পেছনে দরকার হয় একটি সুন্দর, পেশাদার মানের ওয়েবসাইট। কিন্তু সবাই তো প্রোগ্রামার নয়। সবাই তো কোডিং জানে না! ঠিক এই জায়গাটাতেই ওয়ার্ডপ্রেস এসে আমাদের জীবনকে সহজ করে দিয়েছে। আর যদি আপনি শিখে নিতে পারেন ওয়ার্ডপ্রেস থিম কাস্টমাইজেশন, তাহলে আপনি হতে পারেন সেই ব্যক্তি যার স্কিলের চাহিদা শুধু বাংলাদেশেই না, সারা বিশ্বজুড়ে।

এই ব্লগে আমরা জানব, ওয়ার্ডপ্রেস কী, থিম কাস্টমাইজেশন কেন গুরুত্বপূর্ণ, এটি শিখতে কী কী লাগবে, কীভাবে আয় করা যায়, এবং ভবিষ্যতে এই স্কিলের চাহিদা কেমন হবে। ওয়ার্ডপ্রেস থিম কাস্টমাইজেশন শিখে কিভাবে আয় করবেন সেই রকম ১০টি উপায় এই ব্লগে আলোচনা করা হয়েছে।

ওয়ার্ডপ্রেস কী?

ওয়ার্ডপ্রেস হলো একটি ওপেন সোর্স কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (CMS)। যার মাধ্যমে কোনো কোডিং না জানলেও আপনি একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারবেন। এটি PHP ও MySQL ভিত্তিক একটি প্ল্যাটফর্ম যা বিশ্বের ৪০%+ ওয়েবসাইটের প্রাণব্লগ, বিজনেস, পোর্টফোলিও, নিউজ, ই-কমার্স সব ধরণের ওয়েবসাইট তৈরি করা যায় WordPress দিয়ে। এখানে রয়েছে হাজারো ফ্রি ও প্রিমিয়াম থিম ও প্লাগইন, যেগুলো ব্যবহার করে আপনি নিজের মতো করে সাইট সাজাতে পারবেন।

WordPress Theme/Plugin কাস্টমাইজেশন কী?

ওয়ার্ডপ্রেস কাস্টমাইজেশন মানে হলো একটি নির্দিষ্ট থিম এবং প্লাগিন ব্যবহার করে ওয়েবসাইটের ডিজাইন, লেআউট, কালার, ফন্ট, হেডার, ফুটার, মেনু, সাইডবার ইত্যাদি পরিবর্তন করে সেটিকে নিজের মতো করে সাজানো। এতে আপনি ডেমো কনটেন্ট ইমপোর্ট করতে পারেন, এলিমেন্টর বা গুটেনবার্গের মতো পেজ বিল্ডার দিয়ে বিভিন্ন সেকশন তৈরি করতে পারেন, এমনকি CSS কোডিং ব্যবহার করে একেবারে ইউনিক ডিজাইনও করতে পারেন। এই কাজের চাহিদা প্রচুর এবং শুরুটা তুলনামূলকভাবে সহজ।

ওয়ার্ডপ্রেস কাস্টমাইজেশনের গুরুত্ব ও চাহিদা

বর্তমানে ছোট-বড় সব প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করছে তাদের অনলাইন পরিচিতি তৈরি করতে। কিন্তু প্রতিটি প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি চায় যেন তাদের ওয়েবসাইটটি হয় আলাদা ও প্রফেশনাল। এখানে কাস্টমাইজেশনের ভূমিকা আসে। একজন কাস্টমাইজার হিসেবে আপনি তাদের ওয়েবসাইটকে মনমতো করে সাজিয়ে দিতে পারেন। আর এই চাহিদার কারণে মার্কেটপ্লেস, লোকাল ক্লায়েন্ট, এজেন্সি সব জায়গায় এই স্কিলের জন্য কাজ পাওয়া সম্ভব। বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ ওয়েবসাইট প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে, যার একটি বড় অংশ WordPress দিয়ে। এর মানে, থিম কাস্টমাইজেশনের কাজের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে।

