Blog

ইউটিউবে ভিডিও রাঙ্কিং এর জন্য ৬টি গুরুত্বপূর্ণ টিপস

youtube msb academy

একটা সময় ছিল যখন মানুষ নতুন কিছু জানার জন্য বা কোন তথ্যের জন্য গুগলে সার্চ করত। সময়ের পরিবর্তনে এখন সে জায়গাটি ইউটিউব দখল করে নিয়েছে। তার কারন হল, আপনি ইউটিউবে সবকিছু একটি ভিডিও-এর মাধ্যমে দেখতে পারছেন। আর তাইতো এখন বর্তমান সময়ে গুগলের পরে সবচেয়ে বড় সার্চ সার্চ ইঞ্জিন হল ইউটিউব। গ্লোবালি ইউটিউবে প্রতি মিনিটে ৩০০ ঘণ্টার বেশি ভিডিও আপলোড করা হয়, বিভিন্ন চ্যানেলে নানা ধরনের বিষয়ের উপর। ইউটিউব যেহেতু আপলোড করা ভিডিও কন্টেন্টের উপর রেভিনিউ দিয়ে থাকে, তাই প্রতিদিন অনেক মানুষ নতুন নতুন চ্যানেল খুলছে এবং দিন দিন চ্যানেলের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, ঠিক তেমনি বিজ্ঞাপন দাতাদের বিশাল একটা অংশ ইউটিউবে তাদের প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের বিজ্ঞাপন দিচ্ছে।

ডিজিটাল যুগে যেকোন পন্যের মার্কেটিং এর জন্য ইউটিউব বিশাল একটি সেক্টর। তাই ইউটিউব কে কোনভাবে অবহেলা করার কোন উপায় নেই। কিন্তু ইউটিউবে কোন ভিডিও আপলোড দিলেই ত আর টাকা চলে আসবে না। সেই ভিডিও র‍্যাংকিং পেলেই আসলে আপনার সেই ভিডিও বানানো সার্থক হবে। আর ইউটিউব সার্চ রেজাল্টে ভিডিও র‍্যাংকে নিয়ে আসতে হলে জানতে হবে কিছু সঠিক ফর্মুলা। তাই যারা নিয়মিত ভিডিও বানান তাদের মার্কেটিং এবং ভিডিও রাঙ্কিং এর ব্যাপারে জ্ঞান থাকতেই হবে। আর আজকের এই আর্টিকেলে আমরা সার্চ ইঞ্জিনে ভিডিও র‍্যাংক পাওয়ার ৬টি ফর্মুলা বা টিপস জানব।

১) চ্যানেল কিওয়ার্ড কি?

প্রতিটা জিনিসের একটা উদ্দেশ্য বা বিষয় থাকে। বিষয় বিহীন আসলে কিছুই হয় না। ঠিক তেমনি প্রতিটি ইউটিউব চ্যানেলের একটি বিষয় থাকে। যে সব ইউটিউব চ্যানেলের নিদিষ্ট কোন বিষয় থাকে না, এলোমেলো ভাবে নানা ধরনের বিষয় নিয়ে ভিডিও তৈরি করা হয় সে সব ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিওগুলো কিন্তু সহজে র‍্যাংক পায় না। আর তাই আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে অবশ্যই চ্যানেল কিওয়ার্ড অ্যাড করতে হবে। যা সার্চ ইঞ্জিনেকে চ্যানেলের  কন্টেন্ট বুঝাতে অনেক বেশি সহায়তা করে থাকে। ইউটিউবের অ্যালগোরিদম এবং মেটাডাটা চ্যানেল কিওয়ার্ড এর প্রতি অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। চ্যানেল কিওয়ার্ড ভিউয়ারদের যেমন একটা ধারণা দেয় চ্যানেল সম্পর্কে, ঠিক তেমনি সার্চ ইঞ্জিনকে অনেক বেশি সাহায্য করে চ্যানেলের কন্টেন্ট বুঝতে। 

যেভাবে চ্যানেল কিওয়ার্ড দিবেনঃ

  • প্রথমে আপনার ইউটিউব চ্যানেল ড্যাশবোর্ড যাবেন
  • ডান পাশে সেটিং অপশন পাবেন সেখানে ক্লিক করুন
  • সেটিং ক্লিক করলে যে অপশন গুলা আসবে সেখান থেকে চ্যানেল লেখা অপশনে ক্লিক করুন
  • বক্সের মত কিওয়ার্ড লেখার স্থান রয়েছে সেখানে আপনার চ্যানেল কিওয়ার্ড লেখুন
  • ৫০০ শব্দের মধ্যে চ্যানেল কিওয়ার্ড দিতে পারবেন

