Blog

ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে বায়ারকে ইমপ্রেস করবেন কিভাবে?

communication with client

ইংরেজীতে একটি প্রবাদ আছে “First impression is the last impression” অর্থাৎ আপনি যদি প্রথম সাক্ষাতে কারও মন জয় করতে পারেন তাহলে সেই সম্পর্ক অনেক দীর্ঘস্থায়ী হয়। আমরা কম বেশি সবাই ফ্রিল্যান্সিং শব্দটির সাথে বেশ পরিচিত। অন্য সব আট দশটি পেশার মত এটি একটি পেশা। বর্তমানে অনেক মানুষ ফ্রিল্যান্সিংকে পেশা হিসেবে নিয়ে কাজ করছে। দেশ বিদেশের বিভিন্ন মানুষ এখন মুক্তপেশাকে নিজেদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে রেখেছেন। তবে এক্ষেত্রে অনেকেই অনেক মার্কেটপ্লেস বা নিজেদের কিছু দীর্ঘস্থায়ী ক্লাইন্টের সাথে কাজ করে থাকেন, কিন্তু ক্লাইন্টকে ইমপ্রেস করতে না পারার বা সঠিক দক্ষতা না থাকার কারণে অনেক সময় ক্লাইন্টগুলোকে হারাতে হয়। এরপরে অনেকেই হতাশ হয়ে অন্য রাস্তা খোজার চেষ্টায় থাকেন।

আপনি অনেক ভালো কাজ পারেন, কিন্তু বায়ারের মনের চাওয়া যদি বুঝতে না পারেন বা বায়ারকে ইমপ্রেস করতে না পারেন তাহলে আপনার এই কাজ খুব বেশি ভাল ফলাফল নিয়ে আসবে না। এর ফলে আপনার ফ্রিলান্সিং ক্যারিয়ার দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে। এই জন্য ফ্রিলান্সিং মার্কেটপ্লেসে কাজ করতে হলে যার কাজ করবেন তার মনের চাওয়া বুঝতে হবে যাকে Mind Reading বলে। এর সাথে আপনার সুন্দর কথার মাধ্যমে বায়ারকে ইমপ্রেস করতে হবে আপনার প্রতি। যখন আপনি এই কাজটি ভাল ভাবে করতে পারবেন আপনার ফ্রিলান্সিং ক্যারিয়ার দীর্ঘস্থায়ী হবে।

ক্লায়েন্টকে কিভাবে ইমপ্রেস করবেন?

আপনার ক্লাইন্ট যখন আপনাকে প্রথম ম্যাসেজ করবে তখন প্রথমে সে কি চাচ্ছে সেটা বুঝতে হবে। আপনার ক্লায়েন্ট যখন আপনাকে প্রথম ম্যাসেজ দেবে তখন শুরুতেই সে কী চাচ্ছে তার ছোট একটি ব্রিফিং সে লিখে দেয়। সেই ব্রিফিং সুন্দর ভাবে পড়ার পর আপনাকে যেটি করতে হবে সেটি হল “প্রশ্ন”! আপনাকে প্রচুর প্রশ্ন করতে হবে এবং সেটি হতে হবে অবশ্যই কাজ সম্পর্কিত। এই প্রশ্ন উওর পর্বের মধ্যে দিয়ে আপনাকে বায়ারের মনের চাওয়া বুঝতে হবে এবং আপনি যে তার চাওয়াটা বুঝতে পেরেছেন সেটা তাকে বুঝাতে হবে। চলুন কি ধরনের প্রশ্ন হতে পারে, তা এক নজরে জেনে নেইঃ

১) কাজ সম্পর্কিত প্রশ্ন করুন

বায়ার আপনাকে দিয়ে যে কাজটি করাতে চাচ্ছেন সে কাজ সম্পর্কিত সকল ধরনের প্রশ্ন করুন। বায়ার যদি কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু না বলে তাহলে তাকে জিজ্ঞেস করতে হবে তার ঠিক কি প্রয়োজন বা তার সমস্যা কি? আপনি তাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারেন। তিনি যে কাজটি আপনাকে দিয়ে করাবেন তার উদ্দেশ্য কি? কাজটি তার বিজনেসের ঠিক কোন প্রয়োজনে তিনি ব্যবহার করবেন? তার বিজনেসের ক্যাটাগরি সম্পর্কে জানুন। আপনি যখন আন্তরিকতা নিয়ে বায়ারকে প্রশ্ন করবেন বায়ার আন্তরিকতা নিয়ে আপনার প্রশ্নের উওর দিবে। এই প্রশ্ন করার মধ্যে দিয়ে দুইটি দিক প্রকাশ পাবে। প্রথমত, বায়ারের সাথে আপনার সম্পর্ক বন্ধুর মত হবে এবং আপনি যে, এত প্রশ্ন করছেন এতে করে বায়ারও বুঝে নিবে আপনি তার কাজটির প্রতি খুবই আন্তরিক ও কাজটি সুন্দর ভাবে করার জন্য আপনার চেষ্টা রয়েছে।