Freelancing মার্কেটপ্লেস যেমন Fiverr, Upwork, PeoplePerHour-এ “WordPress Customization কাজের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। শুধু অনলাইন না, দেশীয় অনেক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানও এখন খোঁজ করে এমন একজন যিনি স্বল্পমূল্যে মানসম্মত ওয়েবসাইট তৈরি করে দিতে পারেন। এমনকি অনেক ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি বা হোস্টিং কোম্পানি তাদের ক্লায়েন্টদের জন্য থিম কাস্টমাইজেশনের ফ্রিল্যান্সার খোঁজে থাকে। অর্থাৎ, আপনি যদি এই স্কিলটি ভালোভাবে রপ্ত করতে পারেন তাহলে শুধু দেশের মধ্যেই নয় আন্তর্জাতিক বাজারেও আপনার দক্ষতার প্রচুর চাহিদা রয়েছে।

থিম কাস্টমাইজেশন শেখার জন্য যেসব স্কিল দরকার

১) HTML ও CSS এর বেসিক জ্ঞান

ওয়ার্ডপ্রেস থিম কাস্টমাইজেশনে আপনি যতই পেজ বিল্ডার ব্যবহার করুন না কেন, কিছু জায়গায় আপনাকে কোডে হস্তক্ষেপ করতে হতে পারে। বিশেষ করে, ওয়েবসাইটের নির্দিষ্ট কোন অংশের ডিজাইন বা স্টাইল পরিবর্তন করতে চাইলে CSS কোড জানতে হবে। ধরুন, আপনি হেডার সেকশনের ব্যাকগ্রাউন্ড কালার পরিবর্তন করতে চান বা একটি বাটনের আকার ছোট করতে চান এসব ক্ষেত্রে আপনাকে CSS কোড ব্যবহার করতেই হবে। আবার কোন কোন থিমে কনটেন্ট এর স্ট্রাকচার বুঝতে HTML জানা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়ে। তাই একেবারে শুরুতে HTML ও CSS এর প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করলে থিম কাস্টমাইজেশন অনেক সহজ ও কার্যকর হয়ে উঠবে।

২) WordPress Dashboard পরিচালনার দক্ষতা

ওয়ার্ডপ্রেস থিম কাস্টমাইজেশন করার আগে আপনাকে ওয়ার্ডপ্রেসের ড্যাশবোর্ড বা Admin Panel ভালোভাবে জানতে হবে। কারণ, থিম ইনস্টল করা, প্লাগইন যুক্ত করা, পেজ তৈরি, মেনু বা উইজেট কনফিগার করা, মিডিয়া আপলোড এসব সব কাজই হয় এখান থেকে। আপনি যদি Dashboard ব্যবহার ভালোভাবে না জানেন, তাহলে থিম কাস্টমাইজেশন করতে গেলেই অসুবিধা হবে। তাই WordPress ড্যাশবোর্ডের প্রতিটি মেনু, সাব-মেনু, সেটিংস, প্লাগইন সেটআপ ইত্যাদি ভালভাবে শেখা জরুরি।

৩) Elementor বা অন্যান্য Page Builder ব্যবহার করার দক্ষতা

আজকাল বেশিরভাগ ওয়েবসাইটেই Elementor, WPBakery বা Gutenberg-এর মতো Page Builder ব্যবহার করা হয় কারণ এগুলো দিয়ে খুব সহজেই ড্র্যাগ অ্যান্ড ড্রপ পদ্ধতিতে সাইট ডিজাইন করা যায়। Elementor এর সাহায্যে আপনি বিভিন্ন সেকশন তৈরি করতে পারবেন, টেক্সট বসাতে পারবেন, ইমেজ যুক্ত করতে পারবেন, এমনকি এনিমেশন ও ইফেক্টও দিতে পারবেন কোনো কোড ছাড়াই। এটি থিম কাস্টমাইজেশনকে অনেক সহজ করে তোলে। আপনি যদি Elementor-এর প্রো ভার্সন ব্যবহার করতে পারেন, তাহলে আরও অনেক ফিচার আনলক হয়ে যায়, যেগুলো ব্যবহার করে খুবই প্রফেশনাল ওয়েবসাইট তৈরি করা সম্ভব।

