Blog

মাইক্রোসফট এক্সেল কি? মাত্র ৩০ মিনিটে শিখে ফেলুন MS Excel এর কাজ

MS Excel bangla tutorial

আপনি যদি মাত্র একটি সফটওয়্যারের কাজ খুব ভালভাবে জানেন তাহলে অনলাইন এবং অফলাইন দুই সেক্টরে আপনার এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সফল ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন। ছোট হোক বা বড় হোক সকল সেক্টরে একটি সফটওয়্যারের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম সেটি হল মাইক্রোসফট এক্সেল। Microsoft Excel এর নাম শুনে নাই এমন মানুষ কমই পাওয়া যাবে। যখনই কোন সহজ বা জটিল হিসাব নিকাশ সামনে আসে তখন প্রথমে মাথায় আসে মাইক্রোসফট এক্সেলের কথা। দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে কর্মজীবন সবক্ষেত্রে যে সফটওয়্যারের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি হয় সেটা হল মাইক্রোসফট এক্সেল।

Excel শব্দের আভিধানিক অর্থ হল শ্রেষ্ঠতর হওয়া বা সীমা অতিক্রম করা। Microsoft Excel সমস্যা সমাধানের জন্য অন্যান্য অনেক প্রোগ্রাম থেকে শ্রেষ্ঠতর। মাইক্রোসফট এক্সেল হল মানুষের সময় বাঁচানোর যুগান্তকারী আবিষ্কার। যোগ, বিয়োগ, গুন, ভাগ, থেকে শুরু করে অনেক বড় বড় হিসাব নিকাশ মাত্র কয়েক মিনিটে করে ফেলা যায় মাইক্রোসফট এক্সেল দিয়ে। ডাটাভিত্তিক নির্ভুল তথ্যের জন্য মাইক্রোসফট এক্সেল এর ব্যবহার জনপ্রিয়তার শীর্ষে। আপনি যে পেশারই হোন না কেন, এই সফটওয়্যারটির উপর দক্ষতা আপনার প্রফেশনাল ক্যারিয়ারকে আরও সুদৃঢ় করে তুলবে। এক্সেলে এমন অসাধারণ সব টুল ও ফিচার রয়েছে যা দিয়ে অনেক সহজে ডেটা এনালাইসিস থেকে শুরু করে অনেক জটিল জটিল কাজও করে ফেলা যায়। আর তাই একাডেমিক থেকে কর্মক্ষেত্র, সব জায়গাতেই এম এস এক্সেল একটি গুরুত্বপূর্ণ স্কিল হিসেবে বিবেচিত হয়। আজকের এই আর্টিকেল Microsoft Excel কি? এর প্রয়োজনীয়তা? এবং কি ভাবে শিখবেন এই বিষয় নিয়েই জানব।

মাইক্রোসফট এক্সেল (MS Excel) কি?

এক্সেল হলো একটি উইন্ডোজ ভিত্তিক এ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রাম। এটি এক প্রকার স্প্রেডশীট এ্যানালাইসিস প্রোগ্রাম। মূলত এক্সেল এর সাহায্যে যাবতীয় হিসাব নিকাশ এবং ডাটা এন্ট্রি উভয় ধরনের কাজ করা যায়। স্প্রেডশীট শব্দের আভিধানিক বাংলা অর্থ হলো ছড়ানো পাতা। অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামটির সাহায্যে জটিল গাণিতিক গণনা, ডাটা এন্ট্রি ও তথ্যকে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপনায় নিখুঁতভাবে চার্ট বা গ্রাফ তৈরি করা ইত্যাদি আরও অনেক জটিল কাজকে অতি সহজে সমাপন করা যায়। মাইক্রোসফট এক্সেল এ লেখার জায়গাকে অর্থাৎ কাজ করার জায়গাকে ওয়ার্কশীট বলা হয়। মাইক্রোসফট এক্সেল এর প্রত্যেকটি ওয়ার্কশীটে ১৬৩৮৪ টি কলাম এবং ১০৪৮৫৭৬ টি রো থাকে। আর কলাম ও রো এর সমন্বয়ে সৃষ্ট প্রতিটি ছোট ছোট ঘরকে সেল বলে।

মাইক্রোসফট এক্সেল (MS Excel) এর কাজ কি কি?

Excel এর মাধ্যমে আপনি নানা রকমের কাজ করতে পারবেন। দৈনন্দিন হিসাব নিকাশ সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণ থেকে শুরু করে বেতনের হিসাব তৈরি করা, ডাটা সংরক্ষণ ও ব্যাবস্থাপনার যাবতীয় কাজ, বার্ষিক প্রতিবেদন প্রণয়ন, বাজেট প্রণয়ন, উৎপাদন ব্যবস্থাপনা, আর্থিক ব্যবস্থাপনা, আয়কর ও অন্যান্য হিসাব তৈরিকরণ, বৈজ্ঞানিক ক্যালকুলেশন, পরিসংখ্যান, তথ্যকে আকর্ষণীয় করে উপস্থাপনের জন্য বিভিন্ন ধরনের চার্ট বা গ্রাফ তৈরি করাসহ, এক্সেল এর কাজ এর অভাব নেই। অর্থাৎ হিসাব এবং যে কোন রিপোর্ট আপনি চাইলে এক্সেল এর মাধ্যমে করতে পারবেন। Excel এর মাধ্যমে সাধারনত যে কাজগুলো করা যায় তা হল –