২) বায়ারের বিজনেস বা সার্ভিস সম্পর্কে ভালো করে জানুন

ক্লায়েন্টের বিজনেস বা সার্ভিস সম্পর্কে ভালো করে জানুন। বায়ারের যদি কোন ওয়েবসাইট থাকে তাহলে সেটা একটু ঘুরে আসুন। অবশ্যই ওয়েবসাইটের প্রতিটি পেজ ভালো করে দেখবেন। এর ফলে বায়ারের বিজনেস সম্পর্কে ভালো পরিস্কার একটি ধারণা হবে। বায়ার বা ক্লাইন্ট আপনাকে দিয়ে যে কাজটি করাবেন তার উদ্যেশ্য আসলে কি? কাজটি তার বিজনেস কোন প্রয়োজনে ব্যাবহার করবে সেটি সম্পর্কে জানতে হবে। এই সম্পর্কে যখন জানতে চাইবেন তখন বায়ার আপনার প্রতি এমনেতে ইমপ্রেস হয়ে যাবে।

৩) আপনার আগে কাজটি কেউ করেছে কি না সে সম্পর্কে জানুন

আপনার বায়ার আগে কখনো ঐ কাজটি অন্য কাউকে দিয়ে করিয়েছেন কিনা? অথবা যদি একই কাজ আগেও করা থাকে তাহলে তিনি কেন নতুনভাবে আবার কাজটি করাতে চাচ্ছেন? আগের কাজের সমস্যাই বা কি ছিল এ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন। এতে করে আপনার কাজ করতে আরও সহজ হবে। যদি কাজটি আগে করিয়ে থাকে তাহলে কেন তার সেটা পছন্দ হল না বা সমস্যা কি ছিল সে সম্পর্কে আইডিয়া পাবেন। এত করে কাজ করতে অনেক সুবিধা হবে।

৪) নতুনভাবে কেন সে কাজটি করাতে চাচ্ছে?

তিনি যে নতুনভাবে কাজটি করাবেন সে সম্পর্কে তার ভাল লাগে বা অপছন্দের কিছু আছে কিনা? বা তিনি ঠিক কি রকমের কাজ চাচ্ছেন তা জানার চেষ্টা করুন। নতুন করে সে কোন কিছু যুক্ত করতে চাচ্ছে কিনা বা কি কি পরিবর্তন চাচ্ছেন সেটি প্রশ্ন করে জেনে নিতে হবে। কারন নতুন ভাবে কাজটি করাচ্ছে মানে আপনাকে বুঝতে হবে আগের কাজ থেকে সে বেটার কিছু চায়। আপনি যত বেশি প্রশ্ন করে ওনার চাওয়া বুঝতে পারবেন কাজটি তত বেশি সুন্দর হবে ও বয়ারের সাথে আপনার সম্পর্ক গভীর হবে।

৫) কম্পিটিটর সম্পর্কে জিজ্ঞাস করুন

বর্তমান সময় প্রতিযোগিতার সময়। বিজনেস মানে কম্পিটিটর থাকবে এইটা স্বাভাবিক। আপনার বায়ারের বিজনেস কম্পিটিটর কারা সে সম্পর্কে প্রশ্ন করতে পারেন। তার বিজনেসের যদি কোন কম্পিটিটর বা প্রতিযোগি থাকে, তাহলে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করুন। প্রয়োজনবোধে তাদের ওয়েবসাইটের লিঙ্ক চাইতে পারেন। আসল কথা হল আপনি নিজে থেকে যত বেশি প্রশ্ন করবেন আপনাদের Conversation স্কিল ততই বাড়বে। আর এইভাবে যখন আপনি কাজের ব্যাপারে সব কিছু জানতে পারবেন তখন সে আপনাকে বিশ্বস্ত মনে করবে এবং আপনার কথায় সহজে ইমপ্রেস হবে।

এত প্রশ্ন করে লাভ কি? বা এর ফলাফল কি?

একটি কথা মনে রাখুন, যত প্রশ্ন তত বেশি ধারণা। আপনি যত বেশি প্রশ্ন করবেন, ক্লায়েন্টের কাজ সম্পর্কে আপনি তত বেশি অবগত হবেন। আপনি যখন ক্লায়েন্টকে তার কাজ সম্পর্কে একের পর এক প্রশ্ন করবেন এবং তিনি উত্তর দেবেন, তখন তার সেই উত্তরগুলো দিয়েই কিন্তু আপনি আপনার ক্লায়েন্টের মাইন্ড রিড করতে পারবেন। তার উত্তরগুলো থেকেই আপনি বোাঝার চেষ্টা করবেন তার ভাল লাগা বা মন্দ লাগাগুলো কি কি। তিনি কেন তার আগের করানো কাজটি বাদ দিয়ে নতুনভাবে করাতে চাচ্ছেন। আগের কাজের সমস্যাগুলো জেনে গেলে আপনি একই ভুলগুলো নিজের কাজের ক্ষেত্রে এড়িয়ে যেতে পারবেন। তার বিজনেস সম্পর্কে জানার পরে তার ওয়েবসাইট দেখে আপনি আইডিয়া পাবেন তার বিজনেস কি ধরনের এবং সেটা আপনাকে আপনার কাজ করার সময় রিসার্চ করতে সাহায্য করবে। আপনি বুঝতে পারবেন তার বিজনেস ক্যাটাগরি অনুযায়ী এখন কোন ট্রেন্ড চলছে বা কোন টাইপ কাজ আপনার করতে হবে।