৪) চাইল্ড থিম তৈরি করার ধারণা

যখন আপনি কোনও থিম কাস্টমাইজ করেন এবং সরাসরি থিমের ফাইল এডিট করেন, তখন থিম আপডেট হলে আপনার সব পরিবর্তন মুছে যেতে পারে। এই সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে ব্যবহার করা হয় Child Theme। চাইল্ড থিম মূল থিমের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয় এবং আপনি এতে কোড পরিবর্তন করলে মূল থিমের কোনও সমস্যা হয় না। এটি ব্যবহার করে আপনি নিরাপদভাবে Custom CSS, Functions, Templates ইত্যাদি পরিবর্তন করতে পারবেন। তাই যেকোনো থিম কাস্টমাইজেশনে চাইল্ড থিমের ধারণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৫) Custom CSS / JS ব্যবহার করার অভ্যাস

অনেক সময় ক্লায়েন্ট চায় সাইটের নির্দিষ্ট কোন অংশ হুবহু তাদের ব্র্যান্ড রুল অনুযায়ী সাজাতে যেমন: ফন্টের সাইজ, কালার, মার্জিন, স্পেসিং, বর্ডার ইত্যাদি। এই জায়গায় সাধারণ কাস্টমাইজেশন যথেষ্ট না। তখন প্রয়োজন পড়ে Custom CSS ব্যবহার করার। আবার কখনো কোনো ইন্টারঅ্যাকশন বা ছোটখাটো ফাংশন দরকার হলে JavaScript বা jQuery ব্যবহার করাও প্রয়োজন হতে পারে। তাই আপনি যদি CSS ও কিছুটা JS জানেন, তাহলে আপনার কাজ অনেক গুণ সহজ হয়ে যাবে এবং আপনি পেশাদার কাস্টমাইজার হিসেবে নিজেকে আলাদা করে প্রমাণ করতে পারবেন। এই স্কিলগুলো শেখার মাধ্যমে একজন সম্পূর্ণ WordPress Theme Customization এক্সপার্ট হওয়া যায়।

কিভাবে শিখবেন ওয়ার্ডপ্রেস থিম কাস্টমাইজেশন?

ওয়ার্ডপ্রেস থিম কাস্টমাইজেশন শেখা এখন আর কঠিন বা প্রোগ্রামারদের জন্য সীমাবদ্ধ নয়। আপনি যদি একেবারে নতুন হয়ে থাকেন, এমনকি প্রোগ্রামিং না জানলেও ঠিকমতো গাইডলাইন পেলে সহজেই এই দক্ষতা আয়ত্ত করা সম্ভব। এজন্য দরকার একটি ভালো গাইডলাইন, প্র্যাকটিক্যাল ভিত্তিক কোর্স এবং বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন ট্রেইনারের সহযোগিতা।

এই দিক থেকে MSB Academy-এর WordPress Theme & Plugin Customization Masterclass হতে পারে আপনার জন্য সেরা একটি পথ। এই কোর্সে এমনভাবে শেখানো হয়, যেন একজন একেবারে নতুন শিক্ষার্থীও ধাপে ধাপে পেশাদার মানের ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারে কোনো কোড ছাড়াই। আপনি শিখবেন কিভাবে থিম ইনস্টল করবেন, কাস্টমাইজ করবেন, প্লাগিন কনফিগার করবেন এবং ক্লায়েন্টের প্রয়োজন অনুযায়ী ওয়েবসাইট তৈরি করবেন। কোর্সের জয়েন করলে পাবেন লাইফ টাইম কোর্স এক্সেস, কোর্স আপডেট এবং কোর্স এর প্রাইভেট ফোরামে কোর্স মেন্টর সাপোর্ট। 