  • ক্যালকুলেশন করা (যোগ, বিয়োগ, গুন, ভাগ)
  • ডাটা এন্ট্রি এবং স্টোরেজ
  • ডাটা অ্যানালাইসিস এবং ইন্টারপ্রেটেনশন
  • রিপোর্টিং এবং ভিজ্যুয়ালাইজেশন
  • অ্যাকাউন্টিং এবং বাজেটিং
  • ক্যালেন্ডার এবং শিডিউল

কেন শিখবেন মাইক্রোসফট এক্সেল?

জীবনের প্রতি মুহূর্তে আমাদের একটি কজের সম্মুখীন হতে হয়। সেটা হচ্ছে হিসাব-নিকাশ। সেটা হতে পারে ব্যক্তি জীবনে, সাংসারিক জীবনে অথবা কর্মজীবনে। যেটা করতে আগে আমার কয়েকটা খাতা লাগতো, সেটা করতে এখন মাত্র কয়েক কিলবাইটের একটি ফাইল লাগছে। যেটা করতে আগে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় লাগতো, সেটা করা যাচ্ছে এখন কয়েক সেকেন্ডে। এভাবে কাজটাকে সহজ করে দিচ্ছে Microsoft Excel। আমাদের ভার্সিটি লাইফে প্রচুর পরিমান এ্যাসাইনমেন্ট এবং ল্যাব রিপোর্ট করতে হয়। যাতে থাকে ক্যালকুলেসন অথবা গ্রাফ। আর এ সকল কাজ Excel এ খুব সহজে করা যায়।

আর যদি চাকরী জীবনের কথা বলেন তাহলে এর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। অফিসের সকল ধরনের কাজে প্রয়োজন হয় এক্সেল এর। Excel শুধুমাত্র কাজের ক্ষেত্রে সময়ই বাচায় তাই নয় বরং কাজকে করে নিভূর্ল, সহজ করে তুলে কাজকে। প্রফেশনাল লাইফে Excelযে কতটা গুরুত্বপূর্ণ যারা অফিসিয়াল ডেক্স জব করে আপনি যদি তাদের জিজ্ঞাস করেন তাহলে বুঝতে পারবেন। Excel জানা থাকলে আপনি বিশাল আকাশে মুক্ত ডানা মেলা পাখির মত স্বাধীন। যখন যেমন খুশি আপনি আপনার কাজকে আপনার মত করে সাজাতে পারেন। কারণ Excel জিনিসটি সাগরের মত বিশাল। এর কাজের কোন শেষ নাই। আপনি যদি Excel এর ফর্মুলা, ফাংশন সম্পর্কে ভাল ভাবে জানেন তাহলে অফিসে কাজের ক্ষেত্রে সবার থেকে এক ধাপ এগিয়ে থাকবেন সবসময়। এক্সেলে দক্ষ হলে যে সুবিধাগুলা পাবেন ~

কর্মক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা

আপনি যদি এক্সেলে এক্সপার্ট হতে পারেন তাহলে কর্মক্ষেত্রে অন্য সবার থেকে একটু বেশি সুবিধা পাবেন। কারন অফিসের প্রায় প্রতিটা কাজেই এর ব্যবহার করতেই হবে। অন্য সবার থেকে আপনার আয় অনেক বেড়ে যাবে। শুধু ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকার বা অ্যাকাউন্টেন্টসই না, বিজ্ঞানী, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, গ্রাফিক ডিজাইনার থেকে শুরু করে কমবেশি সবাই এক্সেলের দিকে ঝুঁকছেন। অফিসে আপনার কাজ যাই হোক না কেন, এই স্প্রেডশিট সফটওয়্যারটি আপনার ব্যবহার করতেই হবে। এক্সেল এর কাজ আপনাকে অন্যদের থেকে এগিয়ে রাখবে। এটা কিন্তু একটা প্লাস পয়েন্ট!

দ্রুত পদন্নোতি হওয়ার সম্ভাবনা

আপনি একটু লক্ষ্য করলে দেখবেন বর্তমানে সরকারি বা বেসরকারি যে কোন কাজের নিয়োগের ক্ষেত্রে যে অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়, তার মধ্যে অন্যতম হল এক্সেল। নিয়োগকর্তারা এমন কর্মীদের নিয়োগ দিতে চান যাদের এই স্প্রেডশিট/ এক্সেল সফটওয়্যারটি সম্পর্কে জ্ঞান আছে৷ কারণ এতে করে আপনার বিশ্লেষণী জ্ঞান সম্পর্কে একটা ধারণা নিয়োগকারী পেয়ে যান। এক্সেলের দক্ষতা আপনাকে কোম্পানির সম্পদে পরিণত করবে৷ এই কারণে নিয়োগকর্তারা চাকরির সার্কুলারে এক্সেল জ্ঞান থাকার ব্যাপারটা উল্লেখ করে দেন৷ তাছাড়া, আপনি কি জানেন এক্সেলের কাজ জানলে আপনার বেতন বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।

