Blog

প্রফিটেবল বিজনেস আইডিয়া খুজে পাওয়ার ১০টি কৌশল

বিজনেস করে সফল হওয়া সহজ কাজ নয়। যেকোন মানুষের জন্যই এটি কঠিন কাজ। আমাদের চারপাশে অনেক মানুষ রয়েছে যারা নিজে থেকে কিছু করতে চায় কিন্তু কি করবে? কি ভাবে করবে? সেই পথ খুজে পায় না। আবার অনেকেই পকেটে লাখ টাকা নিয়ে বসে আছে কিন্তু সেটা দিয়ে কিভাবে বিজনেস করবে কিসের বিজনেস করবে সেটা সে বুঝতে পারে না। আপনিও যদি এমন দ্বিধার মধ্যে থাকেন তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। কিভাবে সঠিক বিজনেস আইডিয়া খুজে পাবেন? এই ব্যাপারে ১০টি কৌশলের ব্যাপারে আজকের এই আর্টিকেলে আলোচনা করব।  

১) আপনার নিজের মধ্যে কি দক্ষতা আছে সেটি এনালাইজ করুন

যেহেতু বিজনেস আপনার তাই আপনাকেই দায়িত্ব নিয়ে বিজনেসটি প্রতিষ্ঠিত করতে হবে এবং সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। কেউ আপনার হয়ে আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠিত করে দিয়ে যাবে না। হয়ত আপনাকে আর্থিক ভাবে সহযোগিতা করবে কিন্তু বিজনেস আপনাকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তাই প্রথমেই আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে যে আপনার কোন বিষয়ে দক্ষতা আছে? এবার চিন্তা করুন আপনার দক্ষতাকে কেন্দ্র করে কী ধরনের বিজনেস শুরু করা যায়। প্রয়োজনে কিছু স্কিল অর্জন করুন কারন স্কীল ছাড়া ব্যবসা টিকিয়ে রাখা এবং বড় করা সম্ভব নয়। আর অনলাইন ভিত্তিক বিজনেস শুরু করতে চাইলে আপনি MSB Academy প্লাটফর্মের “Online Earning” ক্যাটাগরির কোর্সগুলো করতে পারেন।

২) কাস্টমারের সাথে মন খুলে কথা বলুন

আপনি যেই সেক্টর নিয়ে ব্যবসা করতে চাচ্ছেন সেই সেক্টরের কাস্টমারদের সাথে প্রচুর কথা বলতে হবে এবং বোঝার চেষ্টা করুন, বর্তমান সলিউশনের কোথাও পেইন পয়েন্ট আছে কিনা? কাস্টমারের সমস্যা বোঝার চেষ্টা করুন, সে কোথায় বিরক্ত তা বোঝার চেষ্টা করুন। আবার কাস্টমার অনেক জায়গাতে বিরক্ত হলেও হয়ত সব জায়গাতে টাকা ইনভেস্ট করবে না। তাই এটা আপনাকে এনালাইজ করতে হবে কোন সমস্যাগুলার সমাধান কেনার জন্য কাস্টমার পেমেন্ট করতে রাজি আছে। কাস্টমারের সাথে যত বেশি কথা বলবেন তত নতুন নতুন আইডিয়া পাবেন। যা আপনার বিজনেস এগিয়ে নিতে অনেক বেশি সহায়তা করবে।

৩) যে সেক্টর নিয়ে কাজ করবেন সেটি নিয়ে ইন্টারনেটে ঘাঁটাঘাঁটি করুন

বর্তমান সময়ে মানুষের জানার এবং মত প্রকাশের বড় মাধ্যমে হল ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়া। আপনি যে সেক্টরে বিজনেস করবেন সেই লিখে গুগলে সার্চ দিলে এই সম্পর্কিত অনেক গ্রুপও পাবেন যেখানে এটি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা দুটিই দেখতে পারবেন। অনলাইনে রিলেভেন্ট গ্রুপ এবং ফোরামগুলাতে দেখুন মানুষ কোন ধরনের সমস্যাগুলা নিয়ে বেশি আলোচনা করে। যেই ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে কাজ করবেন সেই ইন্ডাস্ট্রির অন্য ব্র্যান্ড গুলার গুগল বিজনেসে রিভিউ দেখেন, দেখেন কাস্টমার কোন ইম্প্রুভমেন্ট স্কোপের ডিমান্ড করছে কিনা, যেটাতে আপনি কাজ করতে পারেন। এমনকি সেই সেক্টরের সাথে সম্পর্কিত পডকাস্ট সার্চ করে শুনতে পারেন। সাকসেসফুল বেক্তিদের আলোচনা শোনার মাধ্যমে আপনি নিজের বিজনেসে কি করবেন বা কি করলে বেশি ভালো হবে এই ব্যাপারে ভালো একটা ধারনা পেতে পারেন।