ওয়ার্ডপ্রেস থিম কাস্টমাইজেশন শিখে ইনকাম করার ১০টি উপায়

আপনি WordPress থিম কাস্টমাইজেশন শিখে অনেক উপায়ে আয় করতে পারবেন। মোট ১০টি কার্যকরী ও জনপ্রিয় পদ্ধতি নিচে তুলে ধরা হলো-

১) Fiverr-এ থিম কাস্টমাইজেশন সার্ভিস দিয়ে আয় 

Fiverr এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে আপনি নিজেই নিজের সার্ভিসের বিজ্ঞাপন দিতে পারেন, যাকে বলা হয় “গিগ”। আপনি চাইলে একটি গিগ তৈরি করতে পারেন যেমন: “I will customize your WordPress theme professionally” যেখানে আপনি বিস্তারিত লিখে দিতে পারেন আপনি কী কী সার্ভিস দেবেন, যেমন হোমপেজ ডিজাইন, কালার কাস্টমাইজেশন, কনটেন্ট সেটআপ, রেসপন্সিভ ডিজাইন ইত্যাদি। Fiverr-এ অনেক নতুন উদ্যোক্তা, অনলাইন স্টোর মালিক ও ছোট বিজনেস প্রতিদিন এই ধরনের সেবা খোঁজে।

আপনি শুরুতে কম দামে কাজ করে রিভিউ জোগাড় করলে পরবর্তীতে একই কাজের জন্য বেশি চার্জ করতে পারবেন। Fiverr-এ কাজের গতি বজায় রাখতে হলে সময়মতো ডেলিভারি, ভালো কমিউনিকেশন এবং মানসম্মত কাজ দিতে হয়।

২) Upwork-এ ক্লায়েন্ট ভিত্তিক প্রজেক্টে কাজ করা

Upwork হলো আরও একটি বড় ও প্রিমিয়াম মার্কেটপ্লেস যেখানে ক্লায়েন্টরা সরাসরি কাজের জন্য ফ্রিল্যান্সার খোঁজেন। এখানে আপনি কাজের জন্য “প্রপোজাল” পাঠাতে হয়। আপনি যদি থিম কাস্টমাইজেশন দক্ষতায় দক্ষ হন, তাহলে এখানে আপনি অনেক ধরনের প্রজেক্ট পাবেন যেমন: Business Website Setup, Blog Layout Customization, Theme Optimization, ইত্যাদি। শুরুতে কাজ পাওয়া কঠিন হলেও, একবার ভালো রেটিং পেলে বড় বড় ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে বেশি বাজেটের প্রজেক্ট আসতে শুরু করে। Upwork-এ ক্লায়েন্টরা বেশি পরিশোধ করতে রাজি থাকে, যদি আপনি কাজের মান প্রমাণ করতে পারেন।

৩) লোকাল ক্লায়েন্টদের ওয়েবসাইট তৈরি করে দেওয়া

আমাদের আশপাশেই এমন অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান আছে যাদের একটি ওয়েবসাইটের প্রয়োজন হয় যেমন দোকান, কোচিং সেন্টার, স্কুল, চিকিৎসক, উদ্যোক্তা বা অনলাইন ব্যবসায়ী। কিন্তু তারা সাধারণত এ ব্যাপারে দক্ষ কারো সন্ধান জানে না। আপনি যদি ওয়ার্ডপ্রেস কাস্টমাইজেশন শিখে এমন লোকাল ক্লায়েন্টদের খুঁজে বের করতে পারেন, তাহলে প্রতিটি সাইটের জন্য ৫,০০০ থেকে ২০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব। এই ধরনের কাজ সাধারণত একবার করলেই হয় না পরবর্তীতে মেইনটেন্যান্স, আপডেট বা নতুন পেজ অ্যাড করেও আপনি আয় করতে পারবেন।