একটা ইউটিউব চ্যানেল প্রফেশনাল ভাবে খোলা, চ্যানেল কিওয়ার্ড সেট করা থেকে শুরু করে, চ্যানেল SEO এবং অন্যান্য সব ইম্পরট্যান্ট সেটিং সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে নিচের এই ভিডিওটা সম্পূর্ণ দেখে ফেলতে পারেনঃ

২) ভিডিও কিওয়ার্ড

ইউটিউব ভিডিওতে কিওয়ার্ড খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি ভাল কোয়ালিটির ভিডিওতে যদি, সঠিক কিওয়ার্ড না দেয়া হয় তাহলে সেটি সার্চে আসবে না। কোন সার্চ ইঞ্জিন কিওয়ার্ড ছাড়া ভিডিও সহজে শো করে না। তাই চ্যানেল কিওয়ার্ড এর মত ইউটিউবে আপলোডকৃত প্রতিটি ভিডিওতে ভিডিও কিওয়ার্ড বা ট্যাগ দিতে হবে।

আপনি যত ভালভাবে কিওয়ার্ড দিয়ে ভিডিও বর্ণনা দিতে পারবেন, ইউটিউব অ্যালগোরিদম তত সহজ এবং সুন্দর ভাবে আপনার ভিডিও কন্টেন্ট সম্পর্কে ধারণা নিতে পারবে। আর ইউটিউব সার্চ ইঞ্জিন আপনার ভিডিও যত ভালভাবে বুঝতে পারবে, আপনার ভিডিও র‍্যাংক তত ভালো হবে। ভিডিও কিওয়ার্ড সঠিকভাবে দিলে আপনি যেমন টার্গেট অডিয়েন্স সহজে পাবেন, তেমনিভাবে ইউটিউব অ্যালগোরিদমের কাছেও ব্যাপারটা খুবই পজিটিভ!  যার ফলে আপনি প্রচুর অরগানিক ট্রাফিক বা ভিউস পাবেন।

কোথায় কোথায় দিবেন ভিডিও কিওয়ার্ড?

  • ভিডিও টাইটেলে ছোট করে ভিডিও কিওয়ার্ড দিতে পারেন
  • ভিডিও ডেসক্রিপশনে ভিডিও কিওয়ার্ড দিতে পারেন
  • ভিডিও ট্রান্সক্রিপ্টস এ ভিডিও কিওয়ার্ড দিতে পারেন
  • ভিডিও ট্যাগ এর মধ্যে ভিডিও কিওয়ার্ড দিতে পারেন

৩) ভিডিও টাইটেল

ভিডিও টাইটেল বা নামকরন কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নামের মধ্যে দিয়ে কোন কিছুর সাথে আমাদের প্রাথমিক পরিচয় ঘটে। আপনি যদি কোন বইয়ের দোকানে যান বই কিনতে, তখন শত শত বইয়ের মধ্যে আকর্ষণীয় নামের বইগুলা প্রথমে হাতে নিয়ে দেখবেন। সেটাইতো স্বাভাবিক! তাই না?

শিরোনাম হল শনাক্তকারী প্রতীক। টাইটেলের মধ্যে দিয়ে যে কোন কিছুর মৌল বিশিষ্ট প্রকাশ পায়। ভিউয়াদের কাছে ভিডিও টাইটেল যেমন প্রথম ইম্প্রেশন, ঠিক তেমনি সার্চ ইঞ্জিন কাছে আপনার ভিডিও র‍্যাংক করার ক্ষেত্রে নাম প্রথম ইম্প্রেশন। তাই ভিডিও টাইটেল দেয়ার ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ের দিকে নজর দিতে হবে।

টাইটেল লেখার ক্ষেত্রে করনীয় ও বর্জনীয় বিষয়ঃ

  • ভিডিওর ধরনের উপর ভিত্তি করে টাইটেল লেখার চেষ্টা করুন
  • টাইটেলের শুরুতে ভিডিও কিওয়ার্ড রাখুন
  • শার্ট খাট টাইটেল দেয়ার চেষ্টা করুন। টাইটেল যেন বেশি বড় না হয় যে শিখে খেয়াল রাখুন
  • ৫-৭ শব্দের মধ্যে টাইটেল রাখার চেষ্টা করু