৪) অন্য সবার থেকে তুলনামূলক ভাবে ভাল এবং কম খরচে সলিউশন বের করার চেষ্টা করুন

মার্কেটে অনেক পণ্য বা সেবা রয়েছে যার সমস্যার সমাধান অনেক এক্সপেন্সিভ। যার কারণে অনেকেই এই প্রোডাক্ট গুলার দরকার মনে করলেও কিনতে পারে না। কিন্তু আপনি যদি সেই পণ্য অথবা সেবার তুলনামূলক ভাবে কম খরচে সলিউশন ডেভেলপ করতে পারেন, তাহলে কিন্তু এখানে অনেক বিজনেস অনেক বড় সুযোগ আছে। বর্তমানে টেকনোলজি ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক ব্র্যান্ড রয়েছে যারা এভাবে বিজনেস করছে। যেমন Realme, OPPO মোবাইল ব্র্যান্ড কিন্তু অনেকটা এই মডেলেই কাজ করছে।

আমরা কিন্তু সবাই জানি অ্যাপেল অনেক ভাল একটা ব্র্যান্ড। আর আইফোনের প্রাইস তাই অনেক বেশি এক্সপেন্সিভ। যার জন্য এটি অনেকের সাধ্যের বাহিরে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে Realme, OPPO মত আরও ব্র্যান্ড ভাল ভাল ফিচার দিয়ে কম দামে তাদের সেবা বা পণ্য মার্কেটে নিয়ে আছে। যার সুফল তারা বেশ ভালভাবেই পাচ্ছে।

৫) একই দক্ষতা কাজ লাগিয়ে মার্কেটে নতুন কিছু করার পরিকল্পনা করুন

আপনার বর্তমানে যে দক্ষতা আছে, তাকে কাজে লাগিয়েই আপনি নতুন ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। আপনাকে যেটা করতে হবে নতুন মার্কেট নিয়ে ভাবতে হবে। ধরেন আপনার বর্তমান দক্ষতায় যে বিজনেস শুরু করেছেন সেটি ঢাকর মধ্যে সার্ভিস বা সেবা দিচ্ছে, এখন আপনি চাইলেই এটি চট্রগ্রাম, খুলনা, রাজশাহীতে শুরু করতে পারেন। কিভাবে করবেন এটি নিয়ে পূর্বের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সেই ভাবে পরিকল্পনা করুন। হতে পারে আপনি অনলাইনে কাজ করে ইনকাম করেন শুধু বাংলাদশি ক্লায়েন্টদের সার্ভিস দিয়ে থাকেন। আপনি চাইলেই সেটা কিভাবে আমেরিকান, সিঙ্গাপুর,ভারত এই সকল বাহিরের ক্লায়েন্টদের কাছে এই দক্ষতাটাই কাজে লাগিয়ে কিভাবে ইনকাম করতে পারেন? সেই ব্যাপার চিন্তা করে ধীরে ধীরে স্টেপ নিতে হবে।

৬) ইনোভেশন কম হয় এমন ইন্ডাস্ট্রি খুঁজে বের করুন

ইনোভেশন আসলে যে কোন আইডিয়াতেই থাকতে পারে, টেকনোলজিতে হতে পারে, আবার কাজের মাঝেও কিন্তু ইনোভেশন থাকতে পারে। পৃথিবীতে এর আগে কেউ করেনি সেটাই যে ইনোভেশন তা ঠিক না। এক কথায় বলতে গেলে উদ্ভাবনী ক্ষমতার বাস্তবিক উপস্থাপনই হচ্ছে ইনোভেশন। সব ইন্ডাস্ট্রিতে কিন্তু সমানভাবে ইনোভেশন হয় না। অনেক ইন্ডাস্ট্রি আছে গত ২০ থেকে ২৫ বছর ধরেই একই জায়গায় থমকে আছে, সেখানে ইনোভেশন আনতে পারলে মার্কেট ধরা সহজ হয়। তাই এমন ইন্ডাস্ট্রি খুঁজে বের করতে পারেন যেখানে ইনোভেশন কম হয় এবং সেই ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে কাজ করতে পারেন।

৭) শুরুতে পার্ফেক্ট হবার চেষ্টা করবেন না

শুরুতে কোন কাজ শতভাগ পার্ফেক্টভাবে হয় না। আপনার প্রথম বিজনেস আইডিয়া নিয়ে যখন কাজ করবেন, এটা পার্ফেক্ট হবে এমন ভাবার দরকার নেই। প্রতিনিয়ত আপনাকে আপনার আইডিয়া এবং স্ট্রাটেজি মডিফাই করতে হবে এবং এটাই স্বাভাবিক। তাই পার্ফেকশনের চক্করে সময় নষ্ট করার দরকার নেই। মাথায় যে আইডিয়া ঘুরছে সেটা নিয়ে কাজ শুরু করে দিন, সেটার বাস্তব প্রয়োগ ঘটান। ধীরে ধীরে দেখবেন নতুন নতুন আইডিয়া তৈরি হবে এবং একটা সময় গিয়ে পার্ফেক্ট মনে হবে। শুরুতে যদি ১০০% পার্ফেক্টভাবে মাঠে নামতে চান তাহলে আর সেটা শুরুই করা হবে না। মনে রাখতে হবে সময়ের সাথে সাথে সব কিছুর মধ্যে পরিবর্তন আসে।

৮) ইতিবাচক মানুষের চারপাশে থাকুন

বিপণন গুরু বলে পরিচিত মেরি পোরটাস বলছেন, কারো চারপাশে যদি ইতিবাচক মানুষ সব সময় থাকে, তাহলে নিজের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা কিংবা ব্যর্থতা নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত থাকার কথা নয় তার।”আমার এজেন্সিতে আমরা এমন মানুষ নিয়োগ দেই, যারা আলো ছড়ান চারপাশে, যারা অন্যকে হীনমন্যতায় ডুবিয়ে দেন তাদের নয়। তিনি বলছেন, “যারা সব সময় সব পরিস্থিতিতে ইতিবাচক থাকেন, সব কাজ ‘পারব' বলে রাজি হয়ে যান ও সেটা পাবার জন্য নিজের সেরাটা দেন এমন মানুষ পছন্দ আমাদের। যারা নিজেরা এনার্জিতে ভরপুর থাকেন, তারা অন্যকেও উৎসাহ দিতে পারেন। যদি উন্নতি করতে চান, তাহলে যারা মনমরা থাকেন বা অহমপূর্ণ আচরণ করেন তাদের থেকে দূরে থাকুন। সব সময় ইতিবাচক চিন্তা করবেন এবং যারা ইতিবাচক ভাবে চিন্তা করে তাদের সাথে আপনার আইডিয়া শেয়ার করতে পারেন। হতে পারে এতে করে আরও নতুন ভাল কোন আইডিয়া আপনার মাথায় চলে আসতে পারে।

৯) দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করুন

একটি কথা আছে “দৃষ্টিভঙ্গি বদলান জীবন বদলে যাবে” অনেক সময়ই কোন খারাপ মুহূর্তে আমরা ভাবি আমাদের কবর হয়ে গেছে, বা আমরা ডুবেছি। কিন্তু সেটা অন্যভাবে ভাবা যায়, যেমন আমরা ভাবতে পারি নতুন কোন কিছুর বীজ বোনা হয়েছে। অভিনেত্রী কেলেসি ওকাফর বলছেন, “আমার স্থির বিশ্বাস, আপনাকে আসলে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে আপনি নিজের জীবন বা সিদ্ধান্ত সম্পর্কে কেমন মনোভাব পোষণ করেন। ইতিবাচকভাবে দেখার অভ্যাস করা দরকার আমাদের।” ইতিবাচক চিন্তাভাবনা ইতিবাচক আইডিয়া পেতে এবং সেটা নিয়ে কাজ করতে সহায়তা করবে।

১০) সমস্যার সমাধান বের করুন এবং সমাধানকে কেন্দ্র করে বিজনেস আইডিয়া সাজান

আমাদের প্রত্যেকের জীবনে এমন কিছু সমস্যা রয়েছে যা প্রায় সবার জীবনে কম বেশি রয়েছে। সবাই সেটা ফেইস করে কিন্তু সবাই সঠিক সমাধান পায় না। একজন প্রফেশনাল হিসেবে আপনি নিজে কিন্তু অনেক সমস্যার মধ্যে দিয়েই যাচ্ছেন এবং এর মধ্যে অনেক সমস্যা আছে যেটা আপনার মত আরও অনেকের জন্যই সমস্যা। তাই এরকম সমস্যাগুলার সমাধান বের করার জন্য কাজ করুন এবং এর সমাধান বের করে ফেললে কিন্তু আপনি সেই সমাধানটাকে ঘিরেও আপনার বিজনেস আইডিয়া জেনারেট করতে পারেন।

পরিশেষে একটি কথা, সময়ের সাথে আপডেট থাকার চেষ্টা করুন এবং স্কিল অর্জন করার চেষ্টা করুন। আর উপরের যে পয়েন্টগুলি নিয়ে আলোচনা করলাম এই ভাবে চিন্তা করুন দেখবেন অনেক বিজনেস আইডিয়া পেয়ে যাবেন। তবে সময় নষ্ট না করে নিজের মধ্যে যে দক্ষতা রয়েছে সেটা কাজে লাগান এবং শুরু করে দিন। একদিন পর শুরু করলেন মানে অন্যদের থেকে এক দিন পিছিয়ে গেলেন।

Leave a Reply