৪) Facebook ফ্রিল্যান্সিং গ্রুপে সার্ভিস অফার করা

বাংলাদেশে এমন অনেক Facebook গ্রুপ আছে যেখানে ক্লায়েন্টরা সরাসরি তাদের কাজের জন্য ফ্রিল্যান্সার খোঁজে। যেমন: “WordPress Help Bangladesh”, “Freelancer Marketplace BD”, “Digital Services BD” ইত্যাদি। আপনি এখানে আপনার কাজের নমুনা বা demo সাইটের লিংক শেয়ার করে লিখতে পারেন “WordPress Site Customize করিয়ে নিতে চান? সাশ্রয়ী মূল্যে সুন্দর ডিজাইন করিয়ে নিন” এরকম আকর্ষণীয় পোস্ট। এখান থেকে শুরু করে অনেকেই রেগুলার ক্লায়েন্ট পেয়েছেন। আপনি চাইলে বিজ্ঞাপনেও কিছু টাকা খরচ করে আপনার পোর্টফোলিওকে প্রচার করতে পারেন।

৫) নিজস্ব পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট তৈরি করা

একজন প্রফেশনাল থিম কাস্টমাইজার হিসেবে নিজস্ব ওয়েবসাইট থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটি আপনার দক্ষতার প্রমাণ দেয় এবং ক্লায়েন্টদের চোখে বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ায়। আপনি এই ওয়েবসাইটে আপনার পূর্বের কাজের নমুনা, সার্ভিস লিস্ট, প্যাকেজ মূল্য, ক্লায়েন্ট রিভিউ, যোগাযোগ ফর্ম ইত্যাদি যুক্ত করতে পারেন। এর ফলে আপনি Google থেকে বা সোশ্যাল মিডিয়া থেকে ক্লায়েন্ট আকর্ষণ করতে পারবেন। পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট একটি প্রফেশনাল ব্র্যান্ড ইমেজ তৈরি করে এবং দীর্ঘমেয়াদে ক্লায়েন্ট পাওয়ার একটি শক্তিশালী মাধ্যম।

৬) ওয়েবসাইট কাস্টমাইজ করে Flippa-তে বিক্রি করা

Flippa হলো এমন একটি ওয়েবসাইট যেখানে লোকজন ওয়েবসাইট কিনে ও বিক্রি করে। আপনি যদি WordPress দিয়ে একটি সুন্দর ডিজাইন করা সাইট তৈরি করতে পারেন যেমন: একটি রিভিউ ব্লগ, ট্রাভেল সাইট, কুকিং রেসিপি সাইট বা নোডলস শপ এবং তাতে কিছু কনটেন্ট ও অ্যাফিলিয়েট লিংক যুক্ত করেন, তাহলে এই সাইটটি Flippa-তে বিক্রি করে দিতে পারেন। অনেকে এমন ওয়েবসাইট কিনে পরে নিজের মত কাস্টমাইজ করে ব্যবহার করেন বা ইনকামের জন্য চালিয়ে যান। আপনি চাইলে একসাথে একাধিক সাইট বানিয়ে বিক্রি করতে পারেন। এটি একবারের কাজ, কিন্তু ভালো দামে বিক্রি হলে একেকটি সাইট থেকে $200-$1000 পর্যন্ত ইনকাম করা যায়।