আপনি যখন ক্লায়েন্টের সাথে এত সময় নিয়ে Conversations করবেন, তখন ক্লায়েন্টর মধ্যেও আপনার সম্পর্কে একটা পজিটিভ ধারণা তৈরি হবে। তিনি বুঝতে পারবেন আপনি যেই কাজই করেন না কেন সেটায় আপনি অনেক পারদর্শী। আপনি আপনার কাজের প্রতি অনেক আন্তরিক এবং ক্লায়েন্টের প্রতিও আপনার আন্তরিকতা রয়েছে। আপনি তাকে হয়ত এমন প্রশ্ন করেছেন যার সম্পর্কে তিনি আগে ভাবেননি। আপনার জিজ্ঞাসার ফলে তার সেই বিষয়টা নিয়ে ভাবতে হতে পারে। আর এটি তার বিজনেসের জন্য ভালও হতে পারে। পরবর্তীতে তিনি নিজে থেকেই আপনাকে অন্যান্য খুঁটিনাটি বিষয়ে জিজ্ঞেস করে হেল্প নিতে পারেন। আর আপনি যখন এত কথা বলে ক্লায়েন্টের সাথে আপনার রসায়ন তৈরি করে ফেলবেন তখন সে আর অন্য কাউকে নক দিবে না। ক্লায়েন্ট তখন আপনার উপর এমনিতেই ইমপ্রেস হয়ে যাবে। ভবিষ্যতে আপনাকে দিয়েই হয়ত রেগুলার কাজ করাবে। কার করানোর আগে আপনার সাথে পরামর্শ করবে।

ক্লায়েন্টের সাথে আপনার সম্পর্ক কেমন হবে?

ক্লায়েন্টকে বন্ধুর মত মনে করুন। স্যার স্যার কিংবা ম্যাডাম ম্যাডাম বলে মুখে ফেনা বের করার দরকার নেই। শুরুতেই তার নাম জিজ্ঞেস করে নিন এবং অবশ্যই আগে নিজের নাম বলে নিবেন। আর সব কথা যেহেতু ইংরেজীতেই হবে, সুতরাং ইংরেজীতে তো আপনাকে একটু ভালো হতেই হবে। ফ্রিল্যান্সারদের ইংলিশ স্কিল বাড়ানোর উপায় জানতে ফ্রিল্যান্সারদের ইংলিশ স্কিল বাড়ানোর জন্য ৮টি গুরুত্বপূর্ণ টিপস এই  ব্লগটি পড়ে ফেলুন। ইংলিশ স্কিল অর্জনের সম্পূর্ণ গাইডলাইন পেয়ে যাবেন।

শুরু বায়ারকে ইমপ্রেস করলে কিন্তু হবে না সেই সাথে স্কিল অর্জন করতে হবে। আর আমরা জানি ফাইবার হল বর্তমানে সবচেয়ে বড় ফ্রিলান্সিং মার্কেটপ্লেস। ফাইবার নিয়ে আমাদের একটি কোর্স রয়েছে ফাইবার সাকসেস। এই কোর্সে বর্তমানে প্রচুর চাহিদা আছে, এমন ১৮টি ভিন্ন ভিন্ন কাজ হাতে-কলমে শিখানো হয়েছে + Fiverr-এ অ্যাকাউন্ট খোলা থেকে শুরু করে, কিভাবে সফলতার সাথে ফ্রীলেন্সিং করবেন তার A to Z গাইডলাইন পাবেন এই কোর্সে। বায়ারের সাথে কি ভাবে সুন্দর করে ডিল করবেন সেই বিষয়ে এই কোর্সের মধ্যে শিখতে পারবেন। রয়েছে লাইফ টাইম কোর্স এক্সেস + লাইফ টাইম সাপোর্ট এবং ফ্রি কোর্স আপডেট।

পরিশেষে একটি কথা, উপরের কাজগুলো করলে বায়ারকে খুব সহজে ইমপ্রেস করতে পারবেন ও খুব দ্রুত কিছু গিগ বিক্রির অর্ডার পেয়ে যাবেন। গিগ অনুযায়ী কাজ করে এবং সময়মত কাজ ডেলিভারি দিয়ে বায়ারের কাছ থেকে ভালো ফিডব্যাক সংগ্রহ করার চেষ্টা করবেন। মনে রাখবেন যত বেশি ভালো ফিডব্যাক পাবেন, আপনার গিগ তত বেশি সার্চের উপরে উঠতে থাকবে।

Leave a Reply