নির্ভুল ও দ্রুততার সাথে কাজের উপায়

দ্রুত সময়ে নির্ভুল ভাবে কাজ করতে এক্সেল এর বিকল্প কিছু নেই। অনেক কাজ রয়েছে যা আপনি ম্যানুয়াল ভাবে করতে গেলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা যেমন থাকে সেই সাথে অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়। ডাটা অর্গানাইজ ও ম্যানিপুলেট করা বেশ সময়সাপেক্ষ একটা কাজ। কিন্তু এক্সেল এর কাজ হলো, সে এই কাজের গতি কেবল বৃদ্ধিই করবে না, একইসাথে নম্বর গুণা ও ভুল করার হারও কমিয়ে দিবে। এটা আপনাকে বেশি সংখ্যক ডাটা বিশ্লেষণে সহায়তা করে৷ আর আপনি যদি একবার এর সমস্ত ব্যবহার শিখে নিতে পারেন, তাহলে যেকোনো জটিল স্ট্যাটিসটিক্যাল অ্যানালাইসিস ভালোমতো করতে পারবেন৷ এইজন্যই কোম্পানি গুলাতে নিয়োগকর্তারা নিয়োগ এর সময় কর্মীদের এই এক্সেল সফটওয়্যারটির স্কিলের উপর বেশি জোর দেন।

ডাটার সঠিক ব্যবহার

এক্সেল দিয়ে আপনি বিশাল পরিমাণ ডাটা সংরক্ষণ করতে পারবেন৷ শুধু তাই নয়, এক ডাটার সাথে আরেক ডাটার সম্পর্কও খুঁজে বের করা যাবে। এই ডাটাগুলো আপনি একা নয়, বিশ্বের যে কেউই ব্যবহার করতে পারবেন। তাও আবার বিনামূল্যে। এটা আপনার কর্মদক্ষতা ও ক্যারিয়ারের উন্নয়ন ঘটাতে পারে। এক্সেল হলো সহজে ব্যবহারযোগ্য সফটওয়্যার যা জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রে একটি মূল্যবান হাতিয়ার এবং ব্যক্তিগত উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়৷ আপনার অফিস ও ব্যাক্তিগত জীবনে সকল ডাটা সঠিক ভাবে সংরক্ষণ করে রাখতে পারবেন এই এক্সেল দিয়ে।

কিভাবে শিখবেন মাইক্রোসফট এক্সেল?

এক্সেল কি এবং কেন এক্সেল শেখা প্রয়োজন আশা করি এই বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। এখন প্রশ্ন জাগতে পারে কি ভাবে শিখবো এক্সেল? বর্তমান সময় প্রযুক্তির সময় আপনি এখন চাইলে ঘরে বসে ইউটিউব, গুগলে এর মাধ্যমে এক্সেল এর বেসিক কাজগুলা শিখতে পারবেন। বেসিক ব্যবহার শিখতে আপনাকে শুরুতে কোন প্রতিষ্ঠানে যেতে হবে না। তবে যদি প্রফেশনাল ভাবে শিখতে চান তাহলে অনলাইন থেকে ভাল মানের একটি কোর্স করে নিতে পারেন। তবে এক্সেলে যেহেতু বিভিন্ন ফর্মুলা এবং সূত্র ব্যবহার করে কাজগুলা করা যায় তাই প্র্যাকটিস করতে হবে। নিয়মিত প্র্যাকটিস করতে করতে একসময় এক্সপার্ট হয়ে যাবেন। সব কিছু তখন আপনার হাতের মুঠোয় চলে আসবে।

মাইক্রোসফট এক্সেল এর বেসিক কাজ গুলা শিখতে আপনি এই ভিডিওটি দেখতে পারেন। মাত্র ৩০ মিনিটে এর ভিডিওটি আপনি মনোযোগ সহকারে দেখলে এক্সেল এর বেসিক কাজগুলা সম্পর্কে আপনার কমপ্লিট ধারণা হয়ে যাবে।

এছাড়াও যদি আপনি অন্যান্য স্কিল অর্জন করে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে কাজ করে ক্যারিয়ার গড়তে চান তাহলে ফ্রিল্যান্সিং এবং প্যাসিভ ইনকামের উপর এমএসবি একাডেমীতে রয়েছে অনেক প্রফেশনাল মানের অনলাইন কোর্স। আপনি চাইলে এই সকল কোর্সে জয়েন হয়ে স্কিল অর্জন এর পাশাপাশি ইনকামও করতে পারবেন। যেকোনো কোর্সে জয়েন করলেই পাবেন আজীবনের জন্য কোর্স এক্সেস, ইন্সট্রাক্টর সাপোর্ট এবং ফ্রি কোর্স আপডেট।

Leave a Reply