৭) ডিজিটাল এজেন্সির ফ্রিল্যান্স সহযোগী হিসেবে কাজ করা

বর্তমানে অনেক ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি তাদের ক্লায়েন্টদের জন্য ওয়েবসাইট সেবা দেয়। কিন্তু সবসময় তাদের হাতে পর্যাপ্ত জনবল থাকে না, তাই তারা থিম কাস্টমাইজেশনের জন্য ফ্রিল্যান্সার হায়ার করে। আপনি চাইলে এইসব এজেন্সির সঙ্গে পার্টনারশিপ বা চুক্তিভিত্তিক কাজ করতে পারেন। একবার সম্পর্ক তৈরি হলে, নিয়মিত প্রজেক্ট পাবেন এবং নিরবচ্ছিন্ন ইনকাম সম্ভব হবে। এটি এমন একটি উপায় যেখানে আপনি মার্কেটিং করতে না গিয়েও কাজ পেতে পারেন।

৮) YouTube-এ চ্যানেল ভিডিও বানিয়ে 

আপনার যদি কথা বলা ও শেখানোর আগ্রহ থাকে, তাহলে আপনি WordPress থিম কাস্টমাইজেশন শেখানোর ভিডিও বানিয়ে YouTube চ্যানেল খুলতে পারেন। শুরুতে খুব সহজ টপিক দিয়ে শুরু করুন — যেমন: “কিভাবে হেডার ডিজাইন করবেন?”, “কিভাবে থিম ইন্সটল করবেন?”, “Elementor দিয়ে হোমপেজ বানানো” ইত্যাদি। যখন আপনার ভিডিওতে ভিউ বাড়বে, তখন আপনি YouTube Partner Program এর মাধ্যমে AdSense থেকে ইনকাম করতে পারবেন। এছাড়া আপনি Sponsorship, Affiliate Link ও কোর্স প্রমোশন থেকেও আয় করতে পারবেন।

৯) Affiliate ওয়েবসাইট তৈরি করে আয় করা

WordPress থিম কাস্টমাইজেশন জানলে আপনি খুব সহজেই নিজের একটি অ্যাফিলিয়েট ওয়েবসাইট বানাতে পারেন। ধরুন আপনি Amazon, Daraz, বা MSB Academy-এর অ্যাফিলিয়েট হচ্ছেন এরপর একটি সুন্দর ব্লগ বানিয়ে সেইসব প্রোডাক্ট রিভিউ, গাইড বা তালিকা পোস্ট করে সেখানে অ্যাফিলিয়েট লিংক যুক্ত করতে পারেন। একজন ভিজিটর যদি আপনার সাইটে এসে লিংকে ক্লিক করে প্রোডাক্ট কিনে, তাহলে আপনি কমিশন পাবেন। এখানে থিম কাস্টমাইজেশন কাজে আসে কারণ আপনি সাইটটিকে SEO ফ্রেন্ডলি, মোবাইল রেসপন্সিভ ও আকর্ষণীয়ভাবে সাজাতে পারবেন।

১০)  Online Course তৈরি করে বিক্রি করা

যদি আপনি এই স্কিল ভালোভাবে শিখে ফেলেন এবং মনে করেন আপনি অন্যদের শেখাতে পারবেন তাহলে আপনি একটি অনলাইন কোর্স তৈরি করতে পারেন। এটি হতে পারে ভিডিও কোর্স (Udemy, MSB Academy), eBook বা Workshop ভিত্তিক। একবার কোর্স তৈরি হয়ে গেলে, আপনি সেটি একাধিকবার বিক্রি করতে পারবেন এতে করে আপনি একটি Passive Income Source তৈরি করতে পারবেন। আপনার YouTube চ্যানেল, Facebook Page বা Website এর মাধ্যমে আপনি সেই কোর্স প্রমোট করে ইনকাম করতে পারবেন।

ওয়ার্ডপ্রেস থিম কাস্টমাইজেশনের ভবিষ্যৎ

ওয়ার্ডপ্রেস থিম কাস্টমাইজেশন শুধু বর্তমানেই নয়, ভবিষ্যতেও একটি অত্যন্ত চাহিদাসম্পন্ন ও লাভজনক স্কিল হিসেবে টিকে থাকবে। দিন দিন অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসা, ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম, ব্লগ, পোর্টফোলিও এবং ই-কমার্স সাইটের সংখ্যা ব্যাপক হারে বাড়ছে। এইসব সাইটের মালিকরা চান তাদের ওয়েবসাইট যেন দেখতে ইউনিক, ফাস্ট ও ইউজার ফ্রেন্ডলি হয়। এজন্য তারা থিম কাস্টমাইজারদের খুঁজে বের করে এবং ভালো পারিশ্রমিক দিয়ে তাদের কাজ করিয়ে নেয়।

আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এখন অনেক এজেন্সি, SaaS কোম্পানি বা অনলাইন উদ্যোক্তা এমন লোক খুঁজছেন যারা শুধু থিম ইনস্টল করতে জানে না, বরং ক্লায়েন্টের চাহিদা অনুযায়ী থিম কাস্টমাইজ করে দিতে পারে। এর মানে আপনি যদি এই স্কিলে এক্সপার্ট হয়ে যান তাহলে ভবিষ্যতে আপনার জন্য একদিকে যেমন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটে কাজের অভাব হবে না। তেমনি আপনি চাইলে নিজে ডিজিটাল সার্ভিস এজেন্সি চালু করেও বড় আয়ের সুযোগ তৈরি করতে পারবেন।

এছাড়া, AI ও ডিজিটাল অটোমেশনের যুগেও থিম কাস্টমাইজেশন মানুষের চিন্তা ও সৃজনশীলতা-নির্ভর একটি ক্ষেত্র হিসেবে টিকে থাকবে। কারণ প্রতিটি ব্যবসার নিজস্ব স্টাইল, টোন ও ব্র্যান্ডিং থাকে যেটা মেশিন নয়। একজন দক্ষ মানুষই সবচেয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারে। তাই বলা যায়, যারা এখন থেকে ওয়ার্ডপ্রেস থিম কাস্টমাইজেশন শিখে দক্ষতা অর্জন করছেন, তারা ভবিষ্যতের ডিজিটাল জগতে এক ধাপ এগিয়ে থাকবেন।

পরিশেষে একটি কথা, ওয়ার্ডপ্রেস থিম কাস্টমাইজেশন শেখা আজকের যুগে খুবই সময়োপযোগী ও ইনকামযোগ্য স্কিল। যেকোনো বয়সে, যেকোনো পেশায় থাকা অবস্থায় এটি শেখা সম্ভব এবং অনলাইন দুনিয়ায় নিজের অবস্থান গড়ে তোলা যায় সহজেই। আপনি যদি আজ থেকে অনুশীলন শুরু করেন, তাহলে কয়েক মাসের মধ্যেই আপনি ইনকাম শুরু করতে পারবেন। প্র্যাকটিস আর ধৈর্য থাকলে, এই স্কিল দিয়েই আপনি গড়তে পারেন নিজের স্বপ্নের ক্যারিয়ার।

Comments

  • mukul55
    August 1, 2025

    আমি অনেকদিন ধরে ভাবছিলাম ওয়ার্ডপ্রেস শিখে ফ্রিল্যান্সিং করব। এই ব্লগটা পড়ে একদম পরিষ্কার ধারণা পেলাম কোথা থেকে শুরু করবো এবং কিভাবে আয় করবো।

  • hridoysarker25
    August 1, 2025

    এক কথায় অসাধারণ! ওয়ার্ডপ্রেস নিয়ে অনেক ব্লগ পড়েছি কিন্তু এত ক্লিয়ার ও ইনকাম ফোকাসড লেখা খুব কম পাই। ধন্যবাদ এমন ইনফরমেটিভ কনটেন্টের জন্য।

  • asmaadhora04
    August 1, 2025

    Nice Blog! But Programming Keno jani amar kache onek kothin mone Hoi Always.

    • একবার শিখে ফেললেই সহজ মনে হবে। ভয় পেয়ে দূরে থাকলে সব কিছু কঠিন মনে হবে।

Leave a Reply