Blog

অ্যানিমেশন কি? 2D কার্টুন অ্যানিমেশন তৈরি শিখতে কি কি দরকার

অ্যানিমেশন নামটির সাথে আমরা বেশ পরিচিত। সময়ের সাথে সাথে প্রযুক্তির উন্নতির ফলে টেকনোলজিতে যে বিশাল পরিবর্তন বা উন্নয়নের ধারা চলছে তারই একটি বাস্তব রূপ অ্যানিমেশন। অল্প সময়ের টিভি বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে বড় পর্দার মুভি সব সেক্টরে এখন অ্যানিমেশন এর ব্যবহার রয়েছে। চাকরী থেকে শুরু করে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলাতে ভবিষ্যতে এর ব্যবহার এবং চাহিদা আরও বাড়বে। আপনার যদি অ্যানিমেশন এর প্রতি আগ্রহ থাকে এবং ইচ্ছা থাকে অ্যানিমেশন নিয়ে ক্যারিয়ার গড়ার তাহলে আজকের এই ব্লগটি আপনার জন্য। অ্যানিমেশন কি? কিভাবে শিখবেন? শিখতে কি কি লাগবে এবং ক্যারিয়ার হিসেবে অ্যানিমেশন কেমন? সবকিছু নিয়ে আজকে আলোচনা করা হবে।

অ্যানিমেশন কি?

সাধারণত অ্যানিমেশন বলতে আমরা কাটুনকে বুঝে থাকি। অ্যানিমেশন হচ্ছে এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে অনেকগুলো স্থির চিত্রকে ধারাবাহিকভাবে সাজিয়ে ভিডিও আকারে তৈরি করা হয়। অর্থাৎ কিছু স্থির বস্তু অ্যানিমেশন এর মাধ্যমে গতিশীল হয়ে উঠে। অ্যানিমেশন হচ্ছে স্থির চিত্রের একটি ক্রম যেগুলোকে বিশেষ প্রক্রিয়া লক্ষ্য করলে জীবন্ত ও সচল বলে মনে হয়। অ্যানিমেশন অনেক ধরনের হতে পারে। তবে বেশি জনপ্রিয় হল 2D এবং 3D অ্যানিমেশন।

অ্যানিমেশনের প্রকারভেদ

১) ট্র্যাডিশনাল অ্যানিমেশন (Traditional Animation)

ট্র্যাডিশনাল অ্যানিমেশন এর সবচেয়ে প্রাচীন পদ্ধতি। যেখানে অ্যানিমেটরকে প্রতিটা ফ্রেম হাতে আঁকতে হয়। ট্র্যাডিশনাল অ্যানিমেশন আঁকার জন্য একটি বড় লাইট টেবিল ব্যবহার করা হয়। যার ফলে অ্যানিমেটর তার পূর্ববর্তী অংকনের সাথে মিলিয়ে তার পরবর্তী ফ্রেম আঁকতে পারেন। এই অ্যানিমেশনে প্রতি সেকন্ডে ১২ টি ফ্রেম ব্যবহার করা হয়।

২) মোশন গ্রাফিক্স অ্যানিমেশন (Motion Graphics Animation)

এই ধরনের অ্যানিমেশন সধারনত কমার্শিয়াল এবং প্রমোশন্যাল কাজে ব্যবহার করা হয়। মোশন গ্রাফিক্স অ্যানিমেশন অন্য সকল অ্যানিমেশন থেকে আলাদা। এটা কোন ক্যারেক্টার বা গল্পকে সামনে রেখে তৈরি অ্যানিমেশন না। মোশন গ্রফিক্স বিভিন্ন আর্ট , আর্টিকেল , গ্রাফিক্যাল ইলিমেন্ট এর মিশ্রন। কমার্শিয়াল এপ্লিকেশন , টিভি প্রমো এমন কি ফিল্ম ওপেনিং টাইটেল সবই মোশান গ্রাফিক্স অ্যানিমেশন এর কাজ। মোশন অ্যানিমেশনের জন্য Adobe After Effects একটি বহুল জনপ্রিয় সফটওয়্যার।

৩) স্টপ মোশন অ্যানিমেশন (Stop Motion Animation)

এই অ্যানিমেশনের সকল চরিত্র ও বস্তু বাস্তব। এই অ্যানিমেশন শুরুই হয় মডেলের ছবি তোলার মাধ্যমে। এরপর মডেলটি বিভিন্ন জায়গায় সরিয়ে বারবার ছবি তুলে পরপর সাজিয়ে ভিডিও বানানো হয়। এইভাবে তৈরি হয় স্টপ মোশন অ্যানিমেশন। স্টপ মোশন ট্র্যাডিশনাল অ্যানিমেশন এর মতই শুধু মাত্র পার্থক্য হল এখানে সব বস্তু বাস্তব ব্যবহার করা হয়।

৪) 3D অ্যানিমেশন (3D Animation)

3D অ্যানিমেশন কম্পিউটার অ্যানিমেশন নামেও পরিচিত বর্তমানে সবচেয়ে ব্যবহৃত অ্যানিমেশন পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে ক্যারেক্টার মুভমেন্ট থেকে শুরু করে কম্পোজিশন ,ট্যকনিকাল স্কিল সবই খুব সুন্দর ও নিখুঁত ভাবে উপস্থাপন করা হয়। অ্যানিমেটর 3D প্রোগ্রামের স্পেশাল নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে খুব সহজেই অ্যানিমেশন এর চরিত্রকে এবং চরিত্রের যে কোন অংশকে যেকোন দিকে এবং সব দিক থেকে ইচ্ছামতো নাড়াচাড়া করাতে পারেন। তারপর প্রয়োজনিয় কি ফ্রেম দ্বারা অংশগুলুকে প্রয়োজনিয় অবস্থানে সেট করিয়ে অ্যানিমেশন তৈরি করেন।

৫) 2D অ্যানিমেশন (2D Animation)

2D অ্যানিমেশন হল ভেক্টর ভেইজড অ্যানিমেশন। এই অ্যানিমেশন এর জন্য খুব সহজে সফটওয়্যার এর মাধ্যেম ক্যারেক্টারের প্রতিটা শারীরিক অংশ প্রয়োজন মত নাড়ানো যায়। অন্য সকল অ্যানিমেশন থেকে এই অ্যানিমেশন তৈরি কিছুটা সহজ। ছোট বাচ্চাদের কাছে এই অ্যানিমেশন বেশ জনপ্রিয়। যে কেউ এই অ্যানিমেশন শিখতে পারে যদি শিখার ইচ্ছা থাকে এবং কম্পিউটারের ব্যবহার ভাল ভাবে জানে। 

অ্যানিমেশন তৈরিতে ব্যবহৃত সফটওয়্যার

অ্যানিমেশন যেমন বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে, তেমনি এক এক ধরণের অ্যানিমেশন তৈরিতে বিভিন্ন রকম সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-

  • Adobe Animate
  • Adobe Character Animator
  • Adobe After Effects
  • Clip Studio Paint
  • CelAction2D
  • Cartoon Animator 4

অ্যানিমেশন তৈরির পক্রিয়া

অ্যানিমেশন তৈরি কিন্তু একবারে হয়ে যায় না। বেশ কিছু পক্রিয়া রয়েছে। এই প্রক্রিয়াগুলো ধাপে ধাপে শেষ করে ফাইনালি তৈরি হয় একটি কমপ্লিট অ্যানিমেশন ভিডিও। এবার চলুন জেনে নেয়া যাক অ্যানিমেশন তৈরির সেই ধাপগুলো সর্ম্পকে।

একটি ভাল গল্প: অ্যানিমেশন তৈরি করার প্রথম ধাপটাই হচ্ছে গল্প ঠিক করা। এমন একটা গল্প যেটা আপনি ভালো বলতে পারেন এবং দর্শকও সেটা দেখতে পছন্দ করবে। তাই অ্যানিমেশন এর প্রথম ধাপ হল গল্প তৈরি করা এবং সেই গল্প অনুসারে পরবর্তী ধাপে এগিয়ে যাওয়া। যেহেতু আপনি অ্যানিমেশন কাটুনের মাধ্যমে একটি গল্প তুলে ধরবেন তাই গল্প তৈরি ব্যাপারে আপনাকে সময় দিয়ে তৈরি করতে হবে।

ভাল মানের স্ক্রিপ্ট: গল্প তৈরি হলে সেই গল্পের সাথে মিল রেখে স্ক্রিপ্ট তৈরি করতে হবে। মনে রাখবেন একটি সৃজনশীল স্ক্রিপ্টের প্রতিটি লাইন মূল থিমে ফিরে আসবে। তাই স্ক্রিপ্ট লেখার সময় শব্দ, ভাষা সব কিছু দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। যতটা সম্ভব স্ক্রিপ্ট এর বাক্যগুলো সংক্ষিপ্ত এবং মিষ্টি করার চেষ্টা করবেন।

কনসেপ্ট আর্ট: স্ক্রিপ্ট প্রস্তুত করার পর ভিজ্যুয়াল স্টাইল প্রতিষ্ঠার শুরু হয় অ্যানিমেশনের কনসেপ্ট আর্ট অর্থাৎ স্টাইল ও ছবির প্যাটার্ন তৈরির কাজ দিয়ে। স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী হাতে আঁকা হয় প্রতিটি দৃশ্য। তখনই ঠিক হয়ে যায় যে কোন দৃশ্যে কোথায় কীভাবে কোন চরিত্রগুলো দেখা যাবে। সাথে ব্যাকগ্রাউন্ডের জন্য কী কী প্রয়োজন, চরিত্রগুলোর সাথে আর কোনো জিনিস দেখা যাবে নাকি ইত্যাদি আঁকা হয়।

স্টোরিবোর্ড: অ্যানিমেশন তৈরির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপগুলোর একটা হচ্ছে স্টোরিবোর্ড। একটা চরিত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত আর কয়টি চরিত্র আছে, কার সঙ্গে কী সম্পর্ক- সব লিখে ফেলতে হবে। কোনো একটা চরিত্রের হয়তো বিশেষ কোনো গুণ আছে, সেগুলো সব টুকে রাখতে হবে। স্টোরিবোর্ড এর মাধ্যমে আপনি অ্যানিমেশনের দৃশ গুলীর পূর্বরূপ দেখতে পারবেন।

অ্যানিমেটিক: অ্যানিমেটিক হল আপনার স্টোরিবোর্ডের মোবাইল ভার্সন। কারণ এখানে আঁকার পাশাপাশি ছবি, সংগীত ও ডাবিংয়ের খসড়া করে নিতে হবে। তারপর তিনটা মিলিয়ে নিলে অ্যানিমেশনের একটা প্রাথমিক চেহারা দাঁড়িয়ে যাবে। আর এর মাধ্যমেই বোঝা যাবে অ্যানিমেশনটা কেমন হতে যাচ্ছে।

প্রিভিস বা প্রি-ভিজ্যুয়ালাইজেশন: অ্যানিমেশনের কাজ শুরু করার আগের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হচ্ছে প্রিভিস বা প্রি-ভিজ্যুয়ালাইজেশন। প্রিভিস হলো অ্যানিমেটিকের পরবর্তী ধাপ, যার উপর থ্রিডি মডেল ব্যবহার করা হয়।

সাউন্ড ডিজাইন: সাউন্ড হিসেবে এমন কোনো শব্দ বা মিউজিক ট্র‍্যাক ব্যবহার করতে হবে যা ভিডিওর সাথে মানানসই। চাইলে আপনি আপনার নিজের ভয়েস ওভারের মাধ্যমে আপনি নিজেই সেসব আওয়াজ করতে পারবেন।

ক্যারিয়ার হিসেবে 2D অ্যানিমেশন কেমন?

এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে ক্যারিয়ার হিসেবে অ্যানিমেশন কেমন? আসলে ক্যারিয়ার হিসেবে অ্যানিমেশন অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোতে গেলেই দেখা যায় কতটা মূল্যায়ন রয়েছে এই কাজগুলোর। প্রতি মিনিট অ্যানিমেশন তৈরির উপর সেখানে পে করা হয়। ফ্রিল্যান্সিং ছাড়াও আপনি চাইলে অফলাইনেও ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন অ্যানিমেশন শিখে। বর্তমানে ছোট বড় কর্পোরেট অফিসগুলোতে অ্যানিমেটরের অনেক চাহিদা রয়েছে। এমনকি আপনি চাইলে টিভি চ্যানেলগুলোতেও বেশ ভালো বেতনের জব করতে পারবেন।

2d animation career

এছাড়াও বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়াতে মার্কেটিং এর জন্য অ্যানিমেশন এর ব্যবহার করা হয়। এমনকি আপনি নিজে কোন নিশের উপর ইউটিউবে চ্যানেল খুলেও চাইলে প্রচুর ইনকাম করতে পারেন। বাংলাদেশে এমন অনেক অ্যানিমেশন চ্যানেল রয়েছে যাদের শুধুমাত্র ইউটিউবের অ্যাড (Google Adsense) থেকেই ৩-৪ হাজার ডলার প্রতি মাসে ইনকাম হয়। Bengali Fairy Tales, Ssoftoons Animation, Jibonto Animation, Bangla Animation Golpo এর মতো অনেক ইউটিউব চ্যানেল প্রতি মাসে ইনকাম করছে হাজার হাজার ডলার। সুতরাং বুঝতেই পারছেন ইনকামের অনেক রাস্তা খুলে যাবে আপনি যদি শুধু মাত্র এই অ্যানিমেশন কার্টুন ভিডিও তৈরিতে এক্সপার্ট হতে পারেন।

কিভাবে শিখবেন 2D অ্যানিমেশন?

আশা করি এত সময় ধরে আর্টিকেলটি পড়ে অ্যানিমেশন কি? কত প্রকার? ক্যারিয়ার হিসেবে কেমন এবং কমপ্লিট অ্যানিমেশন তৈরির ধাপ গুলো সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন। এখন আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে কি ভাবে এবং কোথায় থেকে শিখবেন অ্যানিমেশন? আপনাদের জন্য সুখবর হচ্ছে আপনারা এখন চাইলে এমএসবি একাডেমী থেকে 2D অ্যানিমেশন শিখে সফল ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। যারা অ্যানিমেশনের কাজ শিখে ক্যারিয়ার গড়তে চান এবং অ্যানিমেশন কে প্রফেশনাল হিসেবে নিতে চান তাদের জন্য রয়েছে Learn 2D Cartoon Animation And Make Money $$$ Online এই কোর্সটি। অ্যানিমেশন তৈরির জনপ্রিয় সফটওয়্যার Adobe Animate দিয়ে ২ডি অ্যানিমেশন তৈরি শিখানো হয়েছে।

Adobe Animate দিয়ে প্রফেশনাল লেভেলের কার্টুন মেকিং এর জন্য যা যা জানা এবং শিখা দরকার সেইসব কিছুর কম্বিনেশনে এই প্রজেক্ট ভিত্তিক কার্টুন অ্যানিমেশন কোর্সটি তৈরি করা হয়েছে। ফাস্ট অ্যানিমেশন তৈরির প্রসেস, প্রিমিয়াম রিসোর্স শেয়ার, ইউটিউব থেকে সহজেই ইনকাম মাল্টিপ্লাই করার টেকনিক ছাড়াও অনেক সিক্রেট কোর্সে শেয়ার করা হবে। কোর্সটি একবার এনরোল করলে পেয়ে যাবেন লাইফটাইম কোর্স এক্সেস, লাইফটাইম আপডেট, এবং লাইফটাইম কোর্স আপডেট। তাই ২ডি কার্টুন অ্যানিমেশন তৈরি করে অনলাইন থেকে “Good Amount of Money” ইনকাম করতে চাইলে আজই জয়েন করুন কোর্সটিতেঃ https://www.msbacademy.com/course/2d-animation-masterclass

আশা করি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ে অ্যানিমেশন সম্পর্কে ভালো একটা ধারণা পেয়েছেন। যদি প্রফেশনালভাবে অ্যানিমেশন শিখতে চান, অ্যানিমেশন শিখে ক্যারিয়ার গড়তে চান তাহলে সময় নষ্ট না করে এমএসবি একাডেমীর ২ডি অ্যানিমেশন কোর্সটি করে ফেলুন। কারণ আপনি যদি বর্তমান এবং ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেন তাহলে, এই একটি কাজ যদি আপনি প্রফেশনাল ভাবে শিখতে পারেন তাহলে অফলাইন এবং অলাইন দুই সেক্টরে সাকসেসফুল ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন।

Comments

  • User Avatar
    tanvirkhan34
    February 12, 2023

    লেখাটি পরে অনেক ভাল লেগেছে। খুব জলদি কোর্সটি করে ফেলব।

  • User Avatar
    Shamsur Rahman Jishan
    April 21, 2023

    আমি অনেক চেস্টা করেও এড হতে বা কোসটি কিনতে পারতেছিনা আপসোস

  • User Avatar
    mohon48
    May 9, 2023

    আমি আপনাদের এই কোর্সটি করেছি । এক কথায় অসাধারণ একটি কোর্স।

  • User Avatar
    mehedi18
    May 9, 2023

    কোর্সের মত এই ব্লগটি পড়ে অনেক কিছু বুঝতে পারলাম। ধন্যবাদ

Leave a Reply