৪) ভিডিও ডেসক্রিপশন

Description অর্থ হল বিবরণ বা বর্ণনা। র‍্যাংকিং পেতে ভিডিও টাইটেলর মত ভিডিও ডেসক্রিপশন অনেক বড় ভুমিকা রাখে। ডেসক্রিপশন যদি খুবই সামান্য বিষয় হত তাহলে, ইউটিউব কর্তৃপক্ষ ডেসক্রিপশন লেখার জন্য ৫ হাজার শব্দের এত বড় বক্স দিতেন না। গুগল বা ইউটিউব সার্চ ইঞ্জিন যেহেতু মানুষের মত ভিডিও ভিউ করতে পারে না, সেহেতু ইউটিউব যা করে তাহল, আপনার দেয়া ডেসক্রিপশন থেকে আপনার ভিডিও সম্পর্কে একটা ধারণা করে নেয় যে, ভিডিও টি কোন বিষয়ের। আপনি খুব সুন্দর ভিডিও তৈরি করলেন এবং সেটা আপলোড দিলেন ডেসক্রিপশন লেখা ছাড়া, তাতে করে সার্চ ইঞ্জিন আপনার ভিডিওর ধরন বুঝবে না, এর ফলে সেটা র‍্যাংকও দিবে না। বেশি ভিউও পাবেন না

ভিডিও ডেসক্রিপশন লেখার সময় যে বিষয়ের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিতে হবেঃ

  • ডেসক্রিপশন যেন খুব বেশি ছোট না হয় আবার খুব বেশি বড় না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন
  • টাইটলের মত ভিডিও ডেসক্রিপশনে উপযুক্ত কিওয়ার্ড দিবেন
  • সর্বদা চেষ্টা করবেন প্রথম ২০ থেকে ৩০ শব্দের মধ্যে কিওয়ার্ড রাখতে, যাতে সার্চ ইঞ্জিন শুরুতে সেটি পেয়ে যায়
  • অতিরিক্ত এবং অবাঞ্ছিত শব্দ ব্যবহার থেকে বিরত থাকবেন
  • ভিডিও রিলেটেড তথ্য সুন্দর ভাবে লিখে দিবেন
  • কমিউনিকেশন এর জন্য ইন্টারনাল এবং এক্সটার্নাল লিঙ্ক অ্যাড করুন। যেমন, ফেসবুক পেজ, টুইটার, ফেসবুক গ্রুপ, যদি কোন ওয়েবসাইট থাকে ওয়েবসাইট লিঙ্ক অ্যাড করে দিন

৫) ভিডিও ট্যাগ

ভিডিওতে যথাযত টাইটেল এবং ডেসক্রিপশন থাকার পরও, ভিডিও সাথে সম্পর্কিত কিছু ট্যাগ ব্যবহার করতে হবে। এই ট্যাগ হয়ত র‍্যাংকিং পেতে খুব একটা সহায়তা করবে না, কিন্তু এই ট্যাগ এর মধ্যমে ইউটিউব অ্যালগোরিদম আপনার ভিডিও সম্পর্কে ধারণা পাবে। আপনি যখন কোন ভিডিও আপলোড দিবেন তখন, ইউটিউব আপনার কাছ থেকে ভিডিও সম্পর্কিত ট্যাগ আশা করে। ভিডিও টাইটেল বাদে আর কি কি নামে সার্চ দিলে ভিডিওটি দেখতে পাবে সে সম্পর্কিত ট্যাগ অ্যাড করতে হবে। সুতরাং ট্যাগ কে কোন ভাবে অবহেলা করা যাবে না। সুন্দর ট্যাগ ব্যবহার করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

যে ভাবে ভিডিও ট্যাগ ব্যবহার করবেনঃ

  • ভিডিওর টপিক এর সঙ্গে মিল রেখে ট্যাগ ব্যবহার করুন
  • টার্গেট কিওয়ার্ডটি ট্যাগ হিসেবে শুরুতে ব্যবহার করতে পারেন
  • স্পেসিফিক কিছু লম্বা কিওয়ার্ড ট্যাগ হিসেবে অ্যাড করুন

৬) আকর্ষণীয় থাম্বেল

বাংলায় একটি প্রবাদ রয়েছে, “আগে দর্শনধারী পরে গুণবিচারী”। ইউটিউবের ভিডিওর ক্ষেত্রেও কথাটা প্রযোজ্য। কারণ, আপনার ভিডিও থাম্বেল দেখে মানুষ ভিডিওর ভিতরের বিষয় সম্পর্কে একটা ধারণা পাবে। তাই ভিডিও থাম্বেল অবশ্যই সুন্দর এবং আকর্ষণীয় হতে হবে। ভিডিওর ভিতরের টপিক এর সাথে থাম্বেল যেন মিল থাকে সে দিকে সতর্ক থাকবেন। ভিডিও ভিতরে টপিক এক রকম আর থাম্বেল এক রকম এমনটা করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ ভিডিওর সাথে Thumbnail এর মিল না থাকলে, বা Clickbait thumbnail ব্যাবহার করলে মানুষজন হয়ত আপনার ভিডিও দেখার জন্য ক্লিক করবে ঠিকই কিন্তু বেশি সময় আপনার ভিডিও দেখবে না। আর ভিডিওতে Watch Time অনেক কম হলে, সেটা কিন্তু আপনার চ্যানেলের জন্যও অনেক বাজে একটা ইম্প্রেশন ক্রিয়েট করবে।

তাই আশা করছি বুঝতেই পারছেন, একটি ভিডিও ভিউ এবং র‍্যাংকিং এ থাম্বেল অনেক বড় ভুমিকা রাখে। আপনি চাইলে থাম্বেলের মধ্যে ভিডিও সম্পর্কিত কিওয়ার্ড ব্যবহার করতে পারেন।

বোনাস ১) কতভাবে ইনকাম করা যায় ইউটিউব থেকে?

নতুনরা ইউটিউবে কাজ করার সময় ম্যাক্সিমাম ক্ষেত্রে মনে করে যে, ইউটিউব থেকে ইনকামের একমাত্র উপায় হচ্ছে Google Adsense! কিন্তু কথাটা মোটেও সত্যি না। আসলে আপনি যদি সঠিকভাবে প্ল্যান করে কাজ করেন, তাহলে আপনি অল্প ভিউসেও অনেক বেশি ইনকাম করতে পারবেন ছোট চ্যানেল থেকেই। এই ব্যাপারে পরিস্কার একটি ধারণা পেতে এই ভিডিওটি দেখে ফেলুনঃ

বোনাস ২) ইউটিউব চ্যানেল সিকুরিটি

একটা ইউটিউব চ্যানেলকে শূন্য থেকে বড় করা সহজ কোন বিষয় না। অনেক পরিশ্রম করা লাগে একটা চ্যানেলকে গ্রো করার জন্য। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, চ্যানেলের সিকুরিটির ব্যাপারে ম্যাক্সিমাম ইউটিউবাররাই সচেতন থাকে না। তাই অনেক ইউটিউবার হ্যাকারদের ফাঁদে পড়ে নিজেদের চ্যানেল হারিয়েছে। আর তাই আমি নতুন, পুরাতন সব ইউটিউবারদের রিকমেন্ড করব নিচের এই ভিডিওটি সম্পূর্ণ দেখে ফেলার জন্য এবং ভিডিওতে দেখানো প্রত্যেকটা কথা মনে চলার জন্য।

পরিশেষে, উপরের এই পয়েন্টগুলো ছাড়াও আসলে ভিডিও রাঙ্কিং এর আরও অনেক ফ্যাক্টর রয়েছে। যেমনঃ কোয়ালিটি সম্পূর্ণ ভিডিও তৈরি করা, ভিডিও ওয়াচ টাইম বাড়ানোর জন্য ভিডিওকে আকর্ষণীয় করে তোলা, রেগুলার চ্যানেলে ভিডিও আপলোড করা ইত্যাদি। আবার সোশ্যাল মিডিয়াতে ইউটিউব ভিডিও শেয়ার করার মাধ্যমে ভিউ এবং অরগানিক ইউজার অ্যাংগেজমেন্ট বাড়ানো যায়। তাই ইউটিউবে কাজ করার ক্ষেত্রে আপনি সিরিয়াস হয়ে থাকলে আপনার আসলে এইসব ব্যাপারেই লক্ষ রেখে কাজ করতে হবে। আর তাহলেই আশা করি আপনি ইউটিউবিং করে সাকসেস পাবেন।

Leave a Reply