Blog

Google Maps থেকে ইনকাম করার ৫টি সেরা উপায়

আমরা যারা স্মার্ট ফোন ব্যবহার করি তার সবাই গুগল ম্যাপ মোবাইল অ্যাপটি সম্পর্কে কম বেশি জানি। সার্চ ইঞ্জিনে গুগলের অন্যতম জনপ্রিয় অ্যাপ হচ্ছে গুগল ম্যাপস। যা জীবনকে করেছে সহজ থেকে সহজতর। বিশ্বের যে প্রান্তেই যান না কেন গুগল ম্যাপের কল্যাণে রাস্তা চিনতে অসুবিধা হবে না। সঙ্গে একটি স্মার্টফোন থাকলেই হলো। সার্চ ইঞ্জিন গুগলের ম্যাপের সাহায্যে এখন যে কোনো স্থানে সহজেই যাতায়াত করা যায়।

অবস্থান, দূরত্ব ও সেখানে পৌঁছাতে কোন পরিবহনে কত সময় লাগবে, এমনকি সেখানে যাওয়ার কতগুলো রাস্তা আছে সবই জানতে পারা যায় গুগল ম্যাপ এর সাহায্য। তবে শুধু ঠিকানা খোঁজার জন্য নয় এবার গুগল ম্যাপের মাধ্যমে ইনকামও করতে পারবেন। Google Maps দিয়ে কিভাবে আয় করবেন তার ৫ টি সেরা উপায় নিয়ে আজকের এই ব্লগে বিস্তারিত আলোচনা করব।

গুগল ম্যাপ (Google Maps) কি?

Google Map হলো একটি ওয়েব ভিত্তিক ম্যাপিং প্ল্যাটফর্ম এবং কনজ্যুমার অ্যাপ্লিকেশন, যা ২০০৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি Google দ্বারা তৈরি করা হয়েছে। এটি স্যাটেলাইট চিত্র, এরিয়াল ফটোগ্রাফি, রাস্তার মানচিত্র, ইন্টারেক্টিভ 360° রাস্তার দৃশ্য, রিয়েল-টাইম ট্র্যাফিক পরিস্থিতি, পায়ে, গাড়িতে, বাইকে, বিমানে এবং পাবলিক ট্রান্সপোর্টে ভ্রমণের জন্য রাস্তার নির্দেশনা প্রদান করে থাকে। মাসে ১৫৪ মিলিয়নের উপর ব্যবহারকারী গুগল ম্যাপ ব্যবহার করে থাকে। অ্যান্ড্রয়েড (Android) এবং আইওএস (ISO) ডিভাইসগুলির জন্য Google Map অ্যাপটি সেপ্টেম্বরের ২০০৮ সালে প্রকাশিত হয়েছিল এবং ডেডিকেটেড পার্কিং সহায়তা সহ পর্যায়ক্রমে জিপিএস নেভিগেশন অফার করেছিলো সে সময়ে।

গুগল ম্যাপ ২০০৫ সালে প্রকাশিত হলেও ২০১৩ সালের আগস্টে এসে এটি বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্মার্টফোন অ্যাপ হিসেবে পরিচিতি পায়। যার ধারাবাহিকতা বর্তমানে আরও বেড়েছে। বিশ্বব্যাপী স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের ৫৪% এরও বেশি মানুষ এটিকে মানচিত্র এবং দিক নির্দেশনামূলক অ্যাপ হিসেবে ব্যবহার করে। ২০১৭ সালের মে মাসে, অ্যাপটি ইউটিউব, ক্রোম,জিমেইল,গুগল সার্চ এবং গুগল প্লে সহ আরও কয়েকটি গুগল পরিষেবা অ্যান্ড্রয়েডে প্রায় ২ বিলিয়ন ব্যবহারকারী রয়েছে বলে রিপোর্ট হয়েছে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন যে, Google Maps এর পরিধি কতটা বিশাল ও জনপ্রিয়।

গুগল আমাদের কিভাবে এত তথ্য দেয়?

আপনার মনে একটি প্রশ্ন এখন আসতে পারে যে, গুগল ম্যাপ কোথা থেকে কিভাবে তথ্য পায় বা প্রশ্নের মত কীভাবে কাজ করে। এইটা আসলে আমাদের সবার মনে কম বেশি প্রশ্ন থাকে। এবার চলুন জেনে নেয়া যাক গুগল কিভাবে এই সকল তথ্য সংগ্রহ করে এবং কিভাবে কাজ করে। বেইজ ম্যাপ পার্টনার প্রোগ্রাম মার্কিন যুক্তরাষ্টের বিভিন্ন সরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান থেকে ভেক্টর ডাটা সংগ্রহ করে, যেমনঃ বন, জাতীয় উদ্যান, রেলওয়ে ও ভূতাত্ত্বীক জরিপ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি। সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠাণ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত উপগ্রহ ও বিমান থেকে হাই রেজুলেশনের চিত্র সংগ্রহ করে গুগল ম্যাপ। গুগলের কোনো নিজস্ব সেটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহ নেই।

গুগল স্মার্ট ফোন থেকে তার অ্যাপের মাধ্যমে লোকেশন, সঠিক সময়, দূরত্ব, রাস্তা, রাস্তার যানজট, বিকল্প রাস্তা বিশ্লেষণ করে তার ব্যবহারকারীদের তথ্য দেয়। এছাড়াও গুগল তার নিজস্ব যানবাহন দিয়ে বিভিন্ন স্থানে টহল দেয়। ফলে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে সমস্ত রাস্তা, এলাকাগুলো ও আবাসিক ভবনের চিত্র ডিজিটাল ক্যামেরায় বৃত্তাকারে ধারণ করে ব্যবহারকারীকে তথ্য প্রদান করে। এইভাবে গুগল ম্যাপ কাজ করে।

গুগল ম্যাপ ব্যবহার করে কিভাবে ইনকাম করবেন?

গুগল ম্যাপ বিশ্বের সবচেয়ে বড় অনলাইন ম্যাপিং এবং ন্যাভিগেশন প্ল্যাটফর্ম। এটি প্রতিদিনই লক্ষ লক্ষ মানুষ ব্যবহার করে। এই বিশাল অডিয়েন্সকে লক্ষ্য করে ম্যাপ থেকে আয় করার বেশ কিছু উপায় রয়েছে। এর মধ্যে নতুন তথ্য যোগ করা, লোকাল গাইড, ভ্রমণ গাইডলাইন, লোকাল SEO এবং রিভিউ সাবমিট করা অন্তর্ভুক্ত। এখন আমি আপনাদের এমন ৫ টি উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত বলব যার মাধ্যমে আপনিও এই প্লাটফর্ম থেকে আয় করতে পারবেন-

১) গুগল ম্যাপে নতুন তথ্য অ্যাড করে আয়

গুগল ম্যাপে কিন্তু নতুন তথ্য অ্যাড করা যায় যা আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই জানেন না যে, কীভাবে গুগল-ম্যাপে নতুন লোকেশন, ছবি ইত্যাদি অ্যাড করতে হয়। তাই আপনার আসেপাশে বা কেউ যদি নতুন কোন ব্যবসা দেয়, তার উচিৎ সেটা Google Map -এ যোগ করা। যাতে পাশেপাশের সহ সকল গ্রাহকরা সহজেই গুগল ম্যাপ এ সার্চ দিয়ে দোকান এর লোকেশন খুঁজে পায়। কিন্তু সব বিজনেসের মালিকরা তো আর নিজের দোকানের ইনফরমেশন নিজে-নিজে গুগল ম্যাপে অ্যাড করতে পারে না। আবার অনেকেই এই বিষয়ে জানেই না। আর এই কারণে অনেক নতুন বিজনেসম্যান বা দোকান মালিক তাদের ব্যবসা বা কোম্পানির ঠিকানা গুগল-ম্যাপে অ্যাড করার জন্য এক্সপার্টদের খুঁজে থাকে।

এখন আপনি যদি গুগল মাপে নতুন লোকেশন বা ঠিকানা অ্যাড করার সঠিক নিয়ম জানেন তাহলে এই সার্ভিসটি দিয়ে ইনকাম করতে পারবেন। একটা সময় দেখবেন অনেক দোকান মালিক, বা কোম্পানি মালিক আপনার কাছে আসবে এই সার্ভিস নেয়ার জন্য। গুগলে ম্যাপে অ্যাড্রেস যোগ করার উপায় হলোঃ

  • প্রথমে স্মার্টফোনে থাকা গুগল ম্যাপ অ্যাপটি চালু করতে হবে। আর অবশ্যই স্মার্টফোনে গুগল একাউন্ট লগইন করা থাকতে হবে।
  • গুগল ম্যাপ চালু করার পর কন্ট্রিবিউশন অপশন থেকে প্লাস আইকনে ক্লিক করতে হবে। তারপর উপরের Add Place-এ ক্লিক করতে হবে।
  • তারপর উপরের নামের ঘরে অফিস অথবা প্রতিষ্ঠান যে স্থানটি যুক্ত করতে চান,সে নামটা দিতে হবে। এবার নিচের ক্যাটাগরি থেকে সিলেক্ট করুন যে আপনি কি অ্যাড করবেন যেমন দোকান অ্যাড করলে store অপশন বেছে নিবেন। বাসা করলে House বেছে নিবেন।
  • তারপর লোকেশনের ছবি, মোবাইল নাম্বার ইত্যাদি অ্যাড করবেন।
  • প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সেভ ক্লিক করলেই কাজ শেষ।

লোকেশনটি ম্যাপে অ্যাড করার জন্য উপরের সেন্ড আইকনে যুক্ত করতে হবে। এরপর একটি মেইল জানিয়ে দেয়া হবে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে আপনার অ্যাড্রেসটি রিভিউ করে গুগল ম্যাপে অ্যাড করা হবে। যদিও অ্যাড্রেসটি অ্যাড হতে ২৪ ঘন্টা সময় লাগবে না।

২) লোকাল গাইড (Local Guide) হয়ে আয়

লোকাল গাইড (Local Guide) হচ্ছে, Google Maps-এর একটি স্পেশাল প্রোগ্রাম, যেখানে যেকোনো মানুষ যোগদান করতে পারে এবং এখান থেকে একটি ভালো পরিমাণে টাকা ইনকাম করা যায়। তাছাড়া একজন লোকাল গাইডার বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করে থাকেন এবং ম্যাপসে বিভিন্ন তথ্য, বর্ণনা এবং ছবি সাবমিট করে থাকেন।

এখন লোকাল গাইড হিসেবে কিভাবে আয় করবেন? মনে করুন, আপনি একটি নতুন রেস্টুরেন্ট বা দোকানে যাচ্ছেন। তাহলে সেই রেস্টুরেন্টটি কেমন বা তাদের সার্ভিস কেমন এ রিভিউ বা রেটিং দিতে হবে। এছাড়াও, রেস্টুরেন্টের ছবি আপলোড করা, ঠিকানা অ্যাড করা এবং আরও অনেক কিছু করার মাধ্যমে আপনি Google Maps-এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করার সুযোগ হয়েছে।

৩) টুরিস্ট গাইড হিসেবে আয়

বর্তমান সময়ে পর্যটক শিল্প ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়। মানুষের আয় বেড়ে যাওয়া এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ার ফলে এখন মানুষ একটু সময় সুযোগ পেলে দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়ায়। পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ আছে যারা ভ্রমণ করতে ভালোবাসে। এক কথায় বলতে পারেন তারা এক ধরনের ভ্রমন-পিপাসু। এখন আবার অনেক মানুষ তাদের ইউটিউব চ্যানেল এর জন্য ব্লগের ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করার জন্য ট্রাভেল ব্লগ করে থাকে। এর জন্য তাদের দেশ বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করতে হয়। টুরিস্টরা এক দেশ থেকে আরেক দেশে ঘোরাঘুরি করতে খুবই পছন্দ করে। কিন্তু যখন তারা কোনো দেশে ঘুরতে যায় তখন সর্বপ্রথম যে সমস্যার সম্মুখীন হয়, তা হলো সঠিক রাস্তা না চেনা এবং সেই দেশের সুন্দর লোকেশন গুলা কোথায় এবং কিভাবে যেতে হবে সেই বিষয়ে তাদের ক্লিয়ার কোন ধারনা থাকে না। অনেকই জানে না কি করতে হবে, কীভাবে করতে হবে, কোথায় কীভাবে যেতে হবে।

আপনি যদি লোকাল টুরিস্ট গাইড হয়ে কাজ করতে পারেন তাহলে আপনি টুরিস্টকে Google ম্যাপস এর সাহায্য নিয়ে নির্দিষ্ট জায়গা ঘুরিয়ে দেখাতে পারেন এবং এর জন্য টুরিস্টদের কাছ থেকে পারিশ্রমিক হিসবে ভাল টাকা আয় করতে পারবেন। এইভাবে আপনি গুগল-ম্যাপ এর সাহায্য নিয়ে টুরিস্টদের গাইড করার মাধ্যমে মাস শেষে ভালো ইনকাম করতে পারবেন। তবে এই ক্ষেত্রে আপনাকে সুন্দর একটি টুরিস্ট গাইডলাইন এজেন্সি খুলতে হবে। এবং সেটাকে সুন্দর করে মার্কেটিং করতে হবে। আর এখন ত মার্কেটিং অনেকটা সহজ হয়ে গিয়েছে। ফেসবুকে একটি পেইজ ওপেন করে আপনি সুন্দর করে ফ্রি এবং পেইড মার্কেটিং করতে পারবেন। আর ফেসবুক মার্কেটিং নিয়ে আমাদের একটি কোর্স রয়েছে যেখানে প্রফেশনাল ফেসবুক পেইজ খুলা থেকে শুরু করে মার্কেটিং এর সকল টেকনিক শিখানো হয়েছে।

৪) লোকাল SEO সার্ভিস দিয়ে আয়

বর্তমানে SEO প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। কারণ প্রতিদিন হাজার হাজার নতুন ওয়েবসাইট ওপেন হচ্ছে এবং সবাই চায় তার কোম্পানি বা তার সার্ভিস যেন সার্চ ইঞ্জিনের প্রথমে আসে। কারণ কেউ যখন গুগলে কিছু লিখে সার্চ দেয় তখন সার্চ ইজিনের প্রথম পেজে শুরুর দিকে যে ওয়েবসাইট বা লিঙ্ক গুলা আসে মানুষে সেখানে বেশি ক্লিক করে। তাই সবার টার্গেট থাকে প্রথমে থাকার। আর এই কাজটা মূলত SEO এর মাধ্যমে করা হয়। সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন যাকে সংক্ষেপে SEO বলা হয়। লোকাল SEO মানে হলো একটি প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসাকে একটি নির্দিষ্ট দেশের অথবা নির্দিষ্ট জায়গার জন্য গুগল সার্চ ইঞ্জিনে শীর্ষে বা শুরুর দিকে নিয়ে আসা। আপনি যখন বিভিন্ন কোম্পানির নাম লিখে গুগলে সার্চ করেন তখন একটু লক্ষ্য করলে দেখবেন যে, কোম্পানির লোকেশন, যোগাযোগের জন্য তথ্য, ওয়েবসাইট, রেটিং, পর্যালোচনা এবং রিভিউ সবকিছু আপনার সামনে চলে আসে। এটা সম্ভব হয় লোকাল SEO করার কারণে।

আপনি যদি লোকাল এসইও জানেন, তাহলে আপনি আপনার বিজনেসকে Google ম্যাপসে #1 র‍্যাংক করে, ট্র্যাফিক এনে সেলস বৃদ্ধি করে দেওয়ার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করতে পারেন। আপনি যদি Google সার্চ থেকে অর্থ-উপার্জন করতে চান, তবে লোকাল SEO এর কাজ ভাল ভাবে শিখতে পারলে প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা ইনকাম করতে পারবেন।

৫) গুগল রিভিউ দিয়ে আয়

ছোট বড় প্রতিটা প্রতিষ্ঠান চায় গুগলে যেন তাদের সুন্দর ভাল কিছু রিভিউ থাকে। অনেক সাইট রয়েছে যারা মূলত এই ধরনের কাজ গুলা করে থাকেন। আপনি যদি তাদের হয় গুগলে গিয়ে সেই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে একটা সুন্দর রিভিউ দেন তাহলে তারা তার বিনিময়ে আপনাকে একটা নিদিষ্ট পরিমাণ টাকা দিবে। আপনার সুন্দর রিভিউ দেখে সেই সাইটের প্রতি মানুষের বিশ্বাস এবং আস্থা অনেক বাড়বে।

পরিশেষে একটি কথা, কোন কাজই সহজ না আবার খুব বেশি কঠিন ও না। তবে অনলাইন থেকে ইনকাম করতে গেলে আপনাকে একটু সময় নিয়ে কাজ করতে হবে। Google Maps দিয়ে আয় করা আসলে বেশ সহজ, কিন্তু সময় সাপেক্ষ। আপনি অবশ্যই আয় করতে পারেন, তবে এর জন্য অনেক ধৈর্যের প্রয়োজন হবে এবং কাজ করে যেতে হবে।

Leave